আমি মরি তো মরব, তুলে নিয়ে যান ওঁদের

মোবাইলের নেটওয়ার্ক কাজ করছে না বেশির ভাগ জায়গায়। টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের ফোন পেয়েই তাই কাতর আর্জি জানিয়েছিলাম, চপার পাঠাতে বলুন। আর দেরি হলে এই চেঙ্গান্নুর থেকে শুধু শব উদ্ধার করতে হবে!

Advertisement

সাজি চেরিয়ান (বিধায়ক, চেঙ্গান্নুর)

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৬
Share:

ত্রাণ: বন্যাবিপর্যস্ত চেঙ্গান্নুরে বাড়ি বাড়ি খাবার-জল পৌঁছে দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী দল। রবিবার। ছবি: এপি।

জীবন বিমা নিগমের (এলআইসি) লোগাটা হয়তো অনেকের পরিচিত। দু’টো হাতের মাঝখানে একটা প্রদীপ। কেরলের চেঙ্গান্নুর অনেকটা ওই রকম। এক দিকে পাম্বা, আর এক দিকে আচানকোভিল নদীর মাঝখানে অবস্থান। দুই নদীর চাপেই চেঙ্গান্নুরের জীবন-প্রদীপ নিভে যাওয়ার জোগাড়!

Advertisement

বৃষ্টি হয়েছে অবিরাম। নদীর জল বেড়েই চলেছে কয়েক দিনে। জেলার আর এক দিকে মানিমালায়ার নদীও ছাপিয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে বাড়ি, রাস্তা, মাঠ— সব জলের তলায়। জল মানে দো’তলা সমান। এই চেঙ্গান্নুর থেকে উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হয়েছি, তিন মাসও হয়নি। সিপিএমের আলপ্পুঝা জেলার সম্পাদকও আমি। হাতের তালুর মতো চেনা অলি-গলিতে ঘুরেই তিন মাস আগে ভোটের প্রচার করেছি। আর এখন সেই সব এলাকাই একেবারে জলের তলায় উধাও! মোবাইলের নেটওয়ার্ক কাজ করছে না বেশির ভাগ জায়গায়। টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের ফোন পেয়েই তাই কাতর আর্জি জানিয়েছিলাম, চপার পাঠাতে বলুন। আর দেরি হলে এই চেঙ্গান্নুর থেকে শুধু শব উদ্ধার করতে হবে!

সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ! তারা এই অখ্যাত এলাকার মানুষের আর্জি দ্রুত সম্প্রচার করেছে। তার পরে উদ্ধার অভিযানের গতি বেড়েছে। তিনটে মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল বৃহস্পতিবার। পান্ডানাড় থেকে শুক্রবার আরও পাঁচটা। মান্নার, এডাতুয়া থেকে বিপন্ন মানুষের খবর পেয়েছি। যে যেখানে উঁচু বাড়ি পেয়েছেন, উঠে গিয়েছেন উপরে। সেখান থেকে দেখতে হচ্ছে, কী ভাবে গিলতে আসছে জল! শুধু মাথা গুঁজলেই বা কী হবে? পানীয় জল নেই, খাবার নেই কারও কাছে। ওষুধ নেই, স্যানিটারি প্যা়ড নেই। মহিলা, শিশুদের অবস্থা ভাবলে শিউরে উঠতে হচ্ছে। কোথাও ফোন করতে বাদ রাখিনি। কিন্তু ওই জলে কপ্টার ছাড়া উদ্ধার তো দুরূহ। জেলা প্রশাসনকে বলেছিলাম, আমার কথা ছাড়ুন। মরতে হলে এখানেই মরব! কিন্তু চার দিন ধরে অভুক্ত মানুষগুলোকে বাঁচান।

Advertisement

আরও পড়ুন: ত্রাণের জন্য হাহাকার, এরই মধ্যে আশার কথা, কেরলে কমছে বৃষ্টি

বৃষ্টি ধরে এসেছে শনিবার রাত থেকেই। জল নামছে একটু করে। হেলিকপ্টারও এসেছে। আকাশপথে উদ্ধার পেয়েছেন বহু মানুষ। খাবারের প্যাকেটও পৌঁছেছে। কাছেই একটা হস্টেল থেকে জনাপনেরোটা বাচ্চাকে বার করে নিয়ে গিয়েছে উপকূলরক্ষা বাহিনীর কপ্টার। একটু হাঁফ ছেড়েছি আমরা। আলপ্পুঝা শহর থেকে চেঙ্গান্নুর আসার দেড় ঘণ্টার রাস্তা জল থইথই। স্থানীয় মানুষ আর মৎস্যজীবীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন মানুষকে বাঁচানোর। কিন্তু শুধু ওঁদের উদ্যোগে এই বিপর্যয়ে কাজ হওয়ার ছিল না। তাই কপ্টার চাইছিলাম পাগলের মতো।

আঙ্গামালির রোজি জন, পারাভুরের ভি ডি সতীশন, আলুভার আনোয়ার সাদাত— এই রকম অনেক বিধায়কই যেখানে পেরেছে, মরিয়া হয়ে সাহায্যের আবেদন করেছেন। আমরা কেউই এখনও জানি না, কোন প্রান্তে ঠিক কত মানুষ আটকে আছেন। আলপ্পুঝার ‘ব্যাক ওয়াটার্স’ রাজ্যের পর্যটনের লক্ষ্মী। সেই লক্ষ্মীই এমন ভয়াল চেহারা নেবে, কে জানত!

(অনুলিখিত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন