শবরীমালা মন্দির চত্বর। ছবি- পিটিআই।
মন্দির এবং অস্পৃশ্যতার যোগ টেনে তৈরি হয়েছিল ‘থিম’। আসন্ন প্রজাতন্ত্র দিবসের জন্য ওই ‘থিমে’র উপরে তৈরি কেরলের ট্যাবলো বাদ পড়ল কেন্দ্রীয় সরকারের তালিকা থেকে। শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশধাধিকার নিয়ে বিতর্কের জেরে কেন্দ্রের বিজেপি ও রাজ্যের বাম সরকারের মধ্যে সংঘাতের আবহে নতুন মাত্রা যোগ হল এই ঘটনায়।
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের জন্য কেরল এ বার যে ট্যাবলোর প্রস্তাব দিল্লিতে পাঠিয়েছিল, তার পোশাকি নাম ‘ভাইকম সত্যাগ্রহ’। স্বাধীনতার আগে রাজন্য প্রথা থাকাকালীন ত্রিবাঙ্কুর প্রদেশে অস্পৃশ্যতা-বিরোধী একটি আন্দোলনের উপরে ট্যাবলো তৈরি করছিল কেরল সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন গত ডিসেম্বরে দিল্লিতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েই দলীয় মহলে জানিয়েছিলেন, ওই ট্যাবলোর প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতি মিলবে না। তবু রাজ্য সরকার তাদের ‘থিম’ বদলাতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চূড়ান্ত তালিকায় যে ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নাম দেওয়া হয়েছে প্রজাতন্ত্র দিবসে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করার জন্য, তার মধ্যে কেরল নেই।
কেরলে এখন যে কোট্টায়ম জেলা, আগে সেখানেই ছিল ভাইকম। ত্রিবাঙ্কুরের অধীনে ভাইকমে ১৯২৪-২৫ সালে হয়েছিল অস্পৃশ্যতা-বিরোধী আন্দোলন। ভাইকমের একটি শিব মন্দিরে প্রার্থনা করতে যাওয়ার জন্য সকলের অধিকারের দাবিতে হয়েছিল ওই আন্দোলন। সেই ‘ভাইকম সত্যাগ্রহে’র ইতিহাসই এ বার দিল্লির দরবারে তুলে ধরতে চেয়েছিল কেরল।
শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকারের বিরোধিতা করে বিক্ষোভের সূত্রে ‘অস্পৃশ্যতা’র বিতর্ক এখন আবার মাথাচাড়া দিয়েছে কেরলে। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে আয়াপ্পা দর্শনে প্রথম দুই পূজারিনি বিন্দু ও কনকদুর্গা পা রাখার পরে ‘শুদ্ধিক্রিয়া’র জন্য মন্দিরের দরজা বন্ধ রেখেছিলেন প্রধান পুরোহিত। ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে শাসক সিপিএম বলেছে, ‘অস্পৃশ্যতা’ সংবিধান-বিরোধী। পুরোহিতকে শো-কজ়ও করেছে ত্রিবাঙ্কুর দেবস্বম বোর্ড (টিডিবি)। রাজ্য সরকারি এবং রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, কেরল এবং অস্পৃশ্যতার যোগ এখন টেনে আনা বাঞ্ছনীয় নয় মনে করেই কেন্দ্র খারিজ করে দিয়েছে রাজ্যের প্রস্তাব।
কেরলের দেবস্বম বিষয়ক মন্ত্রী কে সুরেন্দ্রনের বক্তব্য, ‘‘গোটা দক্ষিণ ভারতেই মন্দির অজস্র এবং তাদের ঘিরে ইতিহাসও দীর্ঘ। ‘ভাইকম সত্যাগ্রহ’ও ইতিহাসের অঙ্গ। এর মধ্যে আপত্তির কী পাওয়া গেল, জানি না!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি পি এস শ্রীধরন পিল্লাইয়ের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো নির্বাচনের কিছু মাপকাঠি আছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক টেনে আনার কোনও কারণ নেই।’’