Kannan Gopinathan

ইস্তফা আরও এক আইএএসের, কেন্দ্রের কাশ্মীর সিদ্ধান্তই কি নেপথ্যে? উঠছে প্রশ্ন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলীও যে তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে, আকারে-ইঙ্গিতে তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ২০:১১
Share:

কান্নান গোপীনাথন। ছবি: সংগৃহীত।

কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করেছিলেন আইএএস পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধিকারী শাহ ফয়জল। ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রতিবাদে সরব হওয়ায় এই মুহূর্তে উপত্যকায় গৃহবন্দি তিনি। এ বার তাঁর দেখানো পথেই হাঁটলেন কেরলের আইএএস অফিসার কান্নান গোপীনাথন। ২০১ ৮-র সেপ্টেম্বরে বানভাসি কেরলে পরিচয় লুকিয়ে মুটেগিরি করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন তিনি।

Advertisement

মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকাতেই চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন গোপীনাথন। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলীও যে তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে, আকারে-ইঙ্গিতে তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। যদিও সরাসরি উপত্যকার কথা উল্লেখ করেননি তিনি। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গোপীনাথন বলেন, ‘‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পেতে চাই আমি। নিজের মতো করে বাঁচতে তাই, তা মাত্র এক দিনের জন্য হলেও।হতেই পারে ভবিষ্যতে কেউ আমাকে প্রশ্ন করে বসল, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র যখন একটা গোটা রাজ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাল, সেখানকার মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিল, সেইসময় আপনি কী করছিলেন? এমন পরিস্থিতি এলে কমপক্ষে এটা তো বলতে পারব যে, প্রতিবাদে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম।’’

গোপীনাথের কথায়: ‘‘জোর করে যাঁদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশা নিয়ে সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এখন আমার নিজেরই কথা বলার শক্তি নেই। তাই কেন ইস্তফা দিলাম সেটা বড় প্রশ্ন নয়, বরং কেন মনের কথা বলতে পারছি না, সেটা অনেক বড় প্রশ্ন। আমার পদত্যাগ কোথাও কোনও প্রভাব ফেলবে না জানি। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশে যে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আমি কী করেছি, তা কেউ জানতে চাইলে জবাব দিতে পারব না আমি। কিন্তু উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ পাড়ি দেওয়ার চেয়ে, চাকরি ছেড়ে দিয়েছি বলা অনেক ভাল মনে হয়েছে আমার। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’

Advertisement

কান্নান গোপীনাথনের পদত্যাগপত্র। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

আরও পড়ুন: উপত্যকায় পা রাখতে পারলেন না রাহুলরা, শ্রীনগর থেকেই ফিরতে হল দিল্লিতে​

সিস্টেমে থেকেই সিস্টেম বদলে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গোপীনাথন। তাঁর কথায়, ‘‘বদল চাইলে সিস্টেমে ঢুকে নিজেকেই তা ঘটাতে হবে বলে একসময় মনে করতাম। চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। শেষমেশ আশা ছেড়ে দিয়েছি। মানুষ জানেন তাঁদের জন্য কী কী করেছি আমি। কিন্তু লাভ হয়নি। ব্যাঙ্কে মোটা টাকা গচ্ছিত নেই আমার। এই মুহূর্তে সরকারি রেস্ট হাউসেই থাকি। বেরিয়ে যেতে বললে এখান থেকে কোথায় যাব, তা-ও জানি না। স্ত্রী একটা চাকরি করে। ও আমার পাশে রয়েছে। তাতেই এতটা মনোবল জোগাড় করতে পেরেছি।’’

বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন কান্নান গোপীনাথন। ২০১২-র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ৫৯তম স্থান দখল করেন তিনি। তার পর কেরল সরকারের বিদ্যুৎ ও নগরোন্নয়ন বিভাগের সচিব নিযুক্ত হন। কেন্দ্রশাসিত দাদরা ও নগর হাভেলির কৃষি দফতরেরও সচিব ছিলেন তিনি। বুধবার দাদরা ও নগর হাভেলি প্রশাসনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছেও। তবে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর হাতেই সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে।

এ ভাবেই কেরেল বন্যার সময় মুটেগিরি করেছিলেন গোপীনাথন।—ফাইল চিত্র।

আরও পড়ুন: দৃপ্ত আইনজীবী থেকে দূরদর্শী নেতা, রাজনৈতিক সহবতের উজ্জ্বল মাইলফলক​

গত বছরের সেপ্টেম্বরেই প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে আসেন গোপীনাথন। বানভাসি কেরলে মু্খ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১ কোটি টাকা দিতে গিয়েছিলেন।কিন্তু ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি। চেক জমা দিয়ে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে তিরুঅনন্তপুরম থেকে বাস ধরে সোজা চেঙ্গান্নু চলে যান। লাগাতার বৃষ্টিতে কেরলের যে জায়গাগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল চেঙ্গান্নুর। টানা আটদিন সেখানে বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে যান তিনি। কোচি বন্দর থেকে ত্রাণসামগ্রী নামিয়ে মাথায় করে তা বয়ে নিয়ে যান ত্রাণ শিবিরে। আর এই সবটাই করেছিলেন পরিচয় লুকিয়ে। আশপাশের কাউকে ঘুণাক্ষরেও নিজের পরিচয় জানতে দেননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন