তাইলিন লিংডো।নিজস্ব চিত্র।
বিশেষ আমন্ত্রণ পেয়ে দিল্লি গল্ফ ক্লাবে সপরিবারের নিমন্ত্রণরক্ষা করতে গিয়েছিলেন অসমের আমলা নিবেদিতা বরঠাকুর। কিন্তু বিদেশে কখনও তাঁকে যে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা হল খোদ স্বদেশের রাজধানীতে। খাসিদের দেশীয় পোশাক জেনসেম পরে থাকায় তাঁদের পরিবারের দীর্ঘদিনের সদস্য তাইলিন লিংডোকে ভিতরে ঢুকতে দিল না গল্ফ ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
কলকাতার রেস্তোঁরায় গাড়ি চালককে নিয়ে খেতে ঢুকেছিল এক পর্যটক মহিলা। কিন্তু মলিন পোশাকের জন্য গাড়ি চালককে নিয়ে আপত্তি করেছিল রেস্তোঁরা কর্তৃপক্ষ। না খেয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ওই মহিলা। তা নিয়ে চলেছিল প্রতিবাদ। সম্প্রতি সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়কে লুঙ্গি-সদৃশ পোশাক পরায় পার্ক স্ট্রিটের একটি নামজাদা রেস্তোঁরায় ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। প্রায় একই ঘটনা ঘটল দিল্লি গল্ফ ক্লাবে।
প্রায় বিশ বছর ধরে লন্ডনে থাকা চিকিৎসক ও ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট নিবেদিতা বরঠাকুর বর্তমানে অসম সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। তিনি জানান, তাঁদের পরিবারের গভর্নেস তাইলিন লিংডো গত দুই দশক ধরে তাঁদের পরিবারের সদস্য। তাঁদের সঙ্গেই লন্ডথ, আরব থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন তিনি। সর্বদাই তিনি খাসি পোশাক জেনসেম পরেন। কোথাও কেউ পোশাক দেখে তাঁকে বাধা দেননি। কিন্তু গত কাল দিল্লি গল্ফ ক্লাবে তাইলিনকে খাওয়ার টেবিল থেকে তুলে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ইদের দিনেও অশান্ত কাশ্মীর, পাথরের পাল্টা কাঁদানে গ্যাস!
গল্ফ ক্লাবের পুরনো সদস্য পি থিম্মাইয়া গোয়েল রবিবার মধ্যাহ্নভোজে কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করেন। আমন্ত্রিতের তালিকায় ছিল আমলা, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, লেখকরা। আমন্ত্রিতের তালিকাতে নিবেদিতাদেবীর সঙ্গেই পরিবারের সদস্য হিসেবে তাইলিনের নামও ছিল। কিন্তু খেতে বসা তাইলিনকে বলা হয়, পরিচারিকারদের অধিকার নেই খাবার টেবিলে বসার। তাঁকে 'অদ্ভুত পোশার পরা নেপালি' বলেও সম্বোধন করা হয়। গল্ফ ক্লাবের দুই আধিকারিক স্পষ্ট জানান, তাইলিনের পোশাক চাকর-বাকরদের মতো। এমন অদ্ভুত পোশার পরে ভদ্রসমাজে আসা চলে না। নিবেদিতাদেবী জানান, তাইলিন তাঁর আত্মীয় ও পরিবারের সদস্য। তিনি নেপালিও নন। কিন্তু লাভ হয়নি। প্রতিবাদে বেরিয়ে আসেন নিবেদিতাদেবীরা।
নিবেদিতাদেবী বলেন, "এখনও আমাদের সমাজে কতটা সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব রয়েছে তা গতকালর ঘটনায় বোঝা গেল। এই ঘটনার প্রতিবাদ কারা করবেন? কারণ, ওই দিনের অনুষ্ঠানে হাজির থাকা বড় আমলা ও সংবিধানের রক্ষকরা নিতান্ত অবহেলায় পরিবারের সেবক বা ন্যানিদের কড়া গরমে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে ভিতরে স্ফুর্তি করছিলেন। তাঁদের কাছে মানবিকতা আশা করা যায় না। ওঁদের সামনে গোটা ঘটনাটি ঘটে। কেউ প্রতিবাদ করেননি।" তাঁর মতে, উত্তর-পূর্বের পোশাক ও উত্তর-পূর্বের মানুষদের দিল্লির লোক কী চোখে দেখেন- তা আগেও বহু বার সামনে এসেছে। প্রতিবাদ হয়েছে। আইন হয়েছে। কিন্তু মনোভাব বদলায়নি। স্বাধীনতার এত বছর পরেও, শিক্ষিত রাজধানীর 'এলিট' মানুষজন এখনও পরিচারকদের মানুষ বলে গণ্য করেন না। তাইলিন নিজে বলেন, "আমি নগ্ন হয়ে বসিনি। রীতিমতো আমাদের সমাজের দেশীয় পোশাক পরে গিয়েছিলাম। যে লোকজন মানুষকে পোশাক দিয়ে বিচার করে, অশিক্ষিতের মতো ব্যবহার করে, তাদের সঙ্গে বসে খাওয়া অর্থহীন। আমি আমার পোশাকের জন্য গর্বিত।"
ঘটনাটি নিয়ে তিনি ফেসবুকে লেখার পরে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। দিল্লি গল্ফ ক্লাবের সচিব রাজীব হোরা সোমবার বলেন, "গত কাল ও আজ ছুটি থাকায় বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করা যায়নি। বিশদ জানার পরেই মন্তব্য করা যাবে।"