Kisan Mukti March

‘হোক না মন্দির! কিন্তু মন্দিরে পুজো করতে যাওয়ার জন্য তো পেটে রুটি চাই, সেটা কোথায়?’

শ্রীরামের পাশে তাঁরই গাঁয়ের মনমোহন কুশওয়াহা বললেন, ‘‘প্রতি বছর চাষ হয় নাকি? যে বছর জল মেলে, সে বছর হয়। না হলে অন্যের জমিতে খাটতে হয়, নারেগা-য় গতর খাটাতে হয়। তবে ডাল-রুটি জোটে।’’ 

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩২
Share:

প্রতিবাদ: ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি ও ঋণ মকুবের দাবিতে কৃষকেরা। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে সংসদ মার্গের বিক্ষোভ সভায়। এপি, পিটিআই

তিনিও শ্রীরাম। তবে অযোধ্যার নন। যে রাজ্যে রামমন্দির বানাতে মরিয়া বিজেপি, সেই উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডের চাষি, শ্রীরাম পাঞ্চাল। দেখা মিলল দিল্লির সংসদ মার্গে।

Advertisement

অযোধ্যায় রামমন্দির কি এ বার হবে? হলে খুশি হবেন তো? বিরক্ত মুখে শ্রীরাম বললেন, ‘‘হোক না মন্দির। কিন্তু মন্দিরে পুজো করতে যাওয়ার জন্য তো পেটে রুটি চাই, পকেটে পয়সা চাই! সেটা কোথায়? গমের খেতে তো জলই নেই!’’

শ্রীরামের পাশে তাঁরই গাঁয়ের মনমোহন কুশওয়াহা বললেন, ‘‘প্রতি বছর চাষ হয় নাকি? যে বছর জল মেলে, সে বছর হয়। না হলে অন্যের জমিতে খাটতে হয়, নারেগা-য় গতর খাটাতে হয়। তবে ডাল-রুটি জোটে।’’

Advertisement

আর রামমন্দির? মাথায় হাত ঠেকিয়ে কুশওয়াহা বললেন, ‘‘টাকা থাকলে আমার ঘরে মন্দির বানাতাম!’’

আরও পড়ুন: মোদীর আমলে কিছুই হয়নি, দায়িত্ব নিয়েই একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন আজহার

অযোধ্যা নয়, দিল্লি চলো— এই ডাক দিয়ে আজ দিল্লির সংসদ মার্গ চত্বর ভাসিয়ে দিলেন শ্রীরাম-মনমোহনরা। রামলীলা থেকে মিছিল করে আসা যাবে না— বৃহস্পতিবার রাতে এই সিদ্ধান্ত বদলে ‘সর্বভারতীয় কিসান সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি’র নেতাদের ছাড়পত্র দেয় দিল্লি পুলিশ। রামলীলা ময়দান-আনন্দ বিহার-নিজামুদ্দিন-সহ কয়েক জায়গায় রাত কাটিয়ে সকাল ১০টায় শুরু হয় ‘কিসান মুক্তি মার্চ’।

কনট প্লেসের কাছে গাড়িতে আটকে পড়েছিলেন সরকারি চাকুরে প্রীতীশ শাহ। মিছিলের এক জন তাঁর হাতে হলদে রঙের কাগজ ধরিয়ে দিলেন। বড় হরফে লেখা ‘মাফ কিজিয়ে গা’। ‘আমাদের মার্চের জন্য আপনার অসুবিধা হল। আপনাকে বিরক্ত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা নিজেরাই সমস্যায় জর্জরিত।’

আরও পড়ুন: দাপটের ইতিহাসটুকুই সম্বল, পিঙ্ক সিটির কয়েক লাখ বাঙালির প্রায় ভূমিকাই নেই ভোটে

কী সমস্যা? চাষিদের বক্তব্য, ‘মুগ ডালে আমরা প্রতি কিলোতে ৪৬ টাকা পাই, আপনি ১২০ টাকা দেন! টোম্যাটো আমরা ৫ টাকা পাই, আপনি ৩০ টাকা দেন! দুধ আমরা লিটারে ২০ টাকা পাই, আপনারা দেন ৪২ টাকা!’

দিল্লির মানুষ সমস্যায় পড়লেও ক্ষুব্ধ হননি। এ বছর মার্চে কৃষক সভার মিছিল ঘিরে গোটা মুম্বই যেমন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল, তারই খণ্ডচিত্র উঠে এল রাজধানীতে। গোটা দেশ থেকে রাজধানীতে আসা হাজার পঁয়ত্রিশ চাষির জন্য বাঙ্গলা সাহিব, রকাবগঞ্জ, সিসগঞ্জ-সহ একাধিক গুরুদ্বার খুলেছিল লঙ্গর। আলিগড়ের ডাক্তাররা চিকিৎসা করেছেন। কোথাও আইনজীবীরা ব্যবস্থা করেছেন খাবার ও জলের। বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রগতি ময়দানে কাজ করতে আসা শ্রমিকরাও সাধ্যমতো সাহায্য করেছেন। সেন্ট মেরি’জ় স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা গলায় পোস্টার ঝুলিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে চাষিদের জন্য।

মিছিলের প্রধান দাবি ছিল, চাষের খরচের দেড় গুণ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) আর ঋণ মুক্তি। সংসদ মার্গের সমাবেশের ফাঁকে জলের খোঁজ করছিলেন উত্তরপ্রদেশের পিলভিটের আখচাষি বিক্কর সিংহ। মাথায় ৭ লক্ষ টাকার দেনা। এত ঋণ হল কী করে? ‘‘চিনিকলগুলি এ বছর আখ কিনে, তিন বছর পরে দাম দেয়। ওই জন্যই তো ধার করতে হয়। ধান চাষ করি। ১৭৫০ টাকা এমএসপি। চালকলগুলি দেয় ১২০০ টাকা।’’

তাঁর সঙ্গী গুরদীপ সিংহেরও মাথায় বিপুল ঋণ। যোগীজি যে ঋণ মকুব করেছেন? গুরদীপ বলেন, ‘‘আমার নাম উঠেছিল তালিকায়। তবে এক টাকাও পাইনি!’’ রামমন্দিরের দাবিতে কাল থেকে দিল্লিতে রথযাত্রা আরএসএসের। বিক্কর-গুরদীপ বলছেন, ‘‘মন্দির হলে হোক। কিন্তু তা দেখিয়ে আর বোকা বানানো যাবে না।’’

দীর্ঘ পথ হেঁটে রামলীলায় বসে নেতাদের কথা শুনছিলেন তেলঙ্গানার কবিতা। স্বামী কাসাইয়া তিন বছর আগে দেনায় ডুবে আত্মহত্যা করেছেন। রামমন্দির না, পেটে ভাতটাই এখন একমাত্র চিন্তা কবিতার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন