নিল না কলকাতা, শিলচরে দুই অধ্যাপকের গ্রন্থসংগ্রহ

এই দুই গবেষক-অধ্যাপক হলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রয়াত দেবীপদ ভট্টাচার্য ও রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ জগদীশ ভট্টাচার্য। দু’জনেরই ইচ্ছা ছিল, তাঁদের সারাজীবনের সংগ্রহ কলকাতার কোনও সংস্থাকে দিয়ে যাবেন।

Advertisement

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৬
Share:

নির্মাণ: শিলচর বঙ্গভবনের নির্মীয়মাণ গ্রন্থাগার। —নিজস্ব চিত্র।

দুই গবেষক-অধ্যাপকের সারা জীবনের সংগ্রহ কলকাতার কোনও সংস্থা বা গ্রন্থাগার নিতে চায়নি। তাই তাঁদের পরিবার সেগুলি বরাকের শিলচর বঙ্গভবনকে দান করলেন।

Advertisement

এই দুই গবেষক-অধ্যাপক হলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রয়াত দেবীপদ ভট্টাচার্য ও রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ জগদীশ ভট্টাচার্য। দু’জনেরই ইচ্ছা ছিল, তাঁদের সারাজীবনের সংগ্রহ কলকাতার কোনও সংস্থাকে দিয়ে যাবেন। তাঁদের ইচ্ছে ছিল, ভবিষ্যতের গবেষকরা যাতে এই সব দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সদ্ব্যবহার করতে পারেন। দেবীপদবাবুর পুত্র শুভায়ু ভট্টাচার্য খানিকটা অভিমান ভরেই বলেন, ‘‘একটি সংস্থা বাবার গ্রন্থরাজি রাখতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি পৌঁছনোর দায়িত্ব আমাদের নিতে বলা হয়েছিল।’’ এত ‘অবহেলা’ তাঁর ভাল লাগেনি।

একই বক্তব্য রবীন্দ্র গবেষক জগদীশ ভট্টাচার্যের পরিবারের। তাঁর ছেলে রঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘বই যিনি দান করেন, বই পৌঁছনোর দায়ও তাঁর! এর পরেও যত্নে রাখা হয় না।’’ তাঁর অভিযোগ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে প্রচুর বই অত্যন্ত অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে নতুন বই-ই স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে। পুরনো বই আর তারা রাখবে কোথায়!

Advertisement

এই গ্রন্থ-ভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েই অবশ্য ঝাঁপিয়ে পড়েন শিলচরের বঙ্গভবন কর্তৃপক্ষ। লোকগবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্যকে কলকাতায় পাঠান তাঁরা। তিনি উপস্থিত থেকে দান করা গ্রন্থরাজি গাড়ি বোঝাই করে শিলচর রওনা করান। এই সংগ্রহে রবীন্দ্র সাহিত্য বিষয়ক বই-ই বেশি। রবীন্দ্রোত্তর সাহিত্য, প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির উপরেও বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ রয়েছে।

শিলচরের বঙ্গভবন কর্তৃপক্ষ খ্যাতনামা দুই বাঙালি অধ্যাপকের কয়েক হাজার বই পেয়ে খুশি। অমলেন্দুবাবু বলেন, ‘‘বরাক
উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের পক্ষ থেকে বঙ্গভবনে গ্রন্থাগার স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জগদীশ ভট্টাচার্য মেমোরিয়াল ট্রাস্টকে জানানো হয়েছিল। তারা সংগৃহীত বইপত্র বঙ্গভবনে দানের সিদ্ধান্ত নেয়। সে কথা জেনে দেবীপদ ভট্টাচার্যের পরিবারও বইদানের আগ্রহ প্রকাশ করে।

ইতিমধ্যেই এই গ্রন্থসম্ভার কলকাতা থেকে শিলচরের বঙ্গভবনে পৌঁছে গিয়েছে। সঙ্গে দুই পরিবারের দু’টি চিঠি। রঞ্জনবাবু লিখেছেন, ‘‘আপনাদের ভাবনা এবং কর্মপদ্ধতির সঙ্গে জগদীশ ভট্টাচার্যের জীবনচর্যার আদর্শের মিলের পরিপ্রেক্ষিতেই ট্রাস্টের তরফে দান করার
সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’’ শুভায়ুবাবু লিখেছেন, ‘‘আমরা মনে করি, প্রান্তীয় অঞ্চলের বিদ্যার্থীদের সাহায্য করলে আমাদের পিতার ইচ্ছাকে মর্যাদা দেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement