রাষ্ট্রপতি পদে রামনাথ কোবিন্দের জয় এক রকম নিশ্চিত ছিলই। সাত লক্ষের বেশি ভোট পেয়ে তিনিই হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। কিন্তু এই নির্বাচনকে ঘিরে সংখ্যার দম্ভ ধরে রাখতে পারল না নরেন্দ্র মোদীর দল।
ভোটের আগেই বিজেপি দাবি করছিল, শরিক ও সমর্থক দল নিয়ে তাদের ঝুলিতে ৬৩ শতাংশ বাঁধা ভোট থাকলেও এই সংখ্যাটিকে তারা হেলায় ৭০ শতাংশে নিয়ে যাবে। বিরোধী দলগুলি যতই একজোট হোক, তাদের শিবির থেকেও ভোট কেটে দেখিয়ে দেওয়া হবে। আজ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, অন্য দল থেকে ৩০ সাংসদ ও ৮৬ বিধায়কের ‘বিবেক ভোট’ ভাঙিয়ে এনেও ৬৫.৬৫ শতাংশ ভোটই জোগাড় করতে পেরেছে তারা। উল্টে রাজস্থান, হিমাচল, সিকিম, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যে শাসক গোষ্ঠীর শিবির থেকে ভোট গিয়েছে বিরোধী জোটের প্রার্থী মীরা কুমারের ঝুলিতে। তিনি পেয়েছেন ৩,৬৭,৩১৪ ভোট, যা মোট ভোটের ৩৪.৩৫ শতাংশ।
ফলে এই প্রথম বিরোধী দলের প্রার্থী হিসাবে সব থেকে বেশি ভোট পেলেন মীরা কুমার। আর যে বিজেপি প্রার্থী কোবিন্দ অতীতের ছ’জনের পাওয়া ভোটের পিছনে। কোবিন্দ ৭,০২,০৪৪ ভোট পেলেও অতীতে তাঁর থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন ফাকরুদ্দিন আলি অহমেদ, জৈল সিংহ, আর বেঙ্কটরামন, কে আর নারায়ণন, আব্দুল কালাম, এমনকী বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘বিজেপির ৭০ শতাংশের দম্ভ চুরমার হয়ে গেল। বিরোধী জোট ভাঙার চেষ্টাও ব্যর্থ হল। নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়করাও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটে সামিল হলেন।’’
ফল প্রকাশের পর মীরা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা ও শোষিত সমাজের জন্য কাজ করার লড়াই জারি থাকবে। জয়ের পর কোবিন্দকে শুভেচ্ছা জানান তিনি। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, রাহুল ও সনিয়া গাঁধীও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ কোবিন্দের বাড়ি গিয়ে অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই জয়ের পরেই দলিত মহল্লাগুলিতে উৎসবের তোড়জোড় শুরু করেছে বিজেপি।
কিন্তু ঘরোয়া মহলে বিজেপির নেতারা বলছেন, বিরোধী শিবিরে সিঁধ কাটতে সফল তাঁরা। ভোটমুখী গুজরাতে ১১ জন, দিল্লিতে ২, পশ্চিমবঙ্গে ৫, উত্তরপ্রদেশে ১০, মহারাষ্ট্রে ২০, গোয়া ২, কর্নাটকে ১১, ত্রিপুরায় ৭, মধ্যপ্রদেশে ৬, হরিয়ানায় ৫— এমন করে অনেক রাজ্যে বিরোধী জনপ্রতিনিধিরা কোবিন্দকে ভোট দিয়েছেন। যে ৭৭টি ভোট বাতিল হয়েছে, সেগুলিও আসলে কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট না-দিতে চাওয়ারই ছবি।