‘নিউজমণি’র পরে ‘সাংবাদিক’, এ বার প্রসব রাস্তাতেই 

শেষ পর্যন্ত রাস্তায় প্রসব ও সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে হাসপাতালে গমন। 

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:১৯
Share:

রাস্তাতেই প্রসব। জন্ম নিল ‘সাংবাদিক’। নিজস্ব চিত্র

ঠিক এক মাসের ব্যবধান। একই ভাবে লখিমপুর-মাজুলি সংলগ্ন এলাকায় সড়কের অভাবে সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছতে নাজেহাল হলেন প্রসূতি। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় প্রসব ও সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে হাসপাতালে গমন।

Advertisement

গত মাসে ঠিক এই রকম ঘটনায় সংবাদমাধ্যমকে কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে জুগিবাড়ি গ্রামের দীপালি দোলে সদ্যোজাত শিশুকন্যার নাম রেখেছিলেন নিউজমণি। গত কাল রাস্তায় প্রসব করা লুইত খাবলুর বাসিন্দা অয়মণি পায়েং নবজাতকের নাম রাখলেন ‘সাংবাদিক’!

লখিমপুর-মাজুলি লাগোয়া অঞ্চলে যাতায়াতের পাকা সড়ক নেই। ভরসা ডিঙি, সাইকেল, ঠেলা। গত কাল মাজুলির পাথারি সুকর গ্রামের অয়মণিদেবীর প্রসববেদনা শুরু হয়। বিস্তর কষ্ট করে পরিবারের লোক তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যান। কিন্তু অয়মণির মামা মুখেশ্ব চিরাং ফোনে দাবি করেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক তাঁদের বলেন, ‘‘অয়মণির প্রসবের তারিখ পরের সপ্তাহে। এখন প্রসব হবে না। ব্যথাকে পাত্তা না দিলেও হবে।’’ সুতরাং ফের ভাঙাচোরা পথে অয়মণিকে নিয়ে ফিরতে থাকেন পরিবারের লোকজন। ঘাটে পৌঁছনোর আগেই উঁচুনিচু বেহাল রাস্তার ধকল সহ্য করতে না পেরে চূড়ান্ত যন্ত্রণা শুরু হয় প্রসূতির। তত ক্ষণে বৃষ্টিও শুরু হয়ে গিয়েছে। আশপাশের কয়েক জন গ্রামবাসী টিনের পাত ও ছাতা জোগাড় করে আনেন। গ্রামের মহিলাদের সাহায্যে রাস্তাতেই প্রসব হয়। বাচ্চা বেরিয়ে এলেও নাড়ি কাটা যায়নি। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা চলে আসেন। তাঁদের সাহায্যে গ্রামবাসীরা বাঁশ ও কাপড়ের স্ট্রেচার বানিয়ে মা ও সদ্যোজাতকে নৌকায় তুলে তাদের মাজুলির পীতাম্বর দেবগোস্বামী হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রসবে সংবাদমাধ্যমের সাহায্য পেয়ে অভিভূত অয়মণি ও তাঁর স্বামী ছেলের নাম রেখেছেন ‘সাংবাদিক’।

Advertisement

গত মাসের ১৩ তারিখ লখিমপুর-মাজুলির সীমানায় থাকা জুগিবাড়ি গ্রামের দীপালি দোলেকেও মাজুলি হাসপাতালে আনতে প্রাণান্তকর অবস্থা হয়েছিল। প্রথমে একটি বেঞ্চ উল্টে তাঁকে কষে বাঁধা হয়। তারপর কখনও ডিঙি, কখনও ডুলি, কখনও এবড়ো-খেবড়ো রাস্তায় ঠেলা গাড়িতে বেঁধে তাঁকে আনা হয় হাসপাতালে। পাঁচ ঘণ্টা ধরে ওই ভাবেই গড়মূড়ের পীতাম্বর দেবগোস্বামী হাসপাতালে এসে পৌঁছন হবু মা। ১৪ অগস্ট তাঁর কন্যাসন্তান জন্মায়। সাংবাদিকদের সাহায্য পাওয়ায় মেয়ের নাম ‘নিউজমণি’ রাখেন দোলে দম্পতি।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকেনি, নেই স্বাস্থ্য পরিষেবাও। প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দা সড়কের অভাবে নাজেহাল। স্থানীয় বিধায়ক উৎপল দত্তর মতে, সেতু তৈরি না হলে অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। আরও ১০-১২ বছর গ্রামবাসীদের অপেক্ষা করতে হবে। বাসিন্দাদের দাবি, সড়ক দিতে না পারলে বিধায়ক অসুস্থ গ্রামবাসীদের জন্য অন্তত পর্যাপ্ত ডুলি ও ঠেলার ব্যবস্থা করে দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন