জোটে রাজি লালু, মানবেন কি নীতীশকে

পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাওয়ার কথা বলেও দূরে দূরে থাকছিলেন। বিহার ভোটের আগে আজ ফের কাছাকাছি এলেন নীতীশ কুমার ও লালুপ্রসাদ! তা হলে কি চাপের কৌশলই কাজে দিল? সে কথা পরে। টাটকা বিষয় হল, সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের বাড়িতে ম্যারাথন বৈঠকের পর আজ বিকেলে নীতীশ ও লালু ঘোষণা করে দিলেন, বিহার বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা জোট বেঁধেই লড়বেন। জোটের খুঁটিনাটি শর্ত কী হবে, কে নেতৃত্ব দেবেন, আসন বণ্টনের রফাসূত্রই বা কী হবে, তা নিয়ে জটিলতা অবশ্য এখনও কাটেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০৪:১৯
Share:

বিহার জোট নিয়ে বৈঠক সেরে সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদবের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছেন আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ এবং জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদব। নয়াদিল্লিতে পিটিআইয়ের ছবি।

পরস্পরের সঙ্গে মিশে যাওয়ার কথা বলেও দূরে দূরে থাকছিলেন। বিহার ভোটের আগে আজ ফের কাছাকাছি এলেন নীতীশ কুমার ও লালুপ্রসাদ! তা হলে কি চাপের কৌশলই কাজে দিল?

Advertisement

সে কথা পরে। টাটকা বিষয় হল, সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের বাড়িতে ম্যারাথন বৈঠকের পর আজ বিকেলে নীতীশ ও লালু ঘোষণা করে দিলেন, বিহার বিধানসভা নির্বাচনে তাঁরা জোট বেঁধেই লড়বেন। জোটের খুঁটিনাটি শর্ত কী হবে, কে নেতৃত্ব দেবেন, আসন বণ্টনের রফাসূত্রই বা কী হবে, তা নিয়ে জটিলতা অবশ্য এখনও কাটেনি। নীতিগত ভাব জোটে রাজি হওয়ার পর সংযুক্ত জনতা দল ও আরজেডি থেকে তিন জন করে সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই কমিটিই গ্রহণযোগ্য রফাসূত্র খুঁজে বের করবে।

যদিও এই ঘোষণার পরেও জোটের ব্যাপারে এখনও ষোলো আনা নিশ্চিত হতে পারছেন না অনেকেই। মূলত তিনটি কারণে।

Advertisement

এক, শেষ মুহূর্তে এমন সমঝোতা অনেক সময়েই ভেঙে যায়। এক বার বিজেপি নেতৃত্বকে চমকে দিয়ে এ ভাবেই অন্তিম প্রহরে জোট ভেঙে দিয়েছিলেন বিজু জনতা দলের নেতা নবীন পট্টনায়ক। লালু-নীতীশ দু’জনেই ধুরন্ধর রাজনীতিক শুধু নন, আসন্ন লড়াই উভয়ের কাছেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ। যে কোনও এক জনের শেষ মুহূর্তের চালে ভেস্তে যেতে পারে জোট।

দুই, এখন জোটের ঘোষণা হলেও যাদব-নেতা লালু আদৌ কুর্মিদের নেতা নীতীশকে জোটের নেতা মানবেন কি না, সেটাও প্রশ্ন।

তিন, জোট হলেও আপাতত নিজ-নিজ নির্বাচনী প্রতীকে লড়বেন লালু-নীতীশ। সেই মহাজোটে সামিল হবে কংগ্রেস, সিপিআই এবং এনসিপি। জোটের মাঠে এতগুলি চরিত্র কী ভাবে আসন ভাগাভাগি করেন, সেটাও দেখার! কারণ, আরজেডি আগেই বলে রেখেছে, জোট হলে বিধানসভার ২৪৩টি আসনের মধ্যে ১১৮টি আসনই তাদের চাই।

তবে আপাতত জোটের ঘোষণা যে হল, তাকে জাতীয় রাজনীতির বিরোধী দলগুলি ইতিবাচক বলেই মনে করছে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এ ক্ষেত্রে হয় তো লালুপ্রসাদের উপরে দশ নম্বর জনপথের চাপ ও কংগ্রেস-নীতীশ তলে তলে সমঝোতা অনুঘটকের কাজ করেছে। জনতা দলগুলি মিশে যাওয়ার ব্যাপারে দু’মাস আগেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছিলেন মুলায়ম-লালু-নীতীশরা। কিন্তু তার পরেও বিহারে নির্বাচনী জোটের প্রশ্নে ধোঁয়াশা জিইয়ে রাখছিলেন লালু। তিনি নিজে প্রকাশ্যে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য না করলেও, রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ-সহ আরজেডি-র অনেক নেতাই ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ভোটে যাওয়া সম্ভব নয়। ঘরোয়া আলোচনায় লালুপ্রসাদের ‘ইগো’র দোহাই যেমন দেওয়া হচ্ছিল, তেমনই রঘুবংশপ্রসাদদের যুক্তি, নীতীশ কুর্মি সম্প্রদায়ের নেতা। লালু যাদব কুলের সেনাপতি। যাদবরা সামাজিক মননের দিক থেকে কখনওই কুর্মিদের কাছে বশ্যতা মেনে নেয়নি। তাই নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করলে জোট হবে নামেই। জমিতে তেলে-জলে মিশ খাবে না।

ঠিক এই পরিস্থিতিতেই নীতীশের আর্জি শুনে হাল ধরতে নামেন সনিয়া গাঁধী। রাজনৈতিক সূত্রে খবর পেয়ে তিনি আঁচ করছেন, লালু হয়তো বিজেপির সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখছেন। তাই হয়তো মহাজোটের সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে চাইছেন। এ দিকে সময়ও বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সনিয়া দূত মারফত লালুকে জানিয়ে দেন, তিনি জোটে সামিল হলে ভাল, নইলে তাঁকে বাদ দিয়ে নীতীশের নেতৃত্বে জোট গড়বে কংগ্রেস, এনসিপি এবং সিপিআই। এবং লালুর উপরে সেই চাপ বাড়াতেই আজ মুলায়মের বাড়িতে বৈঠকের আগে রাহুলের সঙ্গে দেখা করেন নীতীশ। এক ঘণ্টা কথা হয় দু’জনের।

কংগ্রেস-নীতীশ বন্ধুত্বের আবহ রচনার পরেই নয়াদিল্লির ২১ নম্বর অশোকা রোডে মুলায়মের বাসভবনে বৈঠকে বসেন ‘তিন মূর্তি’। জেডিইউ সূত্রের খবর, আসলে লালুকে
নরম করার জন্যই মুলায়মকে এই বৈঠক ডাকতে বলেছিলেন নীতীশ। তবে মুলায়ম বৈঠকে জানিয়ে দেন, তিনটি জনতা দল মিশে যাওয়ার ঘোষণা হলেও বাস্তবে যে-হেতু প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়ন হয়নি, তাই কাউকে নির্দেশ দেওয়ার জায়গায় তিনি নেই। ভাল হবে যদি লালু-নীতীশ তিন জন করে তাঁদের প্রতিনিধি বাছেন। এই প্রতিনিধিরাই জোটের শর্ত ও সূত্র খুঁজবেন। শেষ পর্যন্ত সেটাই সিদ্ধান্ত হয়। তবে সেই ঘোষণাও লালু বা নীতীশ করেননি। জনতা পরিবারের তরফে সেই ঘোষণা করেন মুলায়মের ভাই রামগোপাল যাদব।

জোট নিয়ে কথা বলতে এ বার সনিয়ার কাছে যাচ্ছেন লালু। আরজেডি-র একটি সূত্রের কথায়, কাল সকালের দিকেই বৈঠক হওয়ার কথা দু’জনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন