(উপরে বাঁ দিকে) ঐশ্বর্যা রায় এবং তেজপ্রতাপ যাদব। (উপরে ডান দিকে) অনুষ্কা যাদব এবং তেজপ্রতাপ। (নীচে মাঝে) লালুপ্রসাদ যাদব। ছবি: সংগৃহীত।
বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নাতনির সঙ্গে ধুমধাম করে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পরেও সম্পর্ক ছিল পুরনো প্রেমিকার সঙ্গে! নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের একটি পোস্টেই বলা হয়েছে সে কথা। তা নিয়ে বিতর্কের জেরেই কি বড় ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে ‘ঘাড়ধাক্কা’ দিলেন পিতা লালুপ্রসাদ যাদব? এই প্রশ্ন ঘিরে তুঙ্গে জল্পনা।
তেজ যদিও দাবি করেছেন, তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ‘হ্যাক’ করা হয়েছিল। ওই পোস্টটি তিনি লেখেননি। সরিয়েও দিয়েছেন পোস্টটি। দাবি, তাঁর ও পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং তাঁদের হেনস্থা করতেই এ কাজ করেছেন কেউ। যদিও এ ব্যাপারে তিনি পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
রবিবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু জানান, বড় ছেলে তেজকে আরজেডি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু দল নয়, পরিবার থেকেই তাঁকে বিতাড়িত করা হয়েছে। লালু জানিয়েছেন, আগামী ছ’বছর তেজের সঙ্গে আরজেডির কোনও সম্পর্ক থাকবে না। আরজেডি প্রধান জানিয়েছেন, তেজপ্রতাপের আচরণ পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ঘটনাচক্রে, লালুর এই সিদ্ধান্তের আগে শনিবার তেজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এক মহিলার ছবি পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টের বিবরণীতে লেখা হয়, ‘‘আমি তেজপ্রতাপ যাদব। ছবিতে আমার সঙ্গে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম অনুষ্কা যাদব। আমরা দু’জন দু’জনকে ১২ বছর ধরে চিনি এবং একে অপরকে ভীষণ ভালবাসি। এই গোটা সময় ধরে আমরা সম্পর্কে রয়েছি। আমি এই কথাগুলো আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইছিলাম। কিন্তু কী ভাবে বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আজ আমি আপনাদের কাছে এই কথাগুলো বললাম। আশা করি আপনারা আমাকে বুঝবেন।’’
মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তেজের ওই ফেসবুক পোস্টটি। বিতর্কও শুরু হয়। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, তা হলে কি বিয়ের পরেও পুরনো সম্পর্ক ভাঙেননি তেজ?
২০১৮ সালে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দারোগা রাইয়ের নাতনি ঐশ্বর্য রায়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তেজের। যদিও তা বেশি দিন টেকেনি। বিয়ের কয়েক মাস পরেই বাপের বাড়ি ফিরে যান ঐশ্বর্য। লালুর পরিবারের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। যা নিয়ে বিবাদে জড়ায় দুই পরিবার। লালুর দল আরজেডি ছেড়ে দেন ঐশ্বর্যের পিতা চন্দ্রিকা রায়।
তেজ এবং ঐশ্বর্যের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা আদালতে এখনও বিচারাধীন। তা নিয়ে দু’পক্ষের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে প্রায়ই তেতে ওঠে বিহারের রাজনীতি। তেজের দাবি, ঐশ্বর্য বিশাল অঙ্কের খোরপোশ দাবি করে বসেছেন। পাল্টা ঐশ্বর্যের দাবি, তেজ মাদকাসক্ত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নীতীশ কুমারের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন তেজ। তাঁর হাতে পরিবেশ, বন এবং আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ের দফতর ছিল।
বিহারের রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, চলতি বছরের শেষে রাজ্যে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে তেজকে নিয়ে বিতর্কে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে প়ড়েছে যাদব পরিবার। সেই কারণেই তড়িঘড়ি তাঁকে দল এবং পরিবারকে থেকে বিতাড়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
দাদা তেজ প্রসঙ্গে ভাই তেজস্বী যাদব বলেন, ‘‘আমরা এ ধরনের কোনও কাজ সহ্য করব না। আমরা বিহারের মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করছি। রাজনৈতিক জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন আলাদা। ওঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবন বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। যা বলার আমাদের দলের প্রধান বলে দিয়েছেন।’’