বিপাকে পড়লেন বাচ্চাবাবু। পরীক্ষা কেলেঙ্কারিতে পুলিশ এফআইআর করতেই বৈশালীর বিষুণ রায় কলেজের অধ্যক্ষ ও আরজেডি নেতা বাচ্চাপ্রসাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছেন লালুপ্রসাদ। পরীক্ষা দুর্নীতিতে বিহারের ‘ছবি’ খারাপ হয়েছে বলেও মেনে নিয়েছেন আরজেডি প্রধান। আজ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। রাজ্যকে বদনাম করার চেষ্টা যাঁরা করেছেন তাঁদের কাউকে ছাড়া উচিত নয়। আমার বা দলের সঙ্গে অভিযুক্তদের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
লালুপ্রসাদের মন্তব্য শোনার পরে বাচ্চাবাবু বলেন, ‘‘মহুয়া বিধানসভা কেন্দ্রে তেজপ্রতাপ যাদবের জন্য আমি যতগুলি সভা করেছি লালুপ্রসাদও তা করেননি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফল ঠিক করে বিদ্যালয় পরীক্ষা সমিতি। ভুল করলে তারাই করেছে।’’
রাজনীতিকদের মতে, পরীক্ষা দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাওয়ায় বাচ্চাবাবুকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন লালু। কারণ, গোটা ঘটনায় বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র পেয়ে গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই বাচ্চাকে দূরে সরিয়েছেন আরজেডি প্রধান। কোনও রকমের সাহায্য করতে অস্বীকারও করেছেন তিনি। এর ফলেই বিপদে পড়েছেন বাচ্চাপ্রসাদ। বাচ্চাবাবুর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, শীঘ্রই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিষুণ কলেজের অধ্যক্ষ।
পরীক্ষা দুর্নীতি কাণ্ডে গত কাল গভীর রাতে পটনার কোতোয়ালি থানায় মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা রাজীব রঞ্জন এফআইআর করেন। অভিযোগে কোনও ব্যক্তির নাম না থাকলেও বিষুণ রায় কলেজের উল্লেখ করা হয়। এর পরেই রাজ্য পুলিশের এক ডিএসপির নেতৃত্বে চারটি আলাদা দল তৈরি হয়েছে।
তদন্তকারীদের একটি দল পটনার ফ্রেজার রোড এলাকায় বিহার বিদ্যালয় পরীক্ষা সমিতির দফতরে অভিযান চালায়। প্রথমে সমিতির চেয়ারম্যান লালকেশ্বর প্রসাদ সিংহকে বেশ কিছু ক্ষণ জেরা করে। কয়েকটি কম্পিউটার ও হার্ডডিস্কও আটক করেছেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারী দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, ওই কম্পিউটার ও হার্ডডিস্ক থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া তদন্তে সাহায্য করবে সিআইডি। উত্তরপত্র পরীক্ষার জন্য হস্তলিপি বিশেষজ্ঞদেরও ডাকা হবে। এ দিন পটনার রাজেন্দ্রনগর এলাকার একটি স্কুলেও তদন্তকারীরা হানা দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, বৈশালী জেলার সব উত্তরপত্র পরীক্ষার কাজ আরা ও ভাগুয়া জেলায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেবল বিষুণ রায় কলেজের উত্তরপত্র রাজেন্দ্রনগরে পাঠানো হয়েছিল। তাই ওই স্কুল থেকেও বেশ কিছু ফাইল আটক করেছে পুলিশ।
তদন্তকারীদের অন্য একটি দল বৈশালী গিয়েছে। ওই দলের সদস্যরা বিষুণ রায় কলেজে যাবেন। কলেজের অধ্যক্ষ বাচ্চাপ্রসাদ ওরফে অমিত কুমারকে জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এ ছাড়াও মেধা তালিকার শীর্ষে থাকা ছাত্রী রুবি রায়, ছাত্র সৌরভ শ্রেষ্ঠ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জেরা করা হবে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। পটনা পুলিশের এসএসপি মনু মহারাজ বলেন, ‘‘বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি আটক হয়েছে। তা পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, শিক্ষা সমিতির চেয়ারম্যান লালকেশ্বর প্রসাদ সিংহের ভূমিকাও বেশ সন্দেহজনক।