রাস্তা খুলবে কখন? ভূস্বর্গ যেন বিভীষিকা

বেড়ানো আমার নেশা। লাদাখ দেখব বলে গত ২২ মে বেরিয়েছি। সঙ্গে ছেলে শ্রীকুমার, ভাইপো সৌম্য, মামাতো ভাই অরুণ ভট্টাচার্য, ওঁর স্ত্রী লিসা এবং ওঁদের সাত বছরের মেয়ে মেঘনা।

Advertisement

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

(লেখক: কাশ্মীরে ধসে আটকে পড়া কোন্নগরের পর্যটক) শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০৩:০৩
Share:

হোটেলের সামনে গাড়ির সারি। দ্রাসে। নিজস্ব চিত্র

ভয় আর দুশ্চিন্তায় আনন্দটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে!

Advertisement

চারদিকে মন ভাল করা প্রকৃতি। রোজ তুষারপাত হচ্ছে। তাপমাত্রা প্রায় শূন্য। কিন্তু রাস্তায় চোখ পড়লেই আর প্রকৃতির কথা মনে থাকছে না। শ’য়ে শ’য়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে। কখন যে চাকা গড়াবে কে জানে! বরাতজোরে একটা হোটেলে জায়গা পেয়েছি। ৩০০ টাকার ঘরের দাম ২০০০ টাকা! খাবারের দাম দ্বিগুণ। এক লিটার জল কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। একটা রুটি ২০ টাকা! কখন যে মুক্তি পাব!

বেড়ানো আমার নেশা। লাদাখ দেখব বলে গত ২২ মে বেরিয়েছি। সঙ্গে ছেলে শ্রীকুমার, ভাইপো সৌম্য, মামাতো ভাই অরুণ ভট্টাচার্য, ওঁর স্ত্রী লিসা এবং ওঁদের সাত বছরের মেয়ে মেঘনা। ২৩ তারিখে লেহ্‌তে পৌঁছই। তারপরে লাদাখ। সত্যিই ভূস্বর্গ। কিন্তু ফেরার সময়ে যে বিপদ ওৎ পেতে আছে, কে জানত!

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল ৬টায় লেহ্‌ থেকে গাড়ি ভাড়া করে শ্রীনগর রওনা দিই ১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে। বেলা আড়াইটে নাগাদ সোনমার্গের কিছুটা আগে গাড়ি থমকে গেল। জায়গাটা দ্রাস সেক্টর। শুনলাম, তুষারধস নেমেছে। গাড়ির লাইন বাড়তে থাকে। বুঝলাম, হোটেল না-খুঁজলে রাস্তায় রাত কাটাতে হবে। স্থানীয় একটা হোটেলে ঘর পেলাম। কিন্তু সব কিছুর দাম আগুন। বুধবার সকালে বেরিয়ে শুনল‌াম, ৪০ কিলোমিটার জুড়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে। আমার ধারণা, অন্তত তিন-চার হাজার বাঙালির দশা আমার মতো। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা কত হবে কে জানে! ঠায় রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম। সব পর্যটকই ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতেও পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে মেলেনি। পুলিশের মুখে এমনও শুনেছি, বেড়াতে এসে হ্যাপা পোহাতে
হতেই পারে।

বাচ্চারা হাঁফিয়ে উঠেছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ব্যাঙ্ক ধর্মঘট। গ্যাঁটের কড়ি প্রায় শেষ। এটিএম থেকে তোলার জো নেই। সব সময় ইন্টারনেট পরিষেবা মিলছে না। মোবাইল ফোনের ব্যাটারিও কমে আসছে। সবারই এক অবস্থা। বেলঘরিয়ার প্রবাল সাহার সঙ্গে দেখা হল। ভদ্রলোক স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। সঙ্গে আরও চারটি পরিবারের ১৪ জন। কয়েকটি বাচ্চাও আছে। ওঁদের ২ জুন ফেরার কথা। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে দু’দিনের মধ্যেও কি রাস্তা পরিষ্কার হবে? ভূস্বর্গ এখন আমাদের কাছে বিভীষিকা। কখন যে শ্রীনগর পৌছব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন