ধসে বিধ্বস্ত তাওয়াঙে চলছে উদ্ধারকাজ। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে গত কয়েকদিন ধরেই তাওয়াং ও তার আশপাশের এলাকায় ছোটোখাটো ধস নামছিল। চাপা পড়েছিল স্কুল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সরকারি দফতর। বিচ্ছিন্ন হয়েছিল পানীয় জলের লাইন এবং বিদ্যুৎ সংযোগ। সতর্ক ছিল প্রশাসনও। কিন্তু তাতেও ঠেকানো গেল না বড় বিপর্যয়। গত কাল গভীর রাতে ধসে গেল তাওয়াংয়ের নির্মীয়মাণ পাঁচ তারা হোটেল চত্বরের পাশের জমি। ঘুমের মধ্যেই মারা গেলেন সেখানকার অস্থায়ী শিবিরে থাকা ১৫ জন শ্রমিক ও এক তত্ত্বাবধায়ক। তাওয়াং থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ফামলা এলাকার ঘটনা।
ফামলায় অরুণাচলপ্রদেশের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দোর্জি খান্ডুর পরিবারের মালিকানাধীন জমিতে হোটেলটি তৈরি করছিলেন তাঁরই ছেলে তথা রাজ্যের প্রাক্তন পর্যটনমন্ত্রী পেমা খান্ডু। তিনি তাওয়াংয়ের পার্শ্ববর্তী মুক্তোর বিধায়ক। তাওয়াংয়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক লড গাম্বো ও এসপি আন্তো আলফানসো জানান, গত কাল রাত তিনটে নাগাদ হোটেলের পাশে থাকা শ্রমিক শিবির-সহ পাহাড়ের একটি বড় অংশ ধসে পড়ে। মন্দ আবহাওয়া ও অন্ধকারের জন্য ব্যাহত হয় উদ্ধারকাজ। তার মধ্যেই সেনাবাহিনীর সাহায্যে পাথর ও মাটি সরানোর কাজ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ধসের তলা থেকে ১৫ জন শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। আরও তিনজনকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অবশ্য তেজপুরে হাসপাতালে আনার পথেই আরও একজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে দুজন তাওয়াং, আটজন শোণিতপুর, একজন বরপেটা, একজন পশ্চিম কামেং ও তিনজন ধেমাজির বাসিন্দা।
মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুল ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জানান, গত কয়েকদিনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাজ্য নাস্তানাবুদ। তাওয়াং এলাকায় একাধিক ধস, নামসাইতে ধস ও বন্যা, চাংলাংয়ে হড়পা বান, ইটানগর-নাহারলাগানেও বন্যা। ফলে প্রশাসনের নাজেহাল অবস্থা। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ, টেলিফোন, পানীয় জলের সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। ধস নেমে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রের সাহায্য চেয়েছে রাজ্য। সরকার নিহতদের পরিবার পিছু চার লক্ষ টাকা এবং জখমদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে।
সেনা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সম্বিত ঘোষ জানান, রাস্তার পাশেই শ্রমিকদের শিবিরটি ছিল। উপর থেকে ধস এসে সব কিছু নিয়ে নীচের দিকে নেমে যায়। পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজ চালায়। এর আগে নিউ লেবরাং এলাকা ও নুরানাং এলাকাতেও বড় ধস নামে। জঙের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। লেম্বেরদুং পাওয়ার সেকশনের অধীনে অনেক বিদ্যুৎস্তম্ভ উপড়ে যাওয়ায় বমডির, বোম্বা ও পাইধার বিদ্যুৎহীন।
এ দিকে, উজানি অসম ও অরুণাচলে টানা বৃষ্টির ফলে অসমের বিভিন্ন নদীর জল বিপদসীমা ছুঁয়েছে। টিওক, ডাওকায় বহু গ্রাম ও বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি বন্যা কবলিত। শিঙরা, রঙানদী ও জাজির জন বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। রঙানদীর জলে লখিমপুরের দশটি গ্রাম প্লাবিত। শিবসাগরে দিখৌ, দারিকা, দিসাং নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। চড়াইদেও, সোনারিতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তিনসুকিয়া শহরও জলমগ্ন। জিয়াঢল নদীর জলে পশ্চিম ধেমাজির ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যেই ‘নিপকো’ রঙানদীর জল ছাড়তে চলায় বন্যার আশঙ্কা আরও বেড়েছে। গত রাতে যোরহাটের ঝাঁজি এলাকায় একটি রিংবাঁধ ভেঙে গিয়েছে। রৌরিয়া-কাঠনিবাড়ি সেতুও ডুবতে চলেছে। অরুণামুখে বন্যার জল ঢুকে আড়াই হাজার মানুষ আটকে পড়েছেন। যোরহাট শহরের গড় অলি-সহ বিভিন্ন রাস্তা জলমগ্ন। গোলাঘাটের বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি প্লাবিত। ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্রের জল ইতিমধ্যেই ১০৩.৯৮ মিলিমিটার বেড়েছে। যা গত বারের বর্ষার জলতল বৃদ্ধির চেয়েও বেশি। গত কাল গুয়াহাটির জ্যোতি নগরের ধসের পর আজ নুনমাটির লুইতনগরেও ফের ধস নামে। শহরের পাহাড়ি এলাকায় থাকা সকলকে সতর্ক করেছে প্রশাসন। বিপজ্জনক অবস্থানে থাকা বেশ কিছু বাড়ি বন্ধ করে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত বছর এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে বৃষ্টি পড়েছিল মোট ২৫৭.২০ মিলিমিটার। এবার সেই পরিমাণ এখনই ৪৫৬.৯৭ মিলিমিটার।