মাইনে বাড়ল সাংসদদের, তবু অখুশি অনেকে

অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় সাংসদদের তুমুল শোরগোলের চোটে আগামী বছর মহাত্মা গাঁধীর দেড়শো-তম জন্মদিন সংক্রান্ত ঘোষণাটিই ভাল করে শোনা গেল না।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০২
Share:

প্রতীকী ছবি।

চাকরিজীবী-মধ্যবিত্তের তেমন কোনও সুরাহা মেলেনি। তবে সাংসদদের বেতন বেড়ে গেল দ্বিগুণ! তার পরেও অবশ্য মুখ ভার অনেক সাংসদদেরই।

Advertisement

বেতন ও ভাতা বাবদ রাষ্ট্রপতির মাসিক আয় বেড়ে ৫ লক্ষ, উপরাষ্ট্রপতির ৪ লক্ষ এবং রাজ্যপালদের সাড়ে তিন লক্ষ টাকা হল। এই বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সঙ্গে সঙ্গে অনেকে রে-রে করে উঠলেন, সাংসদদের কী হল? মুচকি হেসে জেটলি বললেন, সাংসদরাই নিজেদের ভাতা স্থির করেন, যা নিয়ে বিতর্ক হয়। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে সাংসদদেরও বেতন, নির্বাচনী কেন্দ্র ভাতা, অফিস খরচ বাড়বে। তবে তার পর থেকে নয়া আইনের দৌলতে পাঁচ বছর অন্তর মূল্যবৃদ্ধির সূচকের নিরিখে বেতন-ভাতা বাড়বে সাংসদদের।

অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় সাংসদদের তুমুল শোরগোলের চোটে আগামী বছর মহাত্মা গাঁধীর দেড়শো-তম জন্মদিন সংক্রান্ত ঘোষণাটিই ভাল করে শোনা গেল না। কিন্তু বাজেট পেশের পর অর্থবিল হাতে পেয়ে চক্ষু চড়কগাছ সাংসদদের! তাঁদের ৫০ হাজার টাকা বেতন সরাসরি দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা এবং পেনশন ২০ হাজার থেকে বেড়ে ২৫ হাজার করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সফরের সময় বিমান ভাড়ার যে ২৫ শতাংশ পাওয়া যায়, বন্ধ হচ্ছে সেটি। আর অর্থবিলে কোনও উল্লেখ নেই নির্বাচনী কেন্দ্র বা অফিস ভাতার কথা।

Advertisement

মোদী সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রী অবশ্য বললেন, নির্বাচনী কেন্দ্র ভাতা ৪৫ হাজার থেকে বেড়ে ৭০ হাজার টাকা হবে। অফিস ভাতা ৪৫ হাজার থেকে বেড়ে হবে ৬০ হাজার টাকা। আর এক দিন আগে এলে বাড়তি ২০০০ টাকা দিনের ভাতাও দেওয়া হবে। কিন্তু সেই মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আসলে সফরের সময় বিমান ভাড়ার ২৫ শতাংশের মধ্যেই সবথেকে গরমিল হয়। সাংসদদের বাড়তি উপার্জনের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি। বাকি বৃদ্ধির প্রস্তাব উত্তরপ্রদেশের অধুনা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে কমিটিরই সুপারিশ।’’

আরও পড়ুন: লোকের মুখে মুখে শুধু জাতীয় বাঁশ

অনেক সাংসদের বক্তব্য, ৩৫ হাজার টাকায় দু’জন ব্যক্তিগত সচিব রাখার নিয়ম আছে। তাঁদের আবার কম্পিউটার জানা হতে হবে। এই টাকায় লোক মেলে আজকের দিনে? বেতন দ্বিগুণ বাড়ানোর কথা বললেও আসলে সরকার সাংসদদের দুর্নীতির পথেই হাঁটতে বলছে! ২০০৯ সালে কোটিপতি সাংসদ ছিলেন ৩১৯ জন। সেই সংখ্যা বেড়ে এখন হয়েছে ৪৪৯। কিন্তু যাঁরা কোটিপতি নন?

ক’দিন আগেই বিজেপি সাংসদ বরুণ গাঁধী ধনী সাংসদদের বেতন না নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। তাঁর আবেদন শুনলেন না কেউই। বরং বারবার তদ্বিরের পরে মাইনে বাড়ায় সকলেই কমবেশি খুশি। প্রকাশ্যে অবশ্য এক এক দলের এক এক রকম অবস্থান। যেমন কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী পাঁচ বছর অন্তর বেতনবৃদ্ধিতে খুশি হলেও আহমেদ পটেল বললেন, ‘‘সাংসদদের বেতন না বাড়িয়ে মধ্যবিত্তদের কর ছাড় দিলে বেশি খুশি হতাম।’’ বাংলার কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর আবার দাবি, সাংসদদের ধাঁচেই বিধায়কদের বেতনও বাড়ানো হোক।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদদের বর্ধিত বেতনের বিরোধী। প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে তিনি পেনশনও নেন না। তাঁর দলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের তাই সতর্ক প্রতিক্রিয়া, ‘‘সাংসদদের বেতন সংক্রান্ত আইন সংশোধন হবে বলা হয়েছে। তখন বোঝা যাবে কতটা কী বাড়ল। এখনই এ ব্যাপারে মন্তব্য করব না।’’ সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘যেটা হল, আপাতদৃষ্টিতে ভাল। তবে বিল এলে বোঝা যাবে আদতে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন