কৌঁসুলিদের ধর্মঘটে যাওয়াই উচিত নয়, বলল সুপ্রিম কোর্ট

সহকর্মীর মৃত্যু বা অন্যান্য কারণে হুটহাট কাজ বন্ধ করে দিয়ে আইনজীবীরা আদালত অচল করে দেন। এই ধরনের কর্মবিরতির বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ বার সুপ্রিম কোর্টও মন্তব্য করল, আইনজীবীদের ধর্মঘট বা আদালত বয়কট করা উচিত নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

সহকর্মীর মৃত্যু বা অন্যান্য কারণে হুটহাট কাজ বন্ধ করে দিয়ে আইনজীবীরা আদালত অচল করে দেন। এই ধরনের কর্মবিরতির বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এ বার সুপ্রিম কোর্টও মন্তব্য করল, আইনজীবীদের ধর্মঘট বা আদালত বয়কট করা উচিত নয়।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ ও বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে মন্তব্য করেছে, ধর্মঘট বা বয়কট হল ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। কোনও উপায় না-থাকলে বা একেবারে কঠিনতম পরিস্থিতিতে এই অস্ত্র ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, এই অস্ত্র যখন-তখন ব্যবহার করা হচ্ছে।

সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ধর্মঘট বা বয়কটের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ আগেই নির্দেশ দিয়েছে। তা সত্ত্বেও কর্মবিরতি করা হচ্ছে। এই সমস্যা গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবিলম্বে এর সমাধান দরকার। সমস্যার সমাধানের জন্য সুপ্রিম কোর্ট এ দিন আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠনকে এক মাস সময় দিয়েছে। দ্রুত বৈঠক ডেকে সমাধানে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে তাদের।

Advertisement

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুল্লা চেল্লুর উচ্চ আদালত এবং জেলা আদালতগুলির আইনজীবীদের বারবার অনুরোধ করেছেন, হুটহাট কর্মবিরতি বা বয়কটের পথে যাবেন না। কিন্তু তাতে কাজের কাজ খুব একটা হয়নি। আইনজীবীর মৃত্যুতে কর্মবিরতি কিংবা নানা কারণে বিচারপতি বা বিচারকের আদালত বয়কটের উদাহরণ এ রাজ্যে অজস্র। দিন সাতেক আগে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিলিগুড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আইনজীবীদের ফের অনুরোধ জানান, কর্মবিরতি করবেন না। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জলপাইগুড়িতে এক আইনজীবীর হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতির ডাক দেয় আইনজীবী সংগঠন। হাইকোর্ট, রাজ্যের সব নিম্ন আদালতে সে-দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়।

সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় জানান, সর্বোচ্চ আদালত আগেও এ কথা বলেছে। বিচার ব্যবস্থা তো সংবিধানেরই অঙ্গ। আদালত বিচারপতি, বিচারক বা আইনজীবী কারও নিজস্ব নয়। সবার আগে আদালত বিচারপ্রার্থীর। ‘‘বিচার পাওয়ার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। আদালতে ধর্মঘট বা বয়কট হলে বিচারপ্রার্থীদের সেই সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়,’’ বলেছেন অশোকবাবু।

কী বলছে রাজ্যের বার কাউন্সিল?

আইনজীবী সংগঠনের চেয়ারম্যান অসিতবরণ বসু বলেন, ‘‘এমনিতে আইনজীবীদের কেউই ধর্মঘট বা বয়কটের রাস্তায় হাঁটতে চান না। ধর্মঘট হলে বা বয়কট হলে যে তাঁদেরই পেশার ক্ষতি, আইনজীবীরা তা জানেন। নিতান্ত বাধ্য হলে তবেই সেই অস্ত্র তুলে নেওয়া হয়।’’

কোন মামলার প্রেক্ষিতে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে সরব হল সুপ্রিম কোর্ট?

সম্পত্তির মূল্য দু’‌কোটি টাকার মধ্যে হলে তা নিয়ে দেওয়ানি মামলার শুনানি জেলা আদালতে করার জন্য সম্প্রতি সংসদে প্রস্তাব পেশ হয়েছে। সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবীরা কর্মবিরতি করছেন। তা নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনস্বার্থের মামলা করেছে সুপ্রিম কোর্টে। সংগঠনের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সেই মামলার শুনানির সময় ওই কর্মবিরতি নিয়ে অভিযোগ জানান। আইনজীবী সংগঠনের হয়ে সওয়াল করতে উঠে প্রবীণ আইনজীবী রাম জেঠমলানী বলেন, ‘‘কাজ করতে না-চাওয়াও কিন্তু মানুষের সাংবিধানিক অধিকার।’’

কর্মবিরতি নিয়ে নোটিস জারি করার জন্য এ দিন জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনগুলির কো-অর্ডিনেশন কমিটি, দিল্লি হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং দেশের বার কাউন্সিলকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নোটিসের মূল কথা, শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ ধর্মঘট বা বয়কট নিয়ে আগে যে-নির্দেশ দিয়েছে, তা না-মানার জন্য আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement