উত্তরপ্রদেশ-উত্তরাখণ্ডে বিপুল জয়ের পরে বিজেপির নিশানা যে এ বার পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। দলের রাজ্য সভাপতি তথা বিধায়ক দিলীপ ঘোষ আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি করলেন, এ বার তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস থেকে বিজেপি-তে যোগদানের জন্য লাইন পড়ে যাবে। নিজের বিধানসভা কেন্দ্র খড়্গপুরে হোলির উৎসবের ফাঁকে সোমবার দিলীপবাবু বলেন, ‘‘দিদি ৩ জন বিধায়কের কথা বলেছেন। ৩ নয়, ৩০ জন বিধায়ক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। পঞ্চায়েত স্তরেও অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এই রাজ্যে একটা ঝটকা দিতে হবে। ব্লকে-ব্লকে কিষাণ, মজদুর, ছাত্র, শিক্ষককে নিয়ে সংগঠন মজবুত করা হবে।”
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের অবশ্য মত, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক হাল মোটেই এমন দাবি করার উপযুক্ত নয়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ-উত্তরাখণ্ডের সাফল্যে ভর করে এখানেও একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরির চেষ্টাতেই দিলীপবাবুরা বাস্তব চিত্রের উপরে খানিকটা রং চড়াচ্ছেন। যেমন—বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘দিলীপবাবুর মন্তব্যটা আসলে গ্যাস দিয়ে ফোলানো বেলুন। উত্তরপ্রদেশে যে রসায়ন কাজ করেছে, পশ্চিমবঙ্গের ধর্মনিরপেক্ষ মাটিতে তা করবে না। এখানকার মানুষ বিজেপি-তৃণমূলের গোপন আঁতাঁত বুঝতে পেরে কংগ্রেসের দিকেই আসবেন। পিপীলিকার পাখা উড়লে যা হয়, এখানে বিজেপি-রও তা-ই হবে।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘বিজেপি নেতারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন! পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বাতাবরণ চিরকালই ধর্মনিরপেক্ষ। সেখানে নানা রকম চেষ্টা ওঁরা এবং এ রাজ্যের শাসক দল দু’পক্ষই করেছেন। কিন্তু তাতে লাভ হবে না।’’ বস্তুত, বিজেপি এ রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির পরিসর দখলে মরিয়া বুঝেই বামেরা এখন লাগাতার নানা আন্দোলনে রাস্তায় থেকে নিজেদের দৃশ্যমানতা এবং সক্রিয়তা বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে।
পাশাপাশি দিলীপবাবু জোর গলায় স্বপ্ন দেখালেও বিজেপির অন্দরে এখনও ঈষৎ শঙ্কা রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব নিয়ে। দলের একাংশের সংশয়— লোকসভা ভোটে তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের রাস্তা বন্ধ করতে এবং এ রাজ্যে শাসক দলের গোপন সাহায্যে কিছু আসন জিততে এর পরেও কেন্দ্রীয় নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি নরম মনোভাব দেখাতে পারেন। এমনিতেই জিএসটি বাস্তবায়নে সাহায্য করছে তৃণমূল। তা ছাড়া রাজ্যসভায় বিজেপি-র এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।