Cancer

ক্যানসার বিশেষজ্ঞের তোপে পিএনবি কর্তা, আপত্তি উপমায়

শান্তা আরও লিখেছেন, “প্রতি বছর হাজার হাজার ক্যানসার রোগীর চিকিত্সা হয় আমাদের হাসপাতালে; আমরা গর্ব এবং আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, তাঁদের অনেকেই এখন কর্মময় জীবন যাপন করছেন।”

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদেন

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ১৬:৪৬
Share:

ক্যানসারের সঙ্গে কোরাপশন বা দুর্নীতির তুলনার বিরুদ্ধে ভি শান্তার প্রতিবাদ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রতীকী ছবি।

‘বহু ব্যবহার করা উপমায়’ না ভেবেচিন্তে আমরা কত কিছুর তুলনা টেনে ফেলি। ‘পাশবিক’ বা ‘চামার’-এর মতো অনেক উপমা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, আপত্তি উঠছে। আপত্তি উঠল ‘ক্যানসার’ নিয়েও। সম্প্রতি তুমুল আলোড়ন তোলা ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি সম্পর্কে বলতে গিয়ে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর যে ভাবে ‘ক্যানসার’-এর প্রসঙ্গ এনেছেন, তাতে তীব্র আপত্তি জানালেন প্রখ্যাত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ এবং পদ্মশ্রী-পদ্মভূষণ-পদ্ম বিভূষণ-ম্যাগসাইসাই জয়ী ভি শান্তা।

Advertisement

পিএনবি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) তথা চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সুনীল মেহেতাকে লেখা চিঠিতে শান্তা জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছেন দুর্নীতি বা কেলেঙ্কারির সঙ্গে ক্যানসারের তুলনা টানায়। “দুর্নীতি একটা অপরাধ এবং এটা লজ্জার বিষয়, ক্যানসার তা নয়,”— চিঠিতে লিখেছেন ৯১ বছর বয়সী বিশেষজ্ঞ ওই চিকিৎসক।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পিএনবি-র ১১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা তছরুপের ঘটনা হঠাৎই সামনে আসে। এখন জানা যাচ্ছে এই দুর্নীতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রথম নাম হিরে ব্যবসায়ী ধনকুবের নীরব মোদী। নীরব দেশ ছেড়ে পলাতক। সিবিআই এই মামলায় গ্রেফতার করেছে পিএনবি-র প্রাক্তন ডেপুটি ম্যানেজার গোকুল শেট্টি-সহ ১৩ জনকে।

Advertisement

ঘটনা সামনে আসার পর দিন, অর্থাৎ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পিএনবি এমডি সুনীল মেহেতা। সেখানে তিনি বলেন, “কোনও রকম কুকর্ম আমরা আর চলতে দেব না এবং এই ক্যানসারকে সরাব। ২০১১ থেকে এই ক্যানসার ছড়িয়েছে। আমরা অস্ত্রোপচার করছি এবং এটাকে বাদ দিচ্ছি।”

এখানেই আপত্তি তুলেছেন শান্তা। ২৩ ফেব্রুয়ারি চেন্নাইবাসী এই ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিঠি পাঠান সুনীলকে। সেখানে লেখেন, “আমরা চাই না যে অপরাধ, নিরাশা এবং ভয়ের সঙ্গে ক্যানসার শব্দটা জুড়ে থাক। এবং লজ্জার সঙ্গে তো কোনও ভাবেই নয়।”

শান্তা আরও লিখেছেন, “প্রতি বছর হাজার হাজার ক্যানসার রোগীর চিকিত্সা হয় আমাদের হাসপাতালে; আমরা গর্ব এবং আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, তাঁদের অনেকেই এখন কর্মময় জীবন যাপন করছেন।” পিএনবি এমডি-কে তাঁর বিবৃতি থেকে ক্যানসার শব্দটি বাদ দেওয়ার অনুরোধও করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: ব্যস্ত আছি, ফিরব না, সিবিআইকে বললেন নীরব

দুর্নীতির মতো ব্যাধির সঙ্গে ক্যানসারের তুলনা টানা নতুন কোনও ঘটনা নয়। এর আগে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্যেও একই রকম তুলনা শুনে আপত্তি জানিয়েছিলেন শান্তা। তাঁর সহজ যুক্তি— দুর্নীতি হল অপরাধ এবং স্বেচ্ছাকৃত, ক্যানসার এর কোনওটাই নয়। ফলে এ ধরনের ভুল তুলনা শুধরে ফেলা উচিত।

এই সেই চিঠি। পুরোটা পড়তে উপরের ছবিতে ক্লিক করুন।

ক্যানসারের সঙ্গে কোরাপশন বা দুর্নীতির তুলনার বিরুদ্ধে ভি শান্তার প্রতিবাদ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও আলোচনা শুরু হয়েছে। অধিকাংশই শান্তার পক্ষে। বেশ কয়েক জন ক্যানসার রোগী, এই রোগ নিয়ে কী ভাবে তাঁদের সামাজিক ভুল ধারণার সঙ্গে লড়াই করতে হয় তা লিখেছেন। কেউ কেউ অবশ্য বিপরীত মতও লিখেছেন। ইংরেজি অভিধান তুলে এমনই এক জনের টুইট, “বিশেষ্য পদ হিসেবে ক্যানসার শব্দটি ব্যবহার হতে পারে খারাপ বা ধ্বংসাত্মক অনুশীলন বা ঘটনাকে বোঝাতে, যা বহন করা কঠিন, নির্মূল করাও কঠিন।”

আরও পড়ুন: মার্কিন মুলুকে দেউলিয়া নীরবের সংস্থা

কলকাতার বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ এবং বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই তুলনাটা দুটো দিক থেকেই দেখতে হবে। তাঁর মতে, “কী ভাবে শব্দটা বলা হয়েছে অবশ্যই দেখতে হবে সেটা। ইংরেজি ভাষায় এর ব্যবহার কত ভাবে হয়, যিনি এই তুলনা টানছেন তিনি কোন অর্থটা ধরেছেন তা অবশ্যই বিচার্য।” কিন্তু আর এক দিক থেকে গৌতমবাবু শান্তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তিনি বলেন, “দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে আমরা নিচু চোখে দেখি। কিন্তু ক্যানসার আক্রান্তকে কেন নিচু চোখে দেখব? ক্যানসার কারও নিজের অপরাধে হয় না। এই অসুখের সঙ্গে তাই দুর্নীতির তুলনা টানা একেবারেই অনুচিত,”— বললেন তিনি।

টুইটারে শান্তার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

শুধু ক্যানসার শব্দটাই নয়, আমাদের দৈনন্দিন বলার বা লেখার ভাষায় আমরা এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করি, একটু ভেবে দেখলেই যা অন্যায় বা অনুচিত বলে বোঝা যায়। এমনটাই মনে করেন ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা দেখে অনেকে ‘পাশবিক’ বলে তুলনা করি। কিন্তু ভেবে দেখি না, পশু কখনও এমন কাজ করে না, বা করতে পারে না। এটা মানুষই পারে। বাংলা ভাষায় ‘চাড়াল’, ‘চামার’ ‘অশিক্ষিত’ বা ‘চুরি পরা পুরুষ’ বলে গালাগাল বহুল প্রচলিত। যার মধ্যে কোনও বিশেষ শ্রেণির, লিঙ্গের বা জাতের মানুষকে ছোট করে দেখা হয়। পবিত্রবাবুর মতে, “এই অর্থগুলো সমাজ থেকে তৈরি হয়। সামাজিক মনোভাব, সামাজিক ব্যবহার এই অর্থের মধ্যে ঢুকে যায়। তার পর চলতে থাকে। আর, এক বার শব্দগুলো প্রচলিত হয়ে গেলে, তখন মানুষ না বুঝেই এর ব্যবহার করতে থাকেন।” পশুকে নিচু চোখে দেখা, মেয়েদের মানুষ হিসেবে না দেখা, কুষ্ঠ রোগীকে ঘেন্না করা, সমাজের একটা অংশকে অস্পৃশ্য করে রাখা, ইত্যাদি মনোভাব ভাষাতে প্রভাব ফেলে— বলছেন পবিত্রবাবু। তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, সমাজে ভাষা ব্যবহারে, আপত্তিকর শব্দ নির্বাচনে সচেতনতা বাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন