—ফাইল চিত্র।
রাজীব গাঁধীর সঙ্গে সেনার আবেগ মিশিয়ে দেশভক্তির তাস খেলতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে কারণে নৌবাহিনীর জাহাজে বিদেশি শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নিয়ে লক্ষদ্বীপে ছুটি কাটানোর মতো গুরুতর অভিযোগও করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দুই প্রাক্তন নৌসেনা প্রধান-সহ নৌসেনার চার অবসরপ্রাপ্ত কর্তা প্রধানমন্ত্রীর সব অভিযোগ পুরোপুরি খারিজ করে দিলেন। এমনকি লক্ষদ্বীপের তৎকালীন প্রশাসকও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খারিজ করে দিলেন।
বালাকোটে হামলার পর থেকেই সেনাকে হাতিয়ার করে ভোট চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। যা দেখে রাহুল গাঁধীরা সতর্ক করেছিলেন, সেনাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি করে ফেলেছেন মোদী। পাশাপাশি মোদী-জমানার হরেক ব্যর্থতা নিয়েই টানা তোপ দাগছিলেন তিনি। অস্বস্তি এড়াতে গত কাল মোদী টেনে এনেছিলেন ত্রিশ বছর আগের কথা। তাঁর অভিযোগ, বিদেশি শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নিয়ে নৌসেনার আইএনএস-বিরাটে চেপে লক্ষদ্বীপে সপরিবার দশ দিনের ছুটি কাটিয়েছিলেন রাজীব গাঁধী। মোদীর অভিযোগ ছিল, দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করে এই যুদ্ধজাহাজ রাজীব ও তাঁর পরিবারের জন্য লক্ষদ্বীপে মোতায়েন ছিল। সঙ্গে ছিল সেনার হেলিকপ্টারও।
মোদীর সেই অভিযোগের পরে চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। সামনে এলেন চার প্রাক্তন নৌ-কর্তা। অ্যাডমিরাল এল রামডস, অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ, ভাইস অ্যাডমিরাল বিনোদ পাসরিচা, ভাইস অ্যাডমিরাল মদনজিৎ সিংহ। এই চার জনেই ১৯৮৭ সালে রাজীব গাঁধীর সঙ্গে সফরে ছিলেন। বাকি তিন জনের সঙ্গে কথা বলে এবং সম্মতি নিয়ে আজ প্রাক্তন নৌসেনা প্রধান রামডস এক বিবৃতি জারি করেন। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেন। নৌকর্তাদের সাফ কথা, প্রধানমন্ত্রী গত কাল যে অভিযোগ করেছেন, তা সর্বৈব ভুল। কোনও ছুটি কাটাতে নয়, রাজীব গাঁধী লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলেন সরকারি সফরে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী সনিয়া গাঁধী। সরকারি সফরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিতে পারেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর যুদ্ধজাহাজে কোনও বিদেশি ছিলেন না।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অ্যাডমিরাল রামডস বলেন, ৩২ বছর আগে তিরুঅনন্তপুরম থেকে লক্ষদ্বীপে যান সস্ত্রীক প্রধানমন্ত্রী। তিরুঅনন্তপুরমে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। লক্ষদ্বীপে দ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বৈঠক ছিল। যেটি একবার আন্দামান, একবার লক্ষদ্বীপে হত। আইএনএস বিরাটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য আরও চারটি রণতরী ছিল। আইএনএস বিরাটে সস্ত্রীক প্রধানমন্ত্রীর জন্য নৈশভোজের আয়োজনও করা হয়। তাঁরা হেলিকপ্টারে কয়েকটি দ্বীপে গিয়েছিলেন কিছু অফিসার ও স্থানীয় লোকের সঙ্গে কথা বলতে।
অথচ গত কাল বিজেপির তরফে বলা হয়, দশ দিনের ছুটি কাটাতে রাজীব গাঁধীর সঙ্গে শুধু সনিয়া নন, তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরাও ছিলেন। ছিলেন রাজীব-সনিয়ার দুই সন্তান রাহুল-প্রিয়ঙ্কাও। লক্ষদ্বীপের বাঙ্গারাম দ্বীপ বেছে নেওয়া হয়েছিল ছুটি কাটানোর জন্য। কিন্তু অ্যাডমিরাল রামডস আজ বলেন, সফরের শেষ দিনে শুধু বাঙ্গারাম গিয়েছিলেন রাজীব। তাঁর নিরাপত্তার জন্য কয়েক জন ডাইভার পাঠানো হয়েছিল। রাহুল গাঁধীকে তাঁরা দেখেননি। গাঁধী পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কোনও জাহাজের অভিমুখও বদল করা হয়নি। লক্ষদ্বীপের তৎকালীন প্রশাসক ওয়াজাহাত হবিবুল্লাহও বলেন, আইএনএস বিরাট মোতায়েন করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য। ছুটি কাটাতে নয়, সরকারি কাজেই সেখানে গিয়েছিলেন রাজীব গাঁধী।