general-election-2019-journalist

তারকা আর নন, ভি এস কেবলই ছবি

যে শবরীমালা-বিতর্ক এ বার কেরলের ভোটে অন্য মাত্রা জুড়েছে, সেই ঘটনাতেই ভি এসের ভিন্ন ‘উপদেশ’ ছিল। মন্দিরে মহিলাদের সমানাধিকারের পক্ষে গত ১ জানুয়ারি কেরল জুড়ে ৫০ লক্ষ প্রমীলাকে দাঁড় করিয়ে প্রাচীর (‘বনিতা মিতিল’) গড়েছিল সিপিএম।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

আলপ্পুঝা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৩
Share:

আলাপ্পুঝায় ভি এসের আদি বাড়ির দেওয়ালে পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।

কতগুলো ভোট যে কাঁধে করে পার করেছেন, ইয়ত্তা নেই! এ বার কি তা হলে সেই সুদীর্ঘ যাত্রা থেমে গেল?

Advertisement

নাহ্! কেউ কোনও ঘোষণা করেনি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া কেরলের এলডিএফের তারকা প্রচারকের তালিকায় এ বার আর ৯৬ বছরের বৃদ্ধের নাম নেই। সামাজিক মাধ্যমে মাঝে মধ্যে তিনি অবশ্য বিবৃতি দিচ্ছেন বামেদের পক্ষেই।

ঝাঁ ঝাঁ রোদ আর মাঝে মাঝেই বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির ফাঁকে নবতিপর বৃদ্ধের অনুপস্থিতি নিয়ে এ রাজ্যের নেতাদের কারও তাপ-উত্তাপ চোখ পড়ছে না। কিন্তু বৃদ্ধের নাম যদি হয় বেলিক্কাকাতু শঙ্করন অচ্যুতানন্দন, তা হলে তো তাঁর খোঁজ একটু করতে হয় বৈকি! তিনি এখন কেরলের বাম সরকারের উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। কিন্তু ভি এসের উপদেশ কি কেউ শোনে আর?

Advertisement

যে শবরীমালা-বিতর্ক এ বার কেরলের ভোটে অন্য মাত্রা জুড়েছে, সেই ঘটনাতেই ভি এসের ভিন্ন ‘উপদেশ’ ছিল। মন্দিরে মহিলাদের সমানাধিকারের পক্ষে গত ১ জানুয়ারি কেরল জুড়ে ৫০ লক্ষ প্রমীলাকে দাঁড় করিয়ে প্রাচীর (‘বনিতা মিতিল’) গড়েছিল সিপিএম। তার ঠিক আগেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে চিঠি লিখে সিপিএমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ভি এস বলেছিলেন, এমন প্রমীলা প্রাচীর করা উচিত হবে না। কারণ, জাত এবং ধর্ম নিয়ে কাজ করা কিছু সংগঠন ওই কর্মসূচিকে সমর্থন করছে। এমন সংগঠনের সমর্থন নিলে বরং বিজেপি-আরএসএসের ফাঁদেই পা দেওয়া হবে। অতীতে অনেক বার কেরলে ভিত গড়েও আরএসএস বেশি এগোতে পারেনি বামেদের আদর্শগত ও সাংগঠনিক মোকাবিলার কারণে। ভি এসের প্রস্তাব ছিল, কেরলে এখন সঙ্ঘ-বিজেপির উত্থান ঠেকাতে করণীয় স্থির করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির বি‌শেষ অধিবেশন ডাকা হোক।

ভি এসের হুঁশিয়ারি এবং বিকল্প প্রস্তাব উড়িয়েই যথারীতি এগিয়েছিলেন পিনারাই বিজয়নেরা। এখন ভোটের সময়ে কয়েকটি দলিত সংগঠন এবং ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী আসনভিত্তিক সমর্থন দিয়েছে এলডিএফ-কে। আর নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা কেরলে এসে হিন্দুত্ববাদী হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, ভি এসের মত পছন্দ হল না এবং তাঁরই আশঙ্কা ‘সত্য’ করে গেরুয়া শিবিরের রমরমা বেড়ে গেল বলেই কি প্রচারে তিনি ব্রাত্য?

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই যুক্তি অবশ্য মানছেন না ভি এসের শিষ্য তথা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। কেরলে প্রচারে এসে তিনি দেখা করেছেন ভি এসের সঙ্গে। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘চাইলেও এখন আর আগের মতো প্রচার করা ওঁর পক্ষে সম্ভব নয়। অল্পস্বল্প বেরোচ্ছেন এবং সেখানে কোনও ভিন্ন সুর নেই!’’

পুন্নাপ্রা উত্তরে তাঁর আদি ভিটে অনেক দিনই সিপিএমের হেফাজতে। গুড ফ্রাই ডে-র ছুটির বাজারে সে চত্বরে গিয়ে আলপ্পুঝা লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী এ এম আরিফের পোস্টারে অবশ্য ভি এস-কে দেখা গেল। নির্বাচনী কার্যালয়ে দলের কর্মী রাজকুমার, টমাসেরা বলছেন, ‘‘আমাদের প্রচারে অন্য নেতাদের সঙ্গেই ভি এসের ছবি ব্যবহার করছি।’’

সে তো ছবি! আর মানুষটা? চলাফেরায় একটু অসুবিধা আছে, দাঁড়াতে গেলে কারও সাহায্য লাগে। সরকারি ঠিকানায় ধরা হলে সহকারীর মাধ্যমে বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন