ছবি এএফপি।
এক মাস আট দিনের দীর্ঘ পর্ব পেরিয়ে শেষ হচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের ভোট-অধ্যায়। সপ্তম ও শেষ দফায় আজ, রবিবার বাংলার ৯ আসনে ভোট। এ ছাড়াও ৬টি রাজ্য এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৫০টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে আজ।
তার পরে সন্ধ্যা থেকেই বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমগুলিতে শুরু হয়ে যাবে বুথ-ফেরত সমীক্ষা। যে দিকে হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। উৎসুক দেশবাসীও। সারা দিনের ভোট-পর্বের থেকে এই সমীক্ষার উত্তেজনাও কম নয়। জনমত সমীক্ষার ফল অনেক সময় না মিললেও ২৩ মে ভোটের ফল প্রকাশের আগে তিন দিন তাদের রায় নিয়েই চর্চা চলবে দেশ জুড়ে।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দাবি, অনায়াসে ৩০০ আসন পেতে চলেছে বিজেপি। অন্য দিকে সক্রিয়তা শুরু হয়ে গিয়েছে বিরোধী শিবিরেও। ভোট-পর্ব শেষ হওয়ার আগেই জোট গড়তে দিল্লি-লখনউ করে বেড়াচ্ছেন টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু। কে চন্দ্রশেখর রাও, জগন্মোহন রেড্ডি বা নবীন পট্টনায়কের মতো নেতারা ইউপিএ বা এনডিএ-র সঙ্গে হাত মেলাননি। সমীক্ষার ফলের দিকে তাকিয়ে তাঁদের নিয়ে একপ্রস্ত টানাটানি শুরু হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
রাজ্যে আগের ৬ দফা ভোটেই বিক্ষিপ্ত অশান্তি, বুথ দখল বা ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছে। ষষ্ঠ পর্বেই অভিযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি। তার পরে কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড-শো ঘিরে ভাঙচুর হয়েছে কলেজে, ভাঙা হয়েছে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ কলকাতা ও তার আশেপাশে দুই ২৪ পরগনার ৯টি আসনে ভোট ঘিরে বাড়তি উত্তেজনা রয়েছে সব শিবিরেই। শাসক দল তৃণমূলের অভিযোগ, শেষ দফার ভোটে ইভিএম কারচুপির চেষ্টাও হতে পারে। কমিশন অবশ্য জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, ৯টি লোকসভা কেন্দ্রের ১৭ হাজার ৫০৮টি বুথে ৭১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। মোট ১০০% বুথেই থাকবে বাহিনীর সুরক্ষা। বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা।
বাংলার ৯ ধরে সপ্তম পর্বে ভোট হচ্ছে দেশের ৫৯টি আসনে। ভোট রয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও চণ্ডীগড়ে। এই দফায় সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যিনি লড়ছেন বারাণসী থেকে। এ ছাড়াও বিহারে রবিশঙ্কর প্রসাদ, শত্রুঘ্ন সিন্হা, মীরা কুমার, মিসা ভারতী, আর কে সিংহ, উপেন্দ্র কুশওয়াহা, পঞ্জাবে সুখবীর সিংহ বাদল ও হরসিমরত কৌর বাদল, সানি দেওল, চরণজিৎ সিংহ অটওয়াল, হিমাচলে অনুরাগ ঠাকুর, ঝাড়খণ্ডে শিবু সরেনদের পরীক্ষা।
শেষ দফার ভোটে বাংলার সব নজর মূলত ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের দিকে। সেখানে তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টক্কর হচ্ছে সিপিএমের ফুয়াদ হালিমের। যাদবপুর ও বসিরহাটে তৃণমূলের দুই তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জহানেরও ভোট আজ। কলকাতা উত্তরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দমদমে সৌগত রায়, বারাসতে কাকলি ঘোষ দস্তিদারের মতো সংসদীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের অভিজ্ঞ মুখেদেরও পরীক্ষা আজ। লোকসভার পাশাপাশি চার বিধানসভা কেন্দ্র দার্জিলিং, ইসলামপুর, হবিবপুর ও ভাটপাড়ায় উপ-নির্বাচনও হবে আজ একই সঙ্গে। তার মধ্যে ভাটপাড়ায় তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রের সঙ্গে বিজেপির অর্জুন সিংহের ছেলে পবন সিংহের লড়াই ঘিরেই উত্তেজনা বেশি।
সব দলের সম্মিলিত দাবির মুখে ভোটের আগে দু’দিন ধরে এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে বহিরাগতদের বার করে দেওয়ার অভিযান করছে পুলিশ। যদিও ডায়মন্ড হারবারের নানা জায়গায় বহিরাগতেরা ঘাঁটি গেড়ে আছে এবং অশান্তির চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। কলকাতার ভোটার না হওয়ার কারণেই আজ শহরে না ঢুকে হাওড়ার বেলিলিয়াস রোডে কার্যালয় থেকে ভোট-প্রক্রিয়া নজরদারি করবেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। কমিশনের কাছ থেকে বিজেপি বিশেষ অনুমতি নিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের জন্য। সকালে ইনদওরে ভোট দিয়ে কলকাতায় এসে তাঁর বিজেপির রাজ্য দফতরে থাকার কথা। তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বলেছেন, বিজেপি যতই ‘কন্ট্রোল রুম’ খুলুক, তাতে কিছু এসে যাবে না।