—ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকলকে চৌকিদার হওয়ার আহ্বান জানানোর পর দু’তিন-দিন ধরে টুইটারে ‘ট্রেন্ডিং’— চৌকিদার।
তবে বাস্তবে যাঁদের চৌকিদারের কাজ করে সংসার চালাতে হয়, তাঁরা অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার এই হিড়িক নিয়ে নিস্পৃহ। অনেকেরই অভিযোগ, বাস্তবে চৌকিদারদের কাজ কতটা কঠিন, তা অনেকেই জানেন না। তাই ‘আমিও চৌকিদার’ বলাটা সহজ, নিজে তা হওয়া সহজ নয়। ডুয়ার্সের গজলডোবার নির্মাণকাজের প্রহরী দীপঙ্কর বিশ্বাস সোজাসাপ্টা বললেন, ‘‘আমরা চৌকিদারি করে জীবন চালাতে চাই না। এই পরিচয় দিতেও লজ্জা হয়। প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, তা-ও জানি না।’’
তবে চৌকিদার হয়ে গর্ব অনুভব করেন ডেবরা টোলপ্লাজার নিরাপত্তাকর্মী কিঙ্কর দোলুই। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা দেশের সম্পদ রক্ষার জন্য দিনে-রাতে অতন্দ্র প্রহরায় নিযুক্ত। তাই এই পেশা নিয়ে গর্ব বোধ করি।’’ তবে মোদীর ডাকে সাড়া দিতে নারাজ তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘২০১৪ সালে আমরা সকলে নরেন্দ্র মোদীকে দেশরক্ষায় চৌকিদার হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছিলাম। কিন্তু উনি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। দেশের কোটি-কোটি টাকা লুট করে নীরব মোদী, বিজয় মাল্যরা পালিয়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী সেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে সাধারণ মানুষকে চৌকিদার হতে বলছেন। এ সব বলে উনি পক্ষান্তরে আমাদের পেশাকে অপমান করতে চাইছেন বলে মনে করি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ির এক চা বাগানের চৌকিদার কৃষ্ণ ওরাওঁ অবশ্য মনে করেন, নরেন্দ্র মোদী তাঁর পেশার মান বাড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলার পরে এখন আমার পেশা নিয়ে গর্ব হয়। কাজ করতেও আনন্দ পাই।’’ তবে তাঁর দাবি, চা বাগানের চৌকিদার ও চা শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো উচিত। কারণ, শুধু চোরই নয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের বুনো হাতি তাড়ানোর কাজও করতে হয়। তাঁদের সংগঠনের নেতা দয়ানন্দ টোপ্পো জানান, চা বাগানে চুরি রোধ করতে দীর্ঘদিন ধরেই চৌকিদার পদ রয়েছে। কিন্তু বুনো জন্তুর হানা বা দুষ্কৃতী হামলা রুখতে গিয়ে চৌকিদারদের জীবন চলে গেলেও বিমার ব্যবস্থা নেই।
সমুদ্রের ধারে পর্যটকদের জীবন যাঁরা পাহারা দেন, তেমনই এক চৌকিদার, অর্থাৎ নুলিয়া রতন দাস মনে করছেন, চৌকিদার শব্দটাকে প্রধানমন্ত্রী খুব জনপ্রিয় করে দিয়েছেন। তবে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মোদী বলেছিলেন সবাইকে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন। পেলাম কই!নীরব মোদী অনেক টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন। তা হলে চৌকিদার হিসেবে মোদী কী করলেন?’’
প্রধানমন্ত্রী বলার পরে কেন্দ্রে শাসক দলের মন্ত্রী-নেতারা যে ভাবে নিজেকে চৌকিদার বলছেন, তাকে ‘প্রহসন’ বলছেন রামপুরহাটের এটিএম পাহারাদার আরজু শেখ। তাঁর কথায়, ‘‘ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। খালি হাতে পাহারা দিতে হয়। কয়েকটি সিসি ক্যামেরা ছাড়া নিরাপত্তার কিছু নেই।’’