গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
জল্পনা চলছিল কয়েক দিন ধরেই। আডবাণী-জোশীদের ক্ষোভ প্রশমনে এবং দলের অস্বস্তি ঢাকতে অবশেষে দলের দুই মার্গদর্শকের সঙ্গে দেখা করলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সোমবার ইস্তাহার প্রকাশের আগেও এই সাক্ষাৎ হতে পারে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন চরমে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত সেইসাক্ষাৎ হল। তবে ইস্তাহার প্রকাশের পরএবং লোকসভা ভোট শুরুর ঠিক ঠিক দু’দিন আগে। বিজেপির বর্ষীয়ান দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সঙ্গে দেখা করে ইস্তাহার এবং সাম্প্রতিক দলের অবস্থান নিয়ে কথা বললেন অমিত শাহ।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি দলের রাশ হাতে নেওয়ার পরই লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীর মতো প্রবীণ নেতাদের মার্গদর্শক মণ্ডলীতে স্থান দিয়ে কার্যত রাজনৈতিক সন্ন্যাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার প্রমাণ মেলে, গত কয়েক বছরে একটিও মার্গদর্শক মণ্ডলীর বৈঠক হয়নি। দুই নেতাও রাজনীতির মূলস্রোত থেকে নিজেদের কার্যত সরিয়েই নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রার্থী না করার ঘোষণার পর রাজনৈতিক শিবিরে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়, তাতে আর চুপ থাকতে পারেনি বিজেপি। দুই নেতাকে নিয়ে অস্বস্তি ঢাকতেই তাই শেষ পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে দেখা করলেন।
কী বলেছেন অমিত শাহ? আডবাণী-জোশীরাই বা কী প্রতিক্রিয়া? সে সব অবশ্য প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না বিজেপি। তবে দলীয় সূত্রে খবর, দলের ইস্তাহার এবং তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে দুই নেতাকেই তথ্য দিয়েছেন অমিত শাহ। ইস্তাহার নিয়ে দুই নেতার মতামতও নিয়েছেন বিজেপি সভাপতি। কেন দল ৭৫ বছর বয়সের বেশি নেতাদের প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই ব্যাখ্যাও দেন অমিত। কিন্তু প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতারা না জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক রাম লালকে দিয়ে বার্তা পাঠানো হল কেন, তা নিয়ে সম্ভবত আলোচনা হয়নি। হলেও বিজেপি সূত্রে সেই অস্বস্তিকর প্রসঙ্গ নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: হিসাব বহির্ভূত ২৮১ কোটির টাকার হদিশ, মিলল ক্যাশবুক, রাজনৈতিক যোগের দাবি আয়করের
কিন্তু এত কিছুর পরও ৯১ বছরের ‘লৌহপুরুষ’ আডবাণীর ‘অভিমান’ দূর হবে কি? মূলস্রোতে ফিরে দলের হয়ে প্রচার বা অন্য রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যাবে কি মুরলীমনোহর জোশীকে? রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশই মনে করছেন, সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
৭৫ বছরের বেশি বয়সের নেতাদের এ বার লোকসভা ভোটে টিকিট দেয়নি বিজেপি। সেই সূত্রেই প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েছিলেন গাঁধীনগর থেকে পর পর ছ’বার জয়ী সাংসদ লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং কানপুরের সাংসদ মুরলীমনোহর জোশী। আর সেই গাঁধীনগরেই এ বার অমিত শাহকে প্রার্থী করেছে দল। কিন্তু দলের অন্যতম দুই প্রবীণ নেতার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে দল, তাতে দু’জনই ক্ষুব্ধ। দুই রাজনৈতিক গুরুর সঙ্গে মোদী-অমিত শাহ যে ব্যবহার করেছিলেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কংগ্রেস-সহ বিরোধীরাও এ নিয়ে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছিল। দুই রাজনৈতিক গুরুকে বিজেপি যথাযথ সম্মান দেয়নি বলে শুরু হয়েছিল কটাক্ষ, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ। ফলে এক দিকে দুই নেতার ক্ষোভ সামলানো এবং বিরোধীদের আক্রমণের মুখে অস্বস্তিতে পড়ে দল।
আরও পড়ুন: স্রেফ ভোটের খেলা! খাস অযোধ্যাভূমিই আর মাথা ঘামাতে নারাজ রামমন্দির নিয়ে
সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেন বিজেপির দুই মার্গদর্শক। জোশী কানপুরের জনসাধারণের প্রতি খোলাখুলিই বার্তা দেন, দলের তরফে তাঁকে জানানো হয়েছে, এ বার তিনি কানপুরে বা অন্য কোথাও প্রার্থী হচ্ছেন না। প্রথম দিকে আডবাণী প্রকাশ্যে কিছু না বললেও গত সপ্তাহেই ব্লগে নিজের ক্ষোভের কথা লেখেন। দলের মতাদর্শগত বিচ্যুতি নিয়ে সাবধান করে বলেন, বিজেপির আদর্শে কখনওই ‘বিরোধী মানেই দেশদ্রোহী’ এই ভাবনা ছিল না।রাজনৈতিক শিবিরের পর্যবেক্ষণ, দুই নেতার বক্তব্যেই স্পষ্ট, প্রার্থী না করলেও সেই সিদ্ধান্ত আরও সম্মানের সঙ্গে জানাতে পারতেন দলের শীর্ষ নেতারা। পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ এও মনে করেন, জোশী-আডবাণীর তির ছিল মোদী-শাহ জুটির দিকেই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
স্বভাবতই আডবাণীর এই ব্লগের পর বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ে। দলের ভাবমূর্তি এবং ভোটের মুখে জনমানসে তার প্রভাবের কথা মাথায় রেখেই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হন শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রে খবর, দলের ক্ষত মেরামতে দুই নেতার সঙ্গে কথা বলেই ক্ষোভ প্রশমন করবেন।সেই মতোই এ দিনের এই সাক্ষাৎ। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, ইস্তাহার তৈরির সময় যাঁদের মতামত, পরামর্শ নেওয়া হয়নি, প্রকাশের অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি, এখন সব কিছু শেষ হওয়ার পর তাঁদের কাছে গিয়ে ব্যাখ্যা করে আর নতুন কী বলবেন অমিত শাহ। তাতে দলকে আরও অস্বস্তির মুখে ঠেলে দিলেন না তো বিজেপি সভাপতি?