পঞ্চমী শেষে শরিকেই ভরসা রাখছে বিজেপি 

গত কাল একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাম মাধব কার্যত মেনে নেন, ২০১৪ সালে যে মোদী হাওয়া বইছিল, এবারে তা উধাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০৪:৫৭
Share:

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বিজেপি, বললেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। —ফাইল ছবি।

মিলছে না হিসাব!

Advertisement

সাত দফার ভোট যত এগোচ্ছে, তত অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপি শিবিরে। দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপির সদর দফতরে এখন একটাই প্রশ্ন— সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তো দল? না কি তার বহু আগেই থেমে যাবে মোদীর রথ। আজ পঞ্চম দফা ভোটের পর থেকেই পুরো দমে শুরু হয়ে গিয়েছে সেই জল্পনা। যা আরও উস্কে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। আজ পঞ্চম পর্বে ভোট ছিল সাতটি রাজ্যের ৫১টি আসনে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৭টি আসন বাদ দিলে ৫ বছর আগে বাকি আসনগুলির সিংহ ভাগ জিতে দিল্লি দখলের লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এ বারে পরিস্থিতি যে সম্পূর্ণ আলাদা, বিরোধীদের পাশাপাশি তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বয়‌ং রাম মাধবও।

গত কাল একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাম মাধব কার্যত মেনে নেন, ২০১৪ সালে যে মোদী হাওয়া বইছিল, এবারে তা উধাও। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘নিজের ক্ষমতায় ২৭১টি (ম্যাজিক সংখ্যা) আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে খুশিই হব।’’ তবে সে ব্যাপারে সংশয় থাকায় সরকার গড়তে এনডিএ-র শরিকদের উপরে ভরসা রেখেছেন তিনি। অথচ গত পাঁচ বছরে নিজস্ব আসন সংখ্যার জোরে এনডিএ শরিকদের কার্যত ঠুঁটো করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। এ বার পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে এখন থেকেই শরিকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। রাম মাধবের আশা— এনডিএ-র শরিকেরা মিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে সমস্যা হবে না।

Advertisement

পঞ্চম দফা ভোটের শেষে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে গোটা দেশে ৬২.৫৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার ও ঝাড়খণ্ড— গো-বলয়ের পাঁচটি রাজ্যে ৪২টি আসনে এ দিন ভোট হয়। এর মধ্যে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের ৯টি আসন বাদ দিলে বাকি ৩৩টি আসনের মধ্যে গত বার ৩০টির কাছাকাছি আসনে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু এ বারে পরিস্থিতি ভিন্ন। একে উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতীর জোটে অস্বস্তিতে বিজেপি। অন্য দিকে ময়দানে নেমেছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আদৌ সুখকর নয় বিজেপির পক্ষে। দলের সমীক্ষা বলছে, ৮০ আসনের উত্তরপ্রদেশে গত বার ৭২টি আসনে জিতলেও, এ বার ৩০ থেকে ৩৫টি আসন খোয়াতে হতে পারে বিজেপিকে। এই তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন রাম মাধবও। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে ৫ বছর আগে জেতা জমি অনেকটাই হারিয়েছে দল।’’ তবে তাঁর আশা, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে বাড়তি আসন পেয়ে সেই ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে যাবে।

উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি রাজস্থানের ১২টি ও মধ্যপ্রদেশের ৭টি আসনে আজ ভোট ছিল। সদ্য ওই দুই রাজ্যে ক্ষমতা হারিয়েছে দল। বিজেপির শিবিরের দাবি, মানুষের মনে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে অসন্তোষ ছিল, সেই ক্ষোভ বিধানসভা নির্বাচনেই বেরিয়ে গিয়েছে। বিজেপির দাবি, ওই দুই রাজ্যে হারানো জমি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে দল। উপরন্তু রাজ্যে ক্ষমতায় এসে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতার বিষয়গুলি মানুষ মনে রেখে লোকসভায় বিজেপিকেই ভোট দেবে। কিন্তু গত বারের মতো বিজেপির একার ক্ষমতায় মসনদ দখল করতে যে পারবে না, তা এক রকম মেনে নিচ্ছেন এনডিএ শরিক জেডিইউ বা শিবসেনা নেতৃত্ব। শিবসেনা নেতা

সঞ্জয় রাউতের কথায়, ‘‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনও দলের পক্ষে একা লোকসভা নির্বাচন জেতা সম্ভব নয়। বিজেপির পক্ষেও একা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন। সেই কারণে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে হাত মেলাতে হয়েছে তাদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন