শেষ দফার ভোটের প্রচার শেষ হতে না-হতেই বিরোধী জোটের সরকার গড়া নিয়ে ফের সক্রিয় হলেন তেলুগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আজ দিল্লি এসে দেখা করেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আগামিকাল সকালে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। কথা হবে এনসিপি সভাপতি শরদ পওয়ারের সঙ্গেও। তার পরে লখনউ যাবেন চন্দ্রবাবু। সেখানে মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তাঁর।
সরকার গড়তে সম্ভাব্য যাবতীয় রাস্তা খতিয়ে দেখতে ব্যস্ত দুই শিবিরই। নরেন্দ্র মোদী দাবি করছেন, তাঁর দল তিনশোরও বেশি আসন পাবে। যদিও আড়ালে অন্য দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা শুরু করেছেন অমিত শাহেরা। বিরোধী শিবির অবশ্য প্রকাশ্যেই চালাচ্ছে সেই তোড়জোড়। নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকেই রাহুলকে সামনে রেখে বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনে সূত্রধরের ভূমিকা নিয়েছেন চন্দ্রবাবু। তিনি যে-হেতু প্রধানমন্ত্রী হবেন না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাই চন্দ্রবাবুর উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস। আজ দুপুরে চন্দ্রবাবুর দিল্লির আসার ঘোষিত কারণ ছিল, নির্বাচন কমিশনে একটি অভিযোগ জানানো।
যদিও টিডিপি সূত্রেই বলা হয়েছে, কমিশনের বিষয়টি গৌণ। আসলে অন্য বিরোধীদের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা ঝালিয়ে নিতেই রাজধানীতে এসেছেন তিনি। কমিশনের কাজ শেষ হতেই ইয়েচুরির সঙ্গে বৈঠকে বসেন নায়ডু। সূত্রের দাবি, বিজেপিকে রুখতে ধর্মনিরপক্ষ দলগুলির জোটকে সিপিএম সমর্থন করবে বলে তাঁকে আশ্বাস দেন ইয়েচুরি।
গত কাল বিহারে গিয়ে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে তাঁরা কর্নাটক মডেলে জোট সরকারকে সমর্থন করতে রাজি। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি নিয়ে জেদ ধরে থাকবে না কংগ্রেস। রাজনৈতিক শিবির বলছে, গত কালের ওই বার্তা ছিল এনডিএ শরিক নীতীশ কুমারের উদ্দেশে। আজ অবশ্য সেই অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন আজাদ। তবু মোটের উপরে সব দলকে নিয়ে সরকার গড়ার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি।
সনিয়া গাঁধী ব্যক্তিগত স্তরে ইতিমধ্যেই প্রাক্তন ইউপিএ শরিক নেতাদের সঙ্গে এক প্রস্ত কথা বলেছেন। অন্যান্য দলের সঙ্গে কথা বলার জন্য সনিয়ার নির্দেশে তৎপর হয়েছেন গুলাম নবি, মল্লিকার্জ্জুন খড়্গের মতো নেতারা। বার্তা দেওয়া হচ্ছে কে চন্দ্রশেখর রাও, জগন্মোহন রেড্ডি, নবীন পট্টনায়কদের। ভোটের প্রচারে নবীন বিজেপিকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলেছিলেন। বস্তুত, কংগ্রেসের আশা বাড়িয়ে নবীনের দল বিজেডি-র সহ-সভাপতি এস এন পাত্র আজ জানিয়েছেন, তাঁরা বিজেপি এবং কংগ্রেসের থেকে সমদূরত্বের নীতি আর নেবেন না। আর কংগ্রেসের প্রয়াসকে কটাক্ষ করে অমিত শাহ আজ বলেছেন, ‘‘ওই নেতাদের জনতা ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। এখন তাই ওঁরা বৈঠকখানায় বসে সরকার গড়ার কৌশল বানাচ্ছেন। ভোটাররা ক্রীতদাস নন যে, তাঁদের পিছনে পিছনে দৌড়বেন।’’
তৎপরতা লখনউয়েও। বিএসপি নেত্রী মায়াবতী নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁকে সমর্থন করেছেন জোটসঙ্গী অখিলেশ যাদব। উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপি বা পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে
জোট হয়নি কংগ্রেসের। ওই দলগুলি কি শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আসবে? সেই প্রশ্নের উত্তরে আজ রাহুল বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে জোট না-হলেও, ওই রাজ্যগুলিতে বিজেপি-বিরোধী শক্তিই বেশি আসন পাবে। আমার স্থির বিশ্বাস, ওই দলগুলি কেউই বিজেপিকে সমর্থন করবে না বা নরেন্দ্র মোদীর পাশে দাঁড়াবে না। তারা থাকবে ধর্মনিরপেক্ষ জোটের সঙ্গেই।’’