নরেন্দ্র মোদী
তিনটি ‘প্রশ্ন’।
এক নম্বর: ‘‘আমি চার বছর ধরে চৌকিদারের কাজ করছি। গরিব পরিবারের। অথচ রাজনীতির জন্য আমাদের চোর বলা হচ্ছে। দেশের জওয়ানরাও নিরাপত্তা দেন, তাঁরাও চোর?’’
দু’নম্বর: ‘‘আপনি পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করেছেন। আমাদের ছাতি চওড়া করেছেন। চৌকিদারদের ইজ্জত বাড়িয়েছেন। কারও পরোয়া না করে এগিয়ে চলুন। আমরা সঙ্গে আছি।’’
তিন নম্বর: ‘‘আমিও চৌকিদার, আপনিও চৌকিদার। আমরা দু’জনেই দিনরাত মেহনত করি। কী বলবেন?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শেষের দু’টি সে ভাবে প্রশ্ন হোক না হোক, তৃতীয় ‘প্রশ্ন’ শুনে ফোনেই হেসে লুটোপুটি খেলেন প্রধানমন্ত্রী। লুফে নিয়ে বললেন, ‘‘একদম ঠিক বলেছেন, আমিও আপনার মতো চৌকিদার।’’ দেশের নানা বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে আজ অডিয়ো যোগাযোগের মাধ্যমে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। বাইশ মিনিটে ২৫ লক্ষের সঙ্গে। কিন্তু যে তিনটি ‘প্রশ্ন’ তিনি নিলেন, তাতেই লুকিয়ে আছে মোদীর কৌশল। ‘চৌকিদার’ অভিযানের সঙ্গে জুড়ে দিলেন ‘দেশভক্তি’।
রাহুলের নাম সরাসরি নেননি। কিন্তু তাঁর ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের মোকাবিলা করতেই যে মোদীর নয়া অভিযান, স্পষ্ট প্রকাশ পেল। মোদীকে করা প্রশ্নেও যেমন, তাঁর উত্তরেও। মোদী বলেন, ‘‘কিছু লোক নিজের স্বার্থের জন্য কয়েক মাস ধরে কিছু না বুঝেই গালি দিচ্ছেন। চৌকিদারকে চোর বলছেন। এর জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। চৌকিদার শব্দ দেশভক্তির সঙ্গে যুক্ত। সেনার জওয়ানও দেশের চৌকিদার। গালিকে আমি গর্বের সঙ্গে গয়না বানাই।’’
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ যা-ই থাক, ভোট প্রচারে আজ পুরোমাত্রায় পুলওয়ামা আর বায়ুসেনার সার্জিকাল স্ট্রাইক টেনে আনলেন মোদী। বললেন, ‘‘পাকিস্তানে বোমা পড়লে এখানে কিছু লোকের কষ্ট হয়। ওখানে হামলা হলে এখানে কয়েকজনের হজম হয় না।’’ এর পরেই বললেন, ‘‘কামদারদের প্রতি ঘৃণা নামদারদের স্বভাব। আমাকে সরাসরি গালি দিতে পারেন না বলে চৌকিদারদের অপমান করছেন। নানা ছুতোয় আবার করবেন।’’
‘চোর নয়’ কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘যিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নন, দেশের চৌকিদার হবেন, শুধু তাঁকেই আক্রমণ করেছেন রাহুল গাঁধী। আর একটি মিথ্যা প্রচার করে সত্য বদলাতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী। চুরি ধরা পড়ার পরই কখনও বিজেপির নেতা, কখনও চৌকিদারদের মধ্যে নিজের দায় ভাগ করে দায়মুক্ত হতে চাইছেন তিনি। যিনি রাফাল চুরি করেছেন, সেই চৌকিদারই চোর।’’
রাহুল, প্রিয়ঙ্কারা গত ক’দিন ধরে মোদীর ‘চৌকিদার’ অভিযান ভোঁতা করে দিতে চাইছেন। মোদীও তত আক্রমণাত্মক হচ্ছেন। আজ তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে প্রিয়ঙ্কা পৌঁছনোর আগেই ব্লগ লেখেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও নাম না-করে রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে আক্রমণ করেন। দেশের সংসদ, আদালত, সংবাদমাধ্যম, সেনাকে কী ভাবে পরিবারতন্ত্রের খেসারত দিতে হয়েছে, তার ফিরিস্তি দেন। বারাণসী থেকেই তার জবাব দেন প্রিয়ঙ্কা। বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে বিজেপিই লাগাতার সব প্রতিষ্ঠানে হামলা করছে। প্রধানমন্ত্রী মানুষকে বোকা ভাবা বন্ধ করুন। ক্ষমতা যখন মাথায় চড়ে, তখন দু’টি ভ্রান্ত ধারণা চেপে বসে। এক, মানুষকে বিভ্রান্ত করা। দুই, বিরোধীদের ভীতু ভাবা। তাঁরা যা খুশি করুন, যত হেনস্থা করুন, আমরা ভয় পাই না। লড়াই চলবে।’’
এত কিছুর পরেও জনসভায় রাহুল এখনও জনতার উদ্দেশে বলছেন, ‘‘চৌকিদার?’’ উত্তর আসছে, ‘‘চোর হ্যায়।’’