ইস্তাহার প্রকাশে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী ও মনমোহন সিংহ। ছবি: পিটিআই
‘আমাদের শপথ: চাকরি, চাকরি, চাকরি’।
নরেন্দ্র মোদী বছরে ২ কোটি নতুন চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। পাঁচ বছর পরে লোকসভা ভোটের মুখে সেই চাকরির অভাব এবং বেকারিকেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র করতে চাইছেন রাহুল গাঁধী। চাকরির সুযোগ তৈরি করতে তাঁর দল ক্ষমতায় এলে কী করবে, আজ কংগ্রেসের ইস্তাহারে তার রূপরেখা মিলল।
দু’দিন আগেই রাহুল জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তাঁরা ২২ লক্ষ সরকারি চাকরির পদ পূরণ করবেন। আজ কংগ্রেসের ইস্তাহার জানাল, কেন্দ্রীয় সরকারে ৪ লক্ষ পদ খালি পড়ে রয়েছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ২০২০-র মার্চের মধ্যে সব পদ পূরণ করা হবে। পাশাপাশি রাজ্যস্তরে ২০ লক্ষ শূন্য পদ পূরণের জন্যও রাজ্য সরকারগুলিকে অনুরোধ করা হবে। শূন্য পদ পূরণের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থ বণ্টনের শর্ত বেঁধে দেওয়া হবে। এর সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পুরসভাগুলিতে ১০ লক্ষ সেবা মিত্র নিয়োগ করা হবে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ তো গেল সরকারি চাকরি। বেসরকারি ক্ষেত্রে নতুন চাকরি তৈরির জন্যও ইস্তাহারে একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। তবে এ ক্ষেত্রে রাহুল গাঁধী সাবধানতার সঙ্গেই পা ফেলেছেন। ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিন বার চাকরির কথা বলে শপথ নিলেও মোদীর মতো বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়ার রাস্তায় হাঁটেননি। আবার বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ তৈরির জন্য কোনও ছক ভাঙা পথও নেননি। কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, বেসরকারি ক্ষেত্রে নতুন চাকরি তৈরি করাটা যথেষ্ট কঠিন এবং তার সবটা সরকারের হাতে নেই জেনেই কোনও সংখ্যা ঘোষণা করা হয়নি।
সরকারি পদে মোট ৩৪ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ২ কোটি রোজগার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। পুরো মিথ্যে।’’ এমনিতেই কর্মসংস্থান নিয়ে ব্যাকফুটে থাকা মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কটাক্ষ, ‘‘এর মধ্যে ২০ লক্ষ চাকরি তো রাজ্য সরকারে।’’
আইনকানুন
• রাষ্ট্রদ্রোহ আইন বা দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারা তুলে দেওয়া
• মানহানি দেওয়ানি অপরাধ
• যে সব আইনে বিচার ছাড়াই পুলিশের আটক করে রাখার ক্ষমতা রয়েছে, তা তুলে দেওয়া
• আফস্পা সংশোধন
• তদন্তকারী সংস্থার যথেচ্ছ তল্লাশি, হানা, বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতার গণ্ডি বেঁধে দেওয়া
কর্মসংস্থান
• শিল্প, পরিষেবা ও কর্মসংস্থানের জন্য নতুন মন্ত্রক
• রাজ্যগুলিকে ২০ লক্ষ পদ পূরণ করতে অনুরোধ
• সরকারি পরীক্ষায় আবেদন ফি থাকবে না
• ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র বদলে ‘মেক ফর দ্য ওয়র্ল্ড’
• অসংগঠিত ক্ষেত্রে ন্যূনতম বেতন সুনিশ্চিত করা
• কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা
সংরক্ষণকর নিয়ে
• জিএসটি-তে একটি মাত্র করের হার
• দু’বছরের মধ্যে আবাসন, পেট্রোপণ্য, তামাক ও মদ জিএসটি-র আওতায়
• খাদ্যশস্য, জীবনদায়ী ওষুধ, টিকায় শূন্য হারে
জিএসটি নিরাপত্তায়
• জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে
• চল্লিশের আগে বাহিনী থেকে অবসর নেওয়া জওয়ানদের আধাসেনায় নিয়োগ
বৈষম্য রুখতে
• ধর্ম, জাত, লিঙ্গ, ভাষার ভিত্তিতে ভেদাভেদ রুখতে
বৈষম্য প্রতিরোধ আইন
• সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষজনিত অপরাধ, গণপিটুনির মতো অপরাধ রুখতে নতুন আইন
• সমকামী-উভকামী, রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা, নতুন আইন রূপান্তরকামীদের জন্য
আধার
• আধার আইন সংশোধন
• কেবল ভর্তুকি, সরকারি ভাতা, পরিষেবার জন্য আধার
• বায়োমেট্রিক ছাড়া পরিচয় প্রমাণের অন্য পদ্ধতি
রাফাল
• রাফাল-সহ নানা চুক্তির তদন্ত যোজনা ও ব্যাঙ্ক
• ফিরবে যোজনা কমিশন
• দুই বা তার বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক মিশিয়ে মাত্র ৬ থেকে ৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক
• ব্যাঙ্ক ও আর্থিক ক্ষেত্রে জালিয়াতি, ভুয়ো লগ্নি সংস্থার কাজকর্ম রুখতে কড়া ব্যবস্থা
আরও
• লোকসভা ও বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ
• নাগরিকত্ব সংশোধন আইন প্রত্যাহার
• কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রক দফতরের সংখ্যা কমানো
ইউপিএ-সরকার ক্ষমতায় এসে গ্রামীণ ক্ষেত্রে একশো দিনের রোজগার সুনিশ্চিত করতে আইন চালু করেছিল। তৃণমূল, সিপিএম তাদের ইস্তাহারে তাকে ২০০ দিন করার কথা বলেছে। আজ রাহুলের কংগ্রেস জানিয়েছে, মনরেগা-তে ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা বাড়িয়ে ১৫০ দিন
করা হবে। ইস্তাহারে কংগ্রেসের দাবি, জলাশয় ও পতিত জমি পুনরুজ্জীবনের জন্য দু’টি মিশন প্রকল্প চালু হবে। সেখানেও ১ কোটি চাকরি হবে। যদিও কী ভাবে সেই চাকরি হবে, তার জবাব মেলেনি। মনরেগা-তে পুকুর কাটা, মাটির রাস্তা তৈরির মতো কাজ হয়। এতে স্থায়ী সম্পদ তৈরি হয় না বলে অভিযোগ ছিল। কংগ্রেস জানিয়েছে, মনরেগা-র তহবিলে এ বার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ক্লাসরুমও তৈরি হবে। মনরেগা-র শ্রম কাজে লাগবে জলাশয় এবং পতিত জমি পুনরুজ্জীবন মিশনে। বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে কি একবার খনন করা পুকুর নতুন করে খনন করা হবে?
বেসরকারি ক্ষেত্রে রোজগারের সুযোগ তৈরির জন্য রাহুল আগেই জানিয়েছিলেন, নতুন ছোট শিল্পে প্রথম ৩ বছর কোনও লাইসেন্স নিতে হবে না। শুধু মাত্র শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ও সরকারকে কর মেটালেই চলবে। রাহুলের যুক্তি, ‘‘নতুন ব্যবসা করতে গেলেও ঘুষ দিতে হয়।’’ শ্রমিকের সংখ্যার ভিত্তিতেই তৈরি হবে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংজ্ঞা। শিল্পের বৃদ্ধি, পরিষেবা ক্ষেত্রের উন্নতি এবং দ্রুত কর্মসংস্থান—এই তিনকে এক সুতোয় বাঁধতে নতুন মন্ত্রক তৈরি হবে বলে জানিয়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, যে সব শিল্প নতুন চাকরি দেবে, তাদের করের বোঝা কমিয়ে, সামাজিত দায়বদ্ধতা তহবিলে খরচের শর্ত শিথিল করা হবে। নির্দিষ্ট সংখ্যক মহিলাদের চাকরি দিলে দেওয়া হবে উৎসাহ ভাতা। চাকরির সুযোগ তৈরির জন্য রফতানি ও পর্যটন ক্ষেত্রকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে।
এখন কারখানার উৎপাদন থেকে জিডিপি-র ১৬ শতাংশ আসে। কংগ্রেসের লক্ষ্য, পাঁচ বছরে কারখানার উৎপাদনের হার ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা। মোদী ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগান দিয়ে বিদেশি সংস্থাগুলিকে এ দেশে কারখানা গড়ে বিদেশে রফতানির জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। কংগ্রেস কার্যত একই ডাক দিয়ে ‘মেক ফর ওয়ার্ল্ড’-এর স্লোগান দিয়েছে।