general-election-2019-national

মাছি ভনভন এই ঝুপড়িবাসীরাই মোদীর নিকটতম প্রতিবেশী!

সত্তর বছরের পুরনো মাছি ভনভন এই ঝুপড়িবাসীরাই (যার পোশাকি নাম বি আর ক্যাম্প) প্রধানমন্ত্রীর নিকটতম প্রতিবেশী তাহলে! 

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০২:৫০
Share:

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের অদূরে সেই বস্তি। —।জস্ব চিত্র

আক্ষরিক অর্থে ধরলে ঢিল ছোড়া দূরত্ব হয়তো নয়! কিন্তু সাত নম্বর রেসকোর্স রোড (অধুনা লোককল্যাণ মার্গ) –এর মেগা নিরাপত্তা বলয় শোভিত সিংহদ্বার থেকে হেঁটে বস্তিটিতে পৌঁছতে এই দুর্দান্ত গরমেও দশ মিনিটের বেশি লাগল না।

Advertisement

সত্তর বছরের পুরনো মাছি ভনভন এই ঝুপড়িবাসীরাই (যার পোশাকি নাম বি আর ক্যাম্প) প্রধানমন্ত্রীর নিকটতম প্রতিবেশী তাহলে!

একটি রাস্তার দু’পারের ভারতের মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য যেন! সাত রেসকোর্স রোডের উল্টোদিকের গলি দিয়ে তিনশো মিটার ঢুকলেই ১৯৪৬ সালে তৈরি হওয়া দিল্লি রেস ক্লাব। তার পাশের লাগোয়া জমিতে প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষের কায়ক্লেশে জীবনযাপন। কোথাও বাঁশ আর ত্রিপল দেওয়া ছাউনি, কোথাও টিনের শেড। অল্প সংখ্যকই ইটের বাড়ি। তারই মধ্যে ঘুপচিমতো বিড়ি সিগারেটের ঠেক রাকেশ বনসলের। ক্যাম্পের পুরনো বাসিন্দা। বলছেন, ‘‘এখানকার রেস ক্লাবের ঘোড়ারাই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে জানেন, কোনও নেতা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী নন! ওদের খাওয়ানো, ঘাসের পরিচর্যা, দেখভাল করার কাজ করেই এই বস্তির গুজরান হয়। এখন তো শুনছি, আমাদের নাকি তুলে দেবে। আমরা নাকি জবরদখলকারী। এত যুগ এখানে থাকার পর কোথায় যাব? নতুন কী কাজ করবে এখানকার মানুষ?’’ ২৩ মে-র ফলাফলের পর যিনিই তাঁদের নতুন ‘প্রতিবেশী’ হন, তাঁর কাছে এটাই আগাম আর্জি এই ক্যাম্পের। পাকাপাকি থাকার সংস্থান।

Advertisement

১৯৪০ সাল নাগাদ শিয়ালকোট থেকে দফায় দফায় মানুষ দিল্লি এসে রাজা সোয়াই মান সিংহের পরিত্যক্ত এই জমিতে নিজেদের বেঁচে থাকার লড়াই শুরু করেছিলেন। কোনওমতে মাথা গোঁজা গিয়েছিল। গোড়ায় যে সংখ্যা ছিল ছিল হাজার খানেক, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কালক্রমে এই বস্তির প্রতিবেশী হন দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী পদে বসা ব্যক্তিটি। কিন্তু প্রদীপের তলা একই রকম মাছির ভনভনেই থেকে গিয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ক্যাম্পের প্রেসিডেন্ট রমেশ কুমার অতীতে ফিরে গিয়ে বলছেন, ‘‘বিরাশি সালে ইন্দিরা গাঁধী এসে এখানে মাতা দুর্গা মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন বস্তিবাসীদের পাকা বাসস্থান করে দেওয়ার। কিন্তু তার পর আর কিছু এগোয়নি। দু’বছরের মধ্যে উনি

নিজেই চলে গেলেন।’’ রমেশ জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছরে বাড়তি উদ্বেগের কারণ, বিজেপির স্থানীয় নেতাদের পক্ষ থেকে লাগাতার উচ্ছেদের হুমকি। তারা যে ঠিক কারা, তা স্পষ্ট বলতে পারছেন না ক্যাম্পবাসীরা। বা বলতে চাইছেন না। শুধু বলছেন, ‘‘এমন নয় যে কোনও নোটিস এসেছে। কিন্তু কথাটা যেন বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের উঠে যেতে হবে।’’

বিজেপির মীনাক্ষী লেখি এখানকার সাংসদ। জানা গেল, গত পাঁচ বছরে এক দিনও তিনি আসেননি এখানকার হালচাল দেখতে। বিধায়ক দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। উভয়ের কাছেই নিজেদের পাকা বাসস্থানের আবেদন নিয়ে চিঠি গিয়েছে। কাজের কাজ হয়নি। হাই প্রোফাইল (অবস্থানগত ভাবে) এই নির্বাচনী এলাকায় মোদীর প্রকল্পগুলির অগ্রগতি কেমন? স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ছিটেফোঁটাও যে ঢোকেনি, তা মুম্বইয়ের ধারাভির মতো এখানকার গলিঘুঁজি ঘুরলেই বোঝা যাচ্ছে। জল সরবরাহের অবস্থাও যে টিমটিমে তা প্রায় হাত ধরে একটা কলের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিল হাফ প্যান্ট পরা বালক শাহাদাত। জানাল, টিমটিম করে এক বেলা জল আসা ওই কলতলাতেই অন্তত একশো পরিবারের লাইন পড়বে একটু পরেই। তার দাদা ইমতিয়াজ মজদুরি করে। পাশাপাশি ঘোড়াদের দেখভালের কাজও। বলে, ‘‘সরকার নয়, ওই ঘোড়ার ক্লাবই আমাদের মাই-বাপ। ১৯৭৬ সালে এই বস্তি ছেড়ে সবাই যখন খিচড়িপুরে জায়গা পেয়ে চলে যাচ্ছিল, তখন ওই রেস ক্লাব অর্ধেক মানুষকে প্রায় জোর করেই রেখে দেয়। সস্তায় শ্রম পাওয়ার তাগিদে। কিন্তু ওরাও এখন হাত গুটিয়ে নিয়েছে। এটা ভিআইপি এলাকা বলে ইট-সিমেন্টও ভিতরে নিয়ে আসতে পারিনা। কোনওমতে ঘর তৈরি বা মেরামতি করতে হলে রাতের বেলা লুকিয়ে নিয়ে আসতে হয়।’’

এখানকার বাসিন্দা, দিল্লির একটি বাগিচার মালি পরস রামের বয়স বছর ষাটেক। দীর্ঘদিন ঘরে দেখছেন রাস্তার এ পার আর ওপারের মধ্যে থাকা দুই ভারতকে। ভোটের কথা তুলতে বললেন, ‘‘যিনিই প্রধানমন্ত্রী হন, আমরা চাইব, তিনি পড়শিদের জ্বালাযন্ত্রণাটুকু বুঝবেন। আমাদের যেন আর উচ্ছেদের ভয়ে জীবন কাটাতে না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন