পাঁচ বছর আগে বিমল গুরুংয়ের চাপে ইস্তাহারে একটি ‘সংযোজন’ জুড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। বলা ছিল, গোর্খাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে তাদের জন্য পৃথক নিজস্ব এলাকার (সেপারেট হোমল্যান্ড) বিষয়টি খতিয়ে দেখবে দল। যা এক অর্থে পৃথক রাজ্যেরই ইঙ্গিত দেয় বলে তখন রাজনীতিবিদেরা বলেছিলেন। এ বারে এমন কোনও ইঙ্গিত নেই। বদলে রয়েছে দু’টি বিষয়। প্রথমত, গোর্খা জনজাতির মধ্যে যে ১১টি ভাগ রয়েছে, তাদের তফসিলি জনজাতি তালিকাভুক্ত করার জন্য যে বিজেপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা জানানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দার্জিলিং পাহাড়, শিলিগুড়ি তরাই এবং ডুয়ার্স অঞ্চলের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ বছর আগে গুরুং ছিলেন পাহাড়ের শেষ কথা। তাঁর ক্ষোভ সামলাতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংযোজন প্রকাশ করতে হয় বিজেপিকে। এ বারে সে গুরুংও নেই, সেই চাপও নেই। উল্টে এই দু’টি বাক্য পেয়েই ধন্য ধন্য করেছেন গুরুংয়ের এখনকার সঙ্গী রোশন গিরি। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি গোর্খাদের প্রতি সহানূভূতি দেখিয়ে ইস্তাহারে যা লিখেছে, তা সমর্থন করছি। আমাদের আশা, এনডিএ সরকার তৈরি হলে স্থায়ী সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’
অনেকেরই অবশ্য পাঁচ বছর আগের ঘটনা মনে রয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘গুরুং তখন একার ডাকে জিতিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থীকে। তাঁর রাগ হলে তো বিজেপির ব্যস্ততা বাড়বেই। পাঁচ বছর আগে সেটাই হয়েছিল।’’ এখনকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তাঁরা বলছেন, ‘‘এখন অবস্থা বদলেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুধু পাহাড় নয়, আরও বেশ কয়েকটি আসন পাওয়ার আশা করছে বিজেপি। এখন আলাদা রাজ্যের দাবিকে মর্যাদা দিতে গেলে অন্যত্র তারা সমস্যায় পড়বে।’’ রাজনীতিকদের একটি অংশ বলছে, ‘‘কিন্তু দেখুন, গুরুং প্রতিক্রিয়া দেননি এ বারে। বলিয়েছেন রোশনকে দিয়ে। সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ।’’
তবে বিমলপন্থীদের মধ্যেও এ দিন বিকেল থেকে অস্বস্তি ছড়িয়েছে। প্রকাশ্যে না বললেও বিমলপন্থী কয়েক জন জানাচ্ছেন, বিজেপিকে তিন দফায় সমর্থন করা হল। সেই দল এ বারও দাবির কথা উল্লেখ পর্যন্ত করল না। উল্টে, জিটিএ চুক্তির সময় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সরকার বা তৃণমূলের রাজ্য সরকার গোর্খাল্যান্ডের বিষয়টি মাথায় রেখেই চুক্তি হচ্ছে বলে লিখিত ভাবে জানিয়েছিল। এ বারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের অবস্থানে থেকেই পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পক্ষে জন্য বলেছেন।
বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ঘরোয়া আলোচনায় অস্বস্তির কথা জানাচ্ছেন। দলীয় সূত্রের খবর, অন্যত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে ভেবেই গোর্খাল্যান্ডের কথাটি রাখা হয়নি। বরং দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায়চৌধুরী শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা গোর্খাদের জন্য ভাবি বলেই বিমল গুরুং, মন ঘিসিং ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে আমাদের পাশে আছেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিরোধীরা অবশ্য এই ইস্তাহারের কড়া সমালোচনা করেছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌতম দেবের অভিযোগ, ‘‘২০০৯ সাল থেকে এই নিয়ে তিনবার বিজেপি ইস্তাহারে কার্যত একই কথা বলল। পুরো ভাঁওতাবাজি।’’ গোটাটাকেই ভাঁওতা, দাবি হরকাবাহাদুরেরও। তাঁর মতে, ‘‘২০০৯ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিজেপি এই সব কথা বলেছিল।’’ শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘ধান্দাবাজদের দল প্রতিবার পাহাড়বাসীকে বোকা বানাচ্ছে।’’