মোদীই ফিরুন ক্ষমতায়, চাইছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

ইমরানের মতে, ভারতের পরবর্তী সরকার যদি কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত হয়, সে ক্ষেত্রে তারা হয়তো দক্ষিণপন্থীদের প্রতিরোধের ভয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে কোনও সমঝোতায় যেতেই ভয় পাবে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০২
Share:

ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

ভোটের ‘পরীক্ষা’ শুরুর আগের দিন নরেন্দ্র মোদীর প্রশ্নপত্র কঠিন করে তুললেন ইমরান খান। এত দিন বায়ুসেনার বালাকোট-অভিযান নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেই তাঁদের ‘পাকিস্তানের বন্ধু’ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন মোদী। গত কাল একঝাঁক বিদেশি সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাক প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটে বিজেপি জিতে ফিরলে তবেই ভারত-পাক শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।

Advertisement

ইমরানের মতে, ভারতের পরবর্তী সরকার যদি কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত হয়, সে ক্ষেত্রে তারা হয়তো দক্ষিণপন্থীদের প্রতিরোধের ভয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে কোনও সমঝোতায় যেতেই ভয় পাবে। তাই পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘হয়তো দক্ষিণপন্থী দল বিজেপি ক্ষমতায় এলে কাশ্মীর নিয়ে কোনও একটা বোঝাপড়ায় পৌঁছনো যাবে।’’

নির্বাচনী ইস্তাহারে কৃষি-চাকরির চেয়ে জাতীয়তাবাদকেই প্রাধান্য দিয়েছেন মোদী। কিন্তু পাক প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রত্যাবর্তন চেয়ে বসায় অস্বস্তি বেড়েছে বিজেপির। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘প্রথমে নওয়াজ় শরিফের সঙ্গে ‘পেয়ার’, এখন ইমরান খান ‘ইয়ার’।’’ আপ নেতা অরবিন্দ কেজরীবাল লিখেছেন, ‘‘পাকিস্তানমে মচা শোরা, নরেন্দ্র মোদী ওয়ান্স মোর।’’ ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার কথায়, ‘‘মোদী সাহেব কি না বলছিলেন, শুধু পাকিস্তান ও তার সহমর্মীরাই বিজেপির হার চাইছে।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘একমাত্র ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি সেনা ঘাঁটিতে আইএসআইকে ডেকে এনেছিলেন এবং বিনা নিমন্ত্রণে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন।’’

Advertisement

আজ কোথায় কোথায় ভোট, দেখে নিন

মেহবুবা মুফতি অবশ্য বলেছেন, ‘‘ইমরান খানের মতো আমরাও আশা করতে পারি যে, ফের সুযোগ পেলে আলোচনা শুরু করবেন মোদী।’’ পিডিপি নেত্রীর যুক্তি, ২০১৫ সালে বিজেপির সঙ্গে রাজ্যে জোট সরকার গড়ার সময়ে তাঁর বাবা মুফতি মহম্মদ সইদ ভেবেছিলেন, আরএসএস-শিবসেনার সমর্থন নিয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতোই পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন মোদী। সে সুযোগ হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই তাঁকে ফের সুযোগ দেওয়ার প্রশ্ন উঠেছে।

তাৎপর্যপূর্ণ হল, মোদীর শাসনের তীব্র সমালোচনাই করেছেন ইমরান। বলেছেন, ‘‘ভারতে এখন যা হচ্ছে, তা কখনও দেখব বলে ভাবিনি। ‘মুসলিমত্ব’ বিষয়টাই আক্রান্ত।’’ পাক প্রধানমন্ত্রীর মতে, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মতোই ভয় ও জাতীয়তাবাদে ভর করে ভোটে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ-ও বলেন, পাক জঙ্গিরা সীমান্ত পেরিয়ে এসে থাকলে আখেরে কাশ্মীরিদেরই ক্ষতি। কারণ তাতে ভারতীয় সেনার ‘ধরপাকড়’ বাড়ে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কিন্তু মোদীর প্রত্যাবর্তন কেন চান ইমরান? অনেকের মতে, ইমরান কুর্সিতে বসার পরে দিল্লি ভেবেছিল, আলোচনার পথ সুগম হবে। কারণ ইমরানের দিকেই রয়েছে পাক সেনার সমর্থন। একই ভাবে, মোদীই যে-হেতু নিজের দল ও প্রশাসনের নিউক্লিয়াস, তাই হয়তো তাঁর ‘দক্ষিণপন্থী’ বিজেপি সরকারের সঙ্গে কাশ্মীর আলোচনা চালানো অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক বলে মনে করছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেসের যদিও বক্তব্য, ‘‘আইএসআই চায়, ভারতে অন্তর্কলহ থাক। এতে জঙ্গিদেরই সুবিধে হয়। কিন্তু ইমরান খান শুনে নিন, মোদী জিতবেন না। পাকিস্তানে বাজিও ফাটবে না।’’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে আজ দু’বার প্রশ্ন করা হয় ইমরানের মন্তব্য নিয়ে। দু’বারই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘নো কমেন্ট।’’

পাক সেনার দাবি, ভারতীয় বায়ুসেনা যেখানে বোমা ফেলেছিল, বালাকোটের সেই জাবা গ্রামে আজ বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে গিয়েছে তারা। ভারতের বোমায় জঙ্গলে তৈরি হওয়া গহ্বরটি দেখানোর পাশাপাশি পাহাড়ের মাথায় একটি মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। পাক সেনার মুখপাত্র আসিফ গফুর তাঁদের বলেন, ‘‘বরাবরই এমন ছিল মাদ্রাসাটি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন