ব্রাহ্মওয়াড়ার বাড়িতে যশোদাবেন। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘আপনি কলকাতা থেকে এসেছেন? কয়েক মাস আগেই তো আমি ওখানে গিয়েছিলাম।’’ ঘরে ঢুকে খাটিয়াতে বসতে বসতেই আগন্তুকের সঙ্গে নমস্কার বিনিময় শেষে হাসি মুখে কথাগুলো বললেন যশোদাবেন।
যশোদাবেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রী, হাতে ঝোলানো চামড়ার ভ্যানিটি ব্যাগটা নামিয়ে রাখলেন খাটিয়ায়। তার পর আচমকাই জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আপনাকে জল দিয়েছে?’’ উত্তরের অপেক্ষা না করে পাশে বসা ভাইপো জয়কে, ‘‘ওঁকে জল দিয়েছো?’’ বছর কুড়ির জয় ঘাড় নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলায় এ বার ফিরে তাকালেন আগন্তুকের দিকে। হেসে বললেন, ‘‘যা গরম! আপনি কিন্তু দুপুরের খাবার খেয়ে যাবেন।’’
বড্ড নিচু গলায় কথা বলেন। মাঝে মাঝে দু’একটা শব্দ ঠিকঠাক শোনাই যাচ্ছে না। ঢাকা পড়ে যাচ্ছে ওপরের বহু পুরনো ফ্যানের আওয়াজে। মুখে সর্বদাই একটা হাসি লেগে। সবিনয়ে জানানো গেল, মেহসানায় একটু আগেই সকালের জলখাবারের পর্ব মিটেছে। কাজেই... এই কথার ফাঁকেই তিনি চামড়ার ব্যাগটায় হাত ঢুকিয়ে বার করে আনলেন একটা ছোট্ট ডায়েরি। বেশ কয়েকটা উল্টে একটা নির্দিষ্ট পাতা খুলে আগন্তুকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘এই দেখুন। এর বাড়িতে গিয়েছিলাম এয়ারপোর্ট থেকে।’’ ইংরেজিতে একটা মোবাইল নম্বর। সঙ্গে গুজরাতিতে লেখা কয়েকটা শব্দ। ওঁকেই জিজ্ঞেস করলাম, কারও নাম লেখা কি? ঘাড় নেড়ে যশোদাবেন এক ভদ্রমহিলার নাম বললেন। তার পর ডায়েরিটা ফের ঢুকিয়ে রাখলেন।
এই যশোদাবেনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয় যখন, তখন তাঁর বয়স ১২। আর নরেন্দ্রর বছর ১৪। দুই পরিবারের প্রথা মেনে দু’জনে অবশ্য একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন তার বছর পাঁচেক পর, ১৯৬৮ সালে। যদিও সে সংসার বেশি দিন থাকেনি। সন্ন্যাসের টানে হিমালয়ের পথে বেরিয়ে পড়েছিলেন নরেন্দ্র। মোদীর জীবনের পরের ইতিহাস অনেকেরই জানা। কিন্তু আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে যে ঘর বাঁধার স্বপ্ন ছিল যশোদাবেনের, পরিস্থিতির ধারায় তা অন্য খাতে বইতে শুরু করেছিল।
৫০ বছর পর, যে ঘরে আমরা বসে, সেটা মাঝারি মাপের। দারিদ্রের ছাপ দেওয়ালের প্রতিটা ইঞ্চিতে। পাল্লাহীন দেওয়াল-আলমারিতে জামাকাপড় গোঁজা। ইতিউতি ঝুলছে চিপস, মশলার নানাবিধ প্যাকেট। বাইরে বসে থাকা কুকুরটা রোদ্দুর চওড়া হওয়ায় একেবারে ঘরের ভিতর এসে সেঁধিয়েছে। এ সবের মধ্যেই বসে যশোদাবেন। পরনে খয়েরি রঙের শাড়ি। পাড়ের রংটা কোনও এক কালে সোনালি ছিল কি! ঘিয়ে আঁচলটা ট্র্যাডিশনাল গুজরাতি স্টাইলে সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে আনা। দু’হাতে লাল রঙের পলার উপর পাথর বসানো। আলাদা ভাবে সরু পলাও রয়েছে। ডান হাতে লাল সুতো বাঁধা। তামাটে রঙের ফ্রেমের চশমা। কানে সোনার ছোট্ট টপ। কপালে মেরুন টিপ ঘিরে ছোট পাথরের সারি। তার ঠিক উপরেই যজ্ঞের লাল গোল তিলক— মন্দির থেকে এলেন যে। খাটিয়ায় বসে থাকা যশোদাবেনকে দেখে সাদামাটা শব্দটাও লজ্জা পাবে।
আরও পড়ুন: তিন মায়ের কান্না, ‘বিচার চাই’, রায়গঞ্জে মেরুকরণের ভোটে তৃণমূল কই?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঘণ্টাখানেক আগে পৌঁছেছিলাম ব্রাহ্মণওয়াড়ায়। প্রথমে গ্রামের পোস্ট অফিস, তার পর এক পান-দোকানির সহায়তায় খুঁজে পেয়েছিলাম অশোক মোদীর বাড়ি। মেহসানা থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার এগিয়ে মেন রাস্তা থেকে বাঁ দিকে নেমে যেতে হয় গ্রামের ভিতরে। তিন কিলোমিটার মতো গেলে ব্রাহ্মণওয়াড়া বাজার। সেখান থেকে একটু এগিয়েই অশোকদের পৈতৃক বাড়ি। এখন সেখানে তাঁর ছোট ভাই কমলেশ মোদীর পরিবার থাকে। এই বাড়িতেই জন্ম যশোদাবেনের। বিয়েও। মেহসানার উঞ্ঝায় বড় দাদা অশোকের কাছে থাকলেও, মাঝে মাঝেই বাপের বাড়িতে চলে আসেন যশোদা।
ব্রাহ্মণওয়াড়ার সেই বাড়ি।
এখন যে খাটিয়ায় যশোদা বসে আছেন, ঢোকার সময় সেখানেই জয় বসেছিলেন। ধূলিধূসরিত রাস্তা থেকে দরজার সামনে মেলা জামাকাপড়, বসে থাকা কুকুরকে পেরিয়ে ঘরের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কি অশোক মোদীর বাড়ি? জবাব এসেছিল, ‘‘হ্যাঁ। আপনি?’’ পরিচয় দিয়েছিলাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, যশোদাবেন কি এখানেই থাকেন? ঘরের একমাত্র চেয়ারটাকে এগিয়ে দিয়ে বসতে বলে জয় জানিয়েছিলেন, ‘‘পিসি তো পুজো দিতে গিয়েছে মায়ের সঙ্গে। আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।’’ এর পরেই মোবাইলে পিসিকে ধরে খবরটা দিয়েছিলেন, ‘‘কলকাতা থেকে এক জন এসেছেন। দেখা করবেন।’’ সঙ্গে গুজরাতিতে আরও অনেক কথা।
জয়ের কাছ থেকেই জানা হয়ে গিয়েছিল, তাঁর পিসি পুজোআচ্চা আর উপোসের উপরেই থাকেন। উঞ্ঝা থেকে প্রায় প্রতি দিনই চলে আসেন ব্রাহ্মণওয়াড়ায়। জয়ের মায়ের সঙ্গে মন্দিরে যান। সেখানে পুজো সেরে বাড়ি ফিরে কোনও দিন খাওয়াদাওয়া করেন, আর যে দিন উপোস থাকে, সে দিন আর... ‘‘ও ভাল কথা! পিসির সঙ্গে কিন্তু সিকিউরিটি থাকে। পলিটিক্স নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না কিন্তু! তা হলেই ওরা...’’— এ সাবধানবাণীও শুনিয়ে রেখেছিলেন জয়। যশোদার ছোট ভাই কমলেশের ছেলে এই যুবক।
আধ ঘণ্টার মধ্যে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় একটি সাদা রঙের ইন্ডিকা। সেখান থেকে নেমে সোজা আগন্তুকের সামনে ঘরের একমাত্র সৌখিন আসবাব এই খাটিয়ায় বসেছেন যশোদাবেন। আর বসতে বসতেই জিজ্ঞেস করেছেন, ‘‘কলকাতা থেকে এসেছেন?’’
মিনিট পাঁচেকও কাটেনি। তিন পুলিশকর্মী ঘরে এসে হাজির। কাঁধের ব্যাজে লেখা মেহসানা পুলিশ। এঁদের তিন জনকেই দেখেছি, ওই ইন্ডিকা থেকে নামতে। সরাসরি প্রশ্ন এল, ‘‘কোথা থেকে এসেছেন?’’ কলকাতা। ‘‘কেন?’’ এমনিই। তেমন কোনও কারণ নেই। দেখা করতে এসেছি বলতে পারেন। ‘‘দেখা তো হয়ে গিয়েছে। এ বার আসুন!’’
যশোদাবেন থামালেন পুলিশকর্মীকে, গুজরাতিতে কিছু বললেন। দু’একটা শব্দ। পুলিশকর্মীটি কিছু একটা বললেন। তার পাল্টা কিছু বলতে শোনা গেল জয় এবং তাঁর মাকে। গোটাটাই গুজরাতি। এর পর জয় কাউকে একটা ফোন করলেন। ‘বড় পাপা’ সম্বোধন করা সেই ফোন থামতেই ফের পুলিশকর্মীকে জয় কিছু বললেন। এর পর আমার দিকে তাকিয়ে জয় বললেন, ‘‘আপনি কথা বলুন। আমি বড় পাপাকে বলে দিয়েছি। শুধু কোনও পলিটিক্যাল কথা নয়।’’ বড় পাপা? জয়ের কথায়: ‘‘আমার জ্যাঠা। আপনি যাঁকে অশোক মোদী নামে চেনেন।’’ আগেই জেনেছিলাম, অশোকের দোকান আছে উঞ্ঝায়। আর এই আধ ঘণ্টায় জেনেছি, এই যে ঘরে আমরা বসে আছি, এটা যেমন থাকার জায়গা মোদী পরিবারের, তেমনই পাড়ার দোকান। তবে সব মিলিয়ে কয়েকশো টাকার মালপত্রও দোকানে আছে কি না সন্দেহ!
মন্দির থেকে পুজো দিয়ে ফিরলেন যশোদাবেন।
আপনি কলকাতা কেন গিয়েছিলেন? প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, আগে পুজোর প্রসাদ বার করে আগন্তুকের হাতে দিলেন যশোদাবেন। আর তিনি মুখ খোলার আগেই বলতে শুরু করলেন ওই পুলিশ কর্মী, ‘‘ঝাড়খণ্ড গিয়েছিলেন একটা মন্দিরে। তাই কলকাতা হয়ে গিয়েছিলেন। আপনি এ বার আসুন।’’ সরাসরি দরজা দেখিয়ে দিলেন এ বার। যশোদাবেন ওই কর্মীকে হাত দিয়ে থামিয়ে আগন্তুককে বললেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে একটা মন্দিরে যাওয়ার ছিল। এখান থেকে প্লেনে কলকাতা। তার পর শান্তির বাড়ি। সেখান থেকে সবাই মিলে গাড়ি করে ঝাড়খণ্ড। কলকাতা কিন্তু আমার বেশ ভাল লেগেছিল।’’
‘‘আপনি এখন কোথা থেকে এলেন?’’ ফের পুলিশের প্রশ্ন। জানালাম, আমদাবাদ। ‘‘যাবেন কোথায়?’’ আমদাবাদ হয়ে বদোদরা। ‘‘ফোটো আইডি কার্ড দেখান।’’ ব্যাগ থেকে বার করে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে ছবি তুলে নিলেন তিনি। পুরো ঠিকানা, বাবার নাম, কেন এসেছি— আবারও হাজার প্রশ্ন। ‘‘মোবাইল নম্বর?’’ বলা মাত্রই ফোনে রিং হল। কেটেও দিলেন।
তার মধ্যেই যশোদাবেনকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার স্কুল কি এই গ্রামেই ছিল? ‘‘না না। এখান থেকে অনেকটা দূর। বাসে করেই যেতাম। প্রাইমারি স্কুল। অনেক ছাত্রছাত্রী।’’ অবসর নিয়েছেন কবে? ‘‘তা-ও অনেক বছর হল। ২০০৯। হ্যাঁ ১০ বছর হয়ে গেছে। ৩১ বছর চাকরি করেছি। আর কত!’’ হাসিটা একটু চওড়া হল।
‘‘আপনি এখানে কেন এলেন?’’ আবার পুলিশের প্রশ্ন। বললাম যে! এমনি দেখা করতে। ‘‘দেখা তো অনেক হল। এ বার আসুন।’’ এ বারের স্বরটা হুমকির মতোই লাগল। যশোদাবেনকে কার্যত অসহায় লাগছে। কিছু বলতেও পারছেন না, আবার অস্বস্তিটাও ঢাকতে পারছেন না।
পরিস্থিতি একটু হালকা করতে যশোদাবেনকে জিজ্ঞেস করা গেল, আপনি কি মন্দিরে নিয়মিত যান? ‘‘হ্যাঁ ওটাই তো জীবনে আছে। ভগবানকে ডাকি মনপ্রাণ দিয়ে,’’—জবাব এল।
কী বলেন ভগবানকে? ভীষণ হালকা স্বরে বললেন, ‘‘সবই ওঁর জন্য।’’
‘‘আপনি কি উঠবেন?’’ পুলিশের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে যশোদাবেনের কাছে জানতে চাইলাম, ‘‘ওঁর জন্য মানে?’’ একটা নীরব চাহনি দিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। জয়ের মা একটা জলভর্তি গ্লাস যশোদার হাতে ধরালেন। আর একটা গ্লাস দিলেন আগন্তুককে, ‘‘বাইরে যা গরম, খেয়ে নিন।’’ না, সেখানেই থামলেন না। বললেন, ‘‘এই উঠোনেই তো নরেন্দ্র মোদী বিয়ে করতে এসেছিলেন। তখন যশোদাবেনের বয়স আর কত! সে সব কি আজকের কথা! ওঁর জন্যেই এ সব করে।’’ যশোদা কেমন ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে। তবে হাসিটা মুছে যায়নি একেবারেই।
এত ক্ষণ খাটিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ওঁরা। এক জন পুলিশকর্মী এ বার এগিয়ে একদম কাছে এসে বললেন, ‘‘উঠুন। নেহি তো দিক্কত হো যায়েগা।’’
আপনি উপোস করেন কেন? ‘‘সেকি আজ থেকে! কত্ত বছর হয়ে গেল। সপ্তাহে পাঁচ দিন উপোস থাকি। দু’দিন দু’বেলা খাই। বাকি দিনগুলো এক বেলা।’’ কেন? এই বয়সে এত উপোস সহ্য হবে? হাসি-সহ জবাব এল, ‘‘কাটিয়ে তো দিলাম।’’
এ বার মোবাইল বার করলেন ওই পুলিশকর্মী। তাক করলেন আমার দিকে। উঠল ফোটো। ছবি তুলছেন কেন? কোনও জবাব নেই। দরজার বাইরে আঙুল দেখিয়ে বলা হল, ‘‘আসুন। অনেক দেখা হয়েছে।’’ আর বসা যাবে না মনে হচ্ছে। চেয়ার থেকে উঠতে উঠতেই প্রশ্নটা করলাম। ভোট দেবেন তো? প্রায় তেড়ে এল পুলিশ। ‘‘আপকো মানা কিয়া না, অ্যায়সা কোয়েশ্চেন মত পুছো। চলো বহত হো গয়া।’’
জয় মোদী। যশোদাবেনের ছোট ভাইয়ের ছেলে। ব্রাহ্মণওয়াড়াতেই থাকেন।
নমস্কার করে বেরতে যাব। নাম ধরেই ডাকলেন যশোদাবেন। ব্যাগ থেকে তত ক্ষণে বেরিয়ে পড়েছে একটা ৫০ টাকার নোট। বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘দুপুরে তো কিছু খেলেন না। যাওয়ার সময় বাজার থেকে একটু আখের রস খেয়ে যাবেন।’’ ধন্যবাদের সঙ্গে সবিনয়ে জানানো গেল, প্রয়োজন নেই। তার মধ্যেই তিনি জয়ের হাতে টাকাটা দিয়ে বললেন, ‘‘জয় যাও তো। ওঁকে একটু আখের রস খাইয়ে দাও।’’ নমস্কার করে বেরনোর সময় পুলিশ কর্মীটি এমন ভাবে তাকালেন, যেন ভিতর পর্যন্ত পড়ে ফেলবেন! ওঁকেও একটা নমস্কার করলাম। না, কোনও প্রত্যুত্তর এল না।
আখের রসের গ্লাস ১০ টাকা। বাকি ৪০ টাকা জয় বুক পকেটে ঢোকাতে ঢোকাতে বললেন, ‘‘শুধু সর্ব ক্ষণের পুলিশই আছে। আর কিছু নেই। পিসিকে কেমন দেখলেন?’’
হাসি ছাড়া জয়কে আর কি-ই বা জানানো যেত!
গাড়ি মেহসানা ঢুকছে। ফোন বেজে উঠল। ধরতেই সেই পুলিশ কর্মীর গলা, ‘‘আপনি মেহসানা ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন?’’ একটু ভেবেই বললাম, “হ্যাঁ।” ফোন কেটে গেল।
ছবি: প্রতিবেদক।