সকাল থেকেই রাজধানী দিল্লিতে একটি রসিকতা চলছে মুখে মুখে। সব চ্যানেলেরই তো বুথফেরত সমীক্ষা এল, ‘নমো টিভি’রটা তো এল না?
কিন্তু বিকাল গড়াতে হঠাৎই নজরে এল, রহস্যজনক ভাবে টেলিভিশনের পর্দা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে ‘নমো টিভি’।
‘নমো টিভি’— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নাম-পদবির আদ্যক্ষর নিয়ে তৈরি চ্যানেল। ভোটের ক’দিন আগে হঠাৎই এর আবির্ভাব হয়। বিজেপি দফতরে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, ১৭ মে থেকেই এই চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গিয়েছে, যে দিন ছিল ভোট প্রচারের শেষ দিন।
প্রধানমন্ত্রী আজ দিল্লিতেই ছিলেন। কিন্তু সারা দিনে তিনি কী করছেন, সে বিষয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে বিজেপি। শুধু বলছে, ‘‘ভোট ফলের পরেই জানা যাবে, প্রধানমন্ত্রী এখন কী করছেন? তিনি নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকার পাত্র নন।’’
তবে বিজেপির এক সূত্রের মতে, পরের সরকারের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকি মাসের শেষ রবিবার ২৬ তারিখ রেডিয়োতে ফের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুরু করারও তোড়জোড় করছেন তিনি।
কিন্তু গত কাল শেষ দফার ভোটের পর বুথ ফেরত সমীক্ষা নিয়েই সকলের নজর ছিল টেলিভিশনের পর্দায়। ‘নমো-টিভি’ নিয়ে তেমন নজর কারও ছিল না। তবে ভোটের প্রচার শেষ হওয়ার সঙ্গে এই চ্যানেল বন্ধ করার ঘটনায় বিরোধীরা বলছে, এখন প্রমাণ হল নিছক মোদীর প্রচারের জন্যই এই চ্যানেল ব্যবহার করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এই চ্যানেল চালানোর খরচ কেন বিজেপির খাতে যাবে না?
ভোটের মধ্যেই ‘নমো টিভি’ বন্ধ করার দাবি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি। তাদের চাপের মুখে কমিশনও দিল্লির মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েছিলেন গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। এরই মধ্যে খোদ মোদী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানায়, এই চ্যানেল শুরুর আগে কোনও অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। যে কারণে চ্যানেলের মালিকানা নিয়েও সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই।
কমিশনের পক্ষ থেকে এই চ্যানেলের প্রচারের বিষয়বস্তু আগেভাগে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটের সময় চ্যানেলটি প্রধানমন্ত্রী কিংবা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। বিজেপির পক্ষ থেকে তখন যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, যখন অন্য টেলিভিশন চ্যানেল প্রধানমন্ত্রীর সভা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারে, তা হলে ‘নমো টিভি’ই বা পারবে না কেন? এই নিয়ে বিস্তর জলঘোলার মধ্যে চ্যানেলটি বহাল তবিয়তে চলতে থাকে। ভোট প্রচার শেষ হতেই তা বন্ধ হয়ে গেল।