ধর্ষিত বালিকার উল্লেখও নেই, কাঠুয়াতে শুধু দেশভক্তি ছড়ালেন মোদী

জম্মুর বিরোধী রাজনীতিকদের মতে, ওই ঘটনার ফলে জম্মুতে মেরুকরণ হয়েছে। জম্মুর হিন্দুদের বড় অংশের ধারণা, মুসলিম মেষপালক সম্প্রদায়ের বালিকার ধর্ষণ-খুনে যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কাঠুয়া শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২৪
Share:

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

কাঠুয়া। জম্মুর এই এলাকায় মেষপালক সম্প্রদায়ের এক বালিকার গণধর্ষণ ও খুন নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। বিজেপি নেতারা ঘটনায় অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়ানোয় বিপাকে পড়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দল। আজ সেই কাঠুয়াতেই জনসভা করলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেখানে তাঁর মুখে শোনা গেল সেই দেশভক্তি, পাকিস্তান, কাশ্মীরের কথাই। ‘বেটি বঁচাও, বেটি পড়াও’ নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রীর হয়তো মনেই পড়ল না সেই বালিকার কথা।

Advertisement

জম্মুর বিরোধী রাজনীতিকদের মতে, ওই ঘটনার ফলে জম্মুতে মেরুকরণ হয়েছে। জম্মুর হিন্দুদের বড় অংশের ধারণা, মুসলিম মেষপালক সম্প্রদায়ের বালিকার ধর্ষণ-খুনে যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। মোদী সেই মেরুকরণেই হাওয়া দিতে চান। ফলে বালিকার কথা উল্লেখই করেননি তিনি। কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, এ থেকেই বোঝা যায় মোদী মহিলা সুরক্ষা নিয়ে কতটা দায়িত্বশীল।

আজ কাঠুয়ার সভায় দাঁড়িয়ে ফের বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান নিয়ে সরব হয়েছেন মোদী। সেইসঙ্গে বিঁধেছেন কংগ্রেস এবং কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স-পিডিপিকে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আজ জম্মুর কাঠুয়ার জনসভায় মোদী বলেন, ‘‘পাকিস্তান ও তাদের সহযোগীরা আমাদের অনেক দিন ধরে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু বায়ুসেনার অভিযানের পরে বোঝা গিয়েছে সেই হুমকি অসার। ভারত আর ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসবে না। এ এক নতুন ভারত। এ দেশের বাহিনী প্রয়োজনে সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিদের ঘাঁটিতে অভিযান চালাবে।’’

সেনা অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ফের কংগ্রেসকে বিঁধেছেন মোদী। তাঁর দাবি, ‘‘কংগ্রেস কখনওই সামরিক বাহিনীকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর অভিযানের অনুমতিও দেয়নি। উল্টে নিজেদের আয় বাড়াতে বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। বফর্স আর হেলিকপ্টার কাণ্ডই তার প্রমাণ। কংগ্রেস আর তার মিত্রদের কাছে রাজনীতি দেশের নিরাপত্তার ঊর্ধ্বে।’’ প্রায় একই সুরে বেঙ্গালুরুতে এক অনুষ্ঠানে নির্মলা সীতারামনের প্রশ্ন ‘‘আমরা বাহিনীকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু মুম্বই হামলার পরে মনমোহন সিংহ সরকারের দুর্বল প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে পুলওয়ামার পরে মোদী সরকারের কড়া পদক্ষেপের তুলনা করা কি অন্যায়?’’ মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় কমল নাথের জবাব, ‘‘জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গাঁধী যখন সামরিক বাহিনীকে গড়ে তুলছিলেন তখন মোদী পাজামা পরতেও শেখেননি।’’

জম্মু-কাশ্মীরে ‘স্বায়ত্তশাসন’-এর প্রতিশ্রুতি নিয়ে আজ আবদুল্লা ও মুফতি পরিবারকে এক হাত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা লোপ নিয়ে যে তারা নিজেদের অবস্থানে অনড় তা নির্বাচনী ইস্তাহারে জানিয়েছে বিজেপি। এর পরে সুর চড়ায় কাশ্মীরের দলগুলিও। এমনকি জম্মু-কাশ্মীরে স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে আলাদা সদর-ই-রিয়াসত (রাষ্ট্রপতি) ও উজির-ই-আজম (প্রধানমন্ত্রী) পদ ফেরানোর চেষ্টা করবেন বলে দাবি করেছেন ওমর আবদুল্লা।

আজ কাঠুয়ার সভায় মোদী বলেন, ‘‘এক দেশে দুই প্রধানমন্ত্রী, দুই পতাকা ও দুই সংবিধান থাকতে পারে না। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছিলেন তা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘গোটা আবদুল্লা-মুফতি পরিবার পথে নেমে মোদীকে গালিগালাজ করতে পারে। কিন্তু আমি দেশ ভাগ হতে দেব না।’’

ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিবারগুলিকে নিশানা করার পরে কেন মোদীজির দল ফের তাদের সঙ্গেই হাত মেলাতে চায়। তখন কেন ৩৭০ ধারার চেয়ে ক্ষমতাকেই বেশি গুরুত্ব দেয় বিজেপি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন