প্রচার: উত্তরপ্রদেশের কৌশাম্বীতে নরেন্দ্র মোদী। বুধবার। ছবি: পিটিআই
নালিশ জমা পড়েছে দশটি। এক মাসে ফয়সালা হল শুধু দু’টির। আর দু’টিতেই ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার প্রসঙ্গ তুলে ভোট চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কমিশন জানিয়েছে, তারা দোষের কিছু দেখতে পায়নি। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েই এ বারে খড়্গহস্ত হয়েছে কংগ্রেস। শুধু তাই নয়, আজ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরও দু’টি নতুন অভিযোগ কমিশনের কাছে জানিয়ে এল রাহুল গাঁধীর দল।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভোট-বিধি ভঙ্গের দশটি ‘গুরুতর’ অভিযোগ কমিশনকে জানায় কংগ্রেস। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ, মায়াবতীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলেও টানা এক মাস মোদী-শাহের বিরুদ্ধে নালিশগুলি নিয়ে বসে থাকে কমিশন। অবশেষে কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরে কমিশন গত কাল রাতে একটি অভিযোগের নিষ্পত্তি করে। ১ এপ্রিল মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আদর্শ আচরণবিধি ভাঙেননি বলে জানিয়ে দেয় কমিশন। এর পরে বুধবার রাতে দ্বিতীয় ‘গুরুতর’ অভিযোগেও ছাড় দেওয়া হয়েছে মোদীকে।
আজ সকালেই কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘আচরণ-বিধি ভঙ্গের পরেও প্রধানমন্ত্রীকে ছাড় দেওয়া হল! স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ভোট-বিধি আদপে মোদী-বিধিতে পরিণত হয়েছে। মোদীর জন্য এক রকম, বাকি সকলের জন্য অন্য— দেশে দু’ধরনের আইন থাকতে পারে না।’’ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও বলেন, ‘‘৩০ দিনে একটি অভিযোগের নিষ্পত্তি হল। এই গতিতে বাকি ন’টির জন্য আরও ২৭০ দিন লাগবে। কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টে না গেলে প্রথমটিও হত না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শুধু মোদী নন, বিজেপির অন্য নেতাদের প্রতি কমিশনের সদয় হওয়া নিয়েও সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, গিরিরাজ সিংহ কিংবা গুজরাতের বিজেপি সভাপতি জিতু বঘানীর বিরুদ্ধে কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছেন সেখানে ভোট হয়ে যাওয়ার পরে। বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, ‘‘কমিশনের কাছে আমরা রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে ভোট বিধি ভঙ্গের অভিযোগ জমা দিয়েছি। কমিশন এখনও পর্যন্ত সে বিষয়ে কিছু জানায়নি। ফলে কংগ্রেসের একতরফা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
কিন্তু এ সবের মধ্যেই কংগ্রেস আজ আরও দুটি নালিশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জানিয়ে এসেছে কমিশনে। প্রথমটি হল, প্রধানমন্ত্রী যেখানে সভা করতে যাচ্ছেন, তার ২-৩ দিন আগে সে এলাকার জেলাশাসককে চিঠি পাঠাচ্ছে নীতি আয়োগ। এক দিনের মধ্যে জানতে চাওয়া হচ্ছে, সেই এলাকার ঐতিহাসিক তাৎপর্য, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের কথা। অথচ প্রধানমন্ত্রী এক জন প্রার্থী ও প্রচারক হয়ে ভোটের সময় সরকারের কোনও সংস্থাকে ব্যবহার করতে পারেন না। অতীতে ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ উঠেছিল। সুপ্রিম কোর্টেরও রায় রয়েছে এই বিষয়ে।
দ্বিতীয় অভিযোগে কংগ্রেস বলে, আগামী ৬ মে পঞ্চম দফার ভোট। অথচ সে দিনই মধ্যপ্রদেশের যে এলাকায় ভোট, তার পাশেই বড় জনসভা করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবে ভোটের দিন আশেপাশে সভা করলেও সেখানকার ভোটারদের প্রভাবিত করা সম্ভব। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ভোট-বিধি ভঙ্গের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সময় নিচ্ছে কমিশন। আশা করি, ভবিষ্যতে যাতে তিনি বিধি লঙ্ঘন করতে না পারেন, সে বিষয়ে পদক্ষেপ করবে তারা।’’