ছবি: সংগৃহীত।
নাথুরাম গডসেকে স্বাধীন ভারতের প্রথম ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদী’ বলে বিজেপির আক্রমণের মুখে পড়লেন কমল হাসন। রবিবার রাতে তামিলনাড়ুর আরাভাকুরিচিতে একটি জনসভায় হাসন বলেন, ‘‘স্বাধীন ভারতের প্রথম সন্ত্রাসবাদী এক জন হিন্দু। তিনি মোহনদাস কর্মচন্দ্র গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে। তাঁকে দিয়েই (সন্ত্রাসবাদ) শুরু হয়েছিল।’’
হাসনের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। তাঁকে পাঁচ দিনের জন্য নিষিদ্ধ করার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে দলটি।
১৯ মে তামিলনাড়ুর চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। তার মধ্যে রয়েছে আরাভাকুরুচি। রবিবার তাঁর দল মাক্কাল নিধি মইয়াম-এর প্রার্থী এস মোহনরাজের সমর্থনে প্রচারে গিয়েছিলেন হাসন। সেখানেই হিন্দু সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির রোষের মুখে পড়েছেন তিনি। তামিল অভিনেতা আরও বলেছেন, ‘‘আমি গাঁধী হত্যার জবাব চাইতে এসেছি এখানে। প্রকৃত ভারতীয়েরা জাতীয় পতাকায় তিন রঙের সমান গুরুত্ব চান। আমি এক জন প্রকৃত ভারতীয়।’’ বিজেপির অভিযোগ, আরাভাকুরুচি মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই তাই সেখানে গিয়ে ‘হিন্দু-বিরোধী’ মন্তব্য করেছেন হাসন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যদিও বিরোধী শিবিরের দাবি, লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ুতে ভাল ফলের আশা করছে বিজেপি। ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে সে রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী তাস খেলছে গেরুয়া শিবির। তাই ‘হিন্দু-দরদি’ ভাবমূর্তি প্রমাণে হাসনকে বিঁধে সঙ্গে সঙ্গে আসরে নেমে পড়েছে তারা। চলতি লোকসভা নির্বাচনের শুরু থেকেই বারে বারে উস্কে উঠেছে ‘হিন্দু-সন্ত্রাস’ প্রসঙ্গ। কখনও বিজেপি নেতারা বলেছেন, হিন্দুরা কোনও দিন সন্ত্রাসবাদী হতেই পারেন না। আবার কখনও সীতারাম ইয়েচুরির মতো বাম নেতারা বলেছেন, হিন্দুরা হিংস্র ও যুদ্ধবাজ। যার প্রমাণ রামায়ন, মহাভারত। বিশেষত, মালেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্ত সাধ্বী প্রজ্ঞার মতো প্রার্থীকে বিজেপি টিকিট দেওয়ার পর থেকে আক্রমণের তেজ আরও বাড়িয়েছেন বিরোধীরা। আজ হাসনের পাশে দাঁড়িয়ে আরও এক কাঠি এগিয়ে তামিলনাড়ুর কংগ্রেস সভাপতি কেএস আলাগিরি বলেছেন, আরএসএস-এর সঙ্গে যোগ রয়েছে আইএসের। আলাগিরির কথায়, ‘‘হাসনের মন্তব্য একশো শতাংশ নয়, হাজার শতাংশ সমর্থন করি। ইসলাম নিয়ে আইএস যা করে, হিন্দুত্ব নিয়ে আরএসএস তাই করে। যাদের সঙ্গে মতের মিল নেই, তাদেরই শেষ করে দিতে চায় সঙ্ঘ, হিন্দু মহাসভা।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
হাসনের সমালোচনা করে তামিলনাড়ুর বিজেপি নেতা তামিলিসাই সৌন্দরারাজন বলেছেন, ‘‘সংখ্যালঘু এলাকায় গিয়ে হাসন এমন মন্তব্য করেছেন, যাতে গোষ্ঠীসংঘর্ষ লেগে যেতে পারে। ভেবেছিলাম উনি নতুন ধারার রাজনীতি করবেন। কিন্তু উনি সেই পুরনো, বিষাক্ত বিভেদের রাজনীতিই করছেন।’’
আসরে নেমে এ দিন ২০১৩ সালের এক বিতর্ককে টেনে এনেছেন বিরোধীরা। তাদের দাবি, সে সময়ে কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন হাসনের ছবি ‘বিশ্বরূপম’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি তোলায় দেশ ছাড়ার হুমকি দিয়েছিলেন অভিনেতা। আর এখন তিনিই নিজেকে প্রকৃত ভারতীয়
বলে দাবি করছেন! শ্রীলঙ্কায় বিস্ফোরণের পরে কেন মুখ খোলেননি হাসন সেই প্রশ্নও তুলেছে তারা। অভিনেতা বিবেক ওবেরয় টুইট করেছেন, ‘‘আপনি বলতে পারতেন গডসে একজন সন্ত্রাসবাদী। আপনি ‘হিন্দু’ উল্লেখ করলেন কেন?
কারণ আপনি মুসলিম এলাকায় ভোট চাইতে গিয়েছিলেন।’’ এডিএমকে নেতা কেটি রাজেন্দ্র বালাজি আবার বলেন, ‘‘হাসনের জিভ কেটে নেওয়া উচিৎ। বিশেষ এক জনের জন্য একটা গোটা জাতিকে দোষারোপ করেছেন উনি।