চাকরি নেই, ‘দেশভক্তি’তে ভরসা রাখল বিজেপির ইস্তাহার

কংগ্রেস বলছে, তাদের ‘ন্যায়’ প্রকল্পের মোকাবিলায় দেশের সমস্ত কৃষককে বছরে ছ’হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিজেপি দিলেও, চাকরি বা বেরোজগারি দূরীকরণ, কৃষি ক্ষেত্রের উন্নতির সার্বিক কোনও দিশা চোখে পড়েনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০০
Share:

খোশমেজাজে: বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। সোমবার। এপি

বেকারত্ব বা কৃষি-সঙ্কটের মোকাবিলা নয়— ইস্তাহার বলছে, দেশভক্তির জিগিরেই এ-যাত্রা লোকসভা বৈতরণী পার হওয়ার কৌশল নিলেন নরেন্দ্র মোদী। গত সপ্তাহে প্রকাশ হওয়া কংগ্রেসের ইস্তাহারে তিনটি অগ্রাধিকার ছিল— রোজগার, কৃষি সমস্যা এবং পরিকাঠামো উন্নয়ন। সেখানে আজ বিজেপির ইস্তাহার দেখে বিরোধীরা বলছেন, বেকারত্ব ও কৃষি সঙ্কটের মতো জ্বলন্ত সমস্যাকে সরিয়ে রেখে জাতীয়তাবাদের আবেগেই ভরসা রাখতে চাইছেন মোদী-অমিত শাহেরা।

Advertisement

রোজগারের অধিকার বা ‘ন্যায়’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি ছিল, সরকারে এলে দেশের সব চেয়ে গরিব ২০ শতাংশ পরিবারকে বছরে ৭২ হাজার টাকা দেওয়া হবে। কংগ্রেসের ওই প্রতিশ্রুতির মোকাবিলা বিজেপি কী ভাবে করে, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। ইস্তাহার প্রকাশে বিজেপির দেরি দেখে কংগ্রেস নেতারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন, তা হলে কি ‘ন্যায়’-এর জবাব দিতে নতুন করে ইস্তাহার লিখতে বসেছে বিজেপি! কিন্তু আজ দেখা গেল চেনা ছকেই এগিয়েছে বিজেপি। দেশভক্তির আবেগকে উস্কে দিতে ইস্তাহারের একেবারে শুরুতেই জাতীয়তাবাদের বিষয়টি রেখেছেন মোদী।

এমনকি ইস্তাহার কমিটির চেয়ারম্যান রাজনাথ সিংহ নিজের বক্তৃতাতেও প্রথমে জাতীয় সুরক্ষা, তার পর রামমন্দির এবং সবার শেষে কৃষকদের উন্নয়নদের ফিরিস্তি পেশ করেন। অরুণ জেটলিও বক্তৃতার শুরুতে জানিয়ে দেন, জাতীয়তাবাদী মনোভাব থেকেই ওই ইস্তাহার তৈরি হয়েছে। এর পরে রাহুল গাঁধীকে কটাক্ষ করে জেটলি বলেন, ‘‘কোনও ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ এই ইস্তাহার বানায়নি।’’ কংগ্রেস শিবিরের ঠেস, গত পাঁচ বছরে মোদীর কাজের নির্যাস হল সার্জিকাল স্ট্রাইক। তাই চাকরি, স্বাস্থ্য বা কৃষির মতো মৌলিক সমস্যাকে কার্যত দূরে রেখে মোদী চাইছেন ভোট হোক জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে। তাই দলীয় প্রচার বা ইস্তাহারে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলতে মরিয়া মোদী-শাহেরা। কংগ্রেসের অভিযোগ— মোদী নিজেও তাতে মজে রয়েছেন, চাইছেন গোটা দেশ তাতে মজে থাকুক।

Advertisement

কংগ্রেস বলছে, তাদের ‘ন্যায়’ প্রকল্পের মোকাবিলায় দেশের সমস্ত কৃষককে বছরে ছ’হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিজেপি দিলেও, চাকরি বা বেরোজগারি দূরীকরণ, কৃষি ক্ষেত্রের উন্নতির সার্বিক কোনও দিশা চোখে পড়েনি। উল্টে স্বাধীনতার একশো বছর পূর্তিতে কী হতে পারে তার স্বপ্ন ফেরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কথায়, ‘‘আমি আশা করছি ২০৪৭ সালে ভারত উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে উন্নীত হবে।’’

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিজেপির দাবি, আগামী পাঁচ বছরের উন্নয়ন দেশকে সেই নিশানায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের কথায়, ‘‘সে কারণে স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে ২০২২ সালের মধ্যে ৭৫টি সঙ্কল্প বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা নিয়েছে দল।’’ কংগ্রেসের বক্তব্য, গত বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বছরে দু’কোটি চাকরি, কালো টাকা ফেরানোর মতো কোনও ‘জুমলা’ রাখেনি ঠিকই বিজেপি। কিন্তু চাষিদের ছ’হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এক দিকে যেমন ঘোষিত প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো ছাড়া কিছু নয়, তেমনি স্বচ্ছ ভারত, শৌচাগার নির্মাণ, গঙ্গা সাফাইয়ের মতো পুরনো প্রকল্পগুলিই ইস্তাহারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। হিন্দুত্বের তাস খেলতে ইস্তাহারে জায়গা পেয়েছে রামমন্দির নির্মাণ, শবরীমালায় স্থানীয় আস্থাকে আইনি রক্ষাকবচ দেওয়া, জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের মতো বিষয়গুলি। পরিকল্পিত ভাবে ভোটের আগে উস্কে দিতে চাওয়া হয়েছে মেরুকরণের রাজনীতি। কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও কেন পাঁচ বছরে মোদী সরকার ওই বিষয়গুলির সমাধানে ব্যর্থ হল, সেই জবাব এড়িয়ে যাচ্ছেন সব বিজেপি নেতাই।

বিজেপির দাবি, সব শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখেই ইস্তাহার তৈরি হয়েছে। কৃষকদের কথা ভেবে বার্ষিক সাহায্যের সঙ্গে পেনশন প্রকল্পের ঘোষিত হয়েছে। যদিও কৃষক সংগঠনগুলির দাবি, ওই ঘোষণা পাঁচ বছর আগেই করেছিল সরকার। বাস্তবায়িত হয়নি। স্বীকার না করলেও জিএসটিতে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ব্যবসায়ীদের মন রাখতে ঘোষণা হয়েছে পেনশনের। চাকরির স্পষ্ট আশ্বাস না থাকলেও, অরুণ জেটলির দাবি— পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নি করা হবে। যার মধ্যে ২৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে কৃষি ক্ষেত্রে। এতে সব স্তরে চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। উচ্চ শিক্ষায় ১ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ৫০ শতাংশ আসন বাড়নোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে আইন, ম্যানেজমেন্ট, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে।

সরকারের পাঁচ বছরের ১২৫টি ব্যর্থতাকে তুলে ধরে আক্রমণে নামে ‌কংগ্রেস। আহমেদ পটল বলেন, ‘‘পাঁচ বছরে দশ কোটি চাকরি হওয়ার কথা বলছে। অথচ এনএসএসও-র সমীক্ষা বলছে, কাজ হারিয়েছেন ৪.৭০ কোটি মানুষ। ফসলের দাম পাননি কৃষকেরা। জিএসটি-নোট বাতিলে ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। বিদেশেই পড়ে কালো টাকা। দুর্নীতি প্রশ্নে মোদী নিরুত্তর। পেট্রোপণ্যের দাম কমা ও ডলারের তুলনায় টাকার দাম বাড়ার কথা ছিল। হয়েছে উল্টোটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন