হাট্টা কাংজেইবুঙের জনসভায় রাহুল গাঁধী।—ছবি এএফপি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গেরুয়াকরণ নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানালেন রাহুল গাঁধী। বললেন, দেশের যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন উপাচার্য হওয়ার যোগ্যতামান হল, ওই ব্যক্তি রোজ সকালে উঠে খাকি হাফপ্যান্ট পরে, লাঠি হাতে ঘৃণার প্রচার চালাতে পারেন কি না! বুধবার মণিপুরের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
অরুণাচলে ছিল চিন আর দেশপ্রেমের টোটকা। আজ মণিপুরে আফস্পা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন আর নাগরিকত্ব নিয়ে কথা বললেন রাহুল। ইম্ফলে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মত বিনিময়ে এবং হাট্টা কাংজেইবুঙে জনসভা— দুই জায়গাতেই রাহুল মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত উপাচার্য আদ্যাপ্রসাদ পান্ডে ও তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনকে নিজের ভাষণে প্রধান হাতিয়ার করলেন। তাঁর মতে, আরএসএসের প্রচারক হওয়াই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হওয়ার যোগ্যতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণ ও সমাজে মেরুকরণ আনছে আরএসএস-বিজেপি। পান্ডেকে সরানোর জন্য আন্দোলন করায় রাজ্যের ছাত্রছাত্রী-শিক্ষকদের অভিনন্দন জানান রাহুল।
‘হত্যায় অভিযুক্ত’ অমিত শাহ এবং ‘চোর চৌকিদার’ নরেন্দ্র মোদীর তীব্র সমালোচনা করে রাহুল বলেন, মণিপুর তথা উত্তর-পূর্বে নাগপুরের আদর্শ ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি। কংগ্রেস তা হতে দেবে না। কংগ্রেস রাজ্যের ৭টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আফস্পা সরিয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল রুখেছে। ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস ওই বিল আনবে না, মণিপুরবাসীকে ফিরিয়ে দেবে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা, উত্তর-পূর্বে ফেরানো হবে আগেকার শিল্প-বিনিয়োগ নীতি। গব্বর সিংহ ট্যাক্সের বদলে সরল ও এক হারের করপ্রথা ও ন্যূনতম আয়ের গ্যারান্টি আনবে। দেবে মত প্রকাশের অধিকার। মণিপুরকে ভারত ও এশিয়ার বাণিজ্য ও উন্নয়নের মধ্যে সেতু হিসেবে গড়ে তুলবে কংগ্রেস।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাহুল বলেন, মোদীর ভিতরে সব সময় ক্রোধ কাজ করে। বিরুদ্ধ কণ্ঠকে দাবিয়ে রাখা প্রধানমন্ত্রী শুধু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, সিবিআই প্রধানকে দমিয়েই থামেননি, তাঁর চাপে বাধ্য হয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও মানুষের দরবারে এসে ন্যায় বিচার চাইতে বাধ্য হচ্ছেন। আত্মপ্রচার ও আত্মবিজ্ঞাপনে তাঁর ধারেকাছে আসতে পারেন একমাত্র বাবা রামদেব। রাহুলের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পিএমও এখন প্রচার মন্ত্রকের অফিসে পরিণত হয়েছে।
মণিপুরের ছাত্রছাত্রীরা রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল দশার কথা তুলে ধরেন। রাহুলের দাবি, নীরব মোদী, অনিল অম্বানী, মেহুল চোক্সীদের মতো ব্যবসায়ীদের লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে, ৫২৬ কোটির রাফালে বিমান ১৬০০ কোটিতে কিনে দেশবাসীর টাকা নয়ছয় করছেন মোদী। তার সামান্য অংশ পেলেই মণিপুরে শিক্ষাব্যবস্থার চেহারা বদলে যেত। ছাত্রছাত্রীদের রাহুল বলে দেন, ‘স্যর’ নয়, রাহুল বলে সম্বোধন করতে। জুডো, সাঁতার, দৌড়ের ফিটনেস মন্ত্র ভাগ করে নিয়ে বলেন, ‘‘তরুণদের রাজনীতি থেকে দূরে থেকে নিন্দা করলে চলবে না। নিজেদের অংশ নিয়ে স্বচ্ছ, নির্মল, দুর্নীতিহীন রাজনৈতিক পরিবেশ গড়তে হবে।’’
ত্রিপুরাতেও জনসভা ছিল রাহুলের। বিভিন্ন জেলা থেকে আদিবাসীরা এসেছিলেন। ত্রিপুরা স্বশাসিত জেলা পরিষদের মুখ্য কার্যালয় এলাকার খুম্পুই স্কুল মাঠে রাহুল বলেন, ‘‘কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে আদিবাসীদের জমি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’