মাওবাদী ছায়া, ভোটে দ্বিধাগ্রস্ত পলামুর গ্রাম

ভোট তো চলে এলো! দেশের সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উস্কে দিতেই জটলা নড়েচড়ে স্থির হল। একজন একটু ভেবে বললেন, ‘‘ভোট দেব কিনা ভেবে দেখব। গেলে যদি বিপদে পড়ি!’’

Advertisement

আর্যভট্ট খান

লাতেহার শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫২
Share:

ভোট থেকে দূরে কাটিয়া আমোয়াটোলি। নিজস্ব চিত্র

লাতেহারের জঙ্গল ঘেরা গ্রাম কাটিয়া আমোয়াটোলি। খোড়ো ছাউনির নীচে বসে কয়েকজন গ্রামবাসী। পাশেই ছোট্ট চায়ের দোকান। কাঠের উনুনে ভাজা হচ্ছে ছোট ছোট দেহাতি পকোড়া, সিঙ্গারা।

Advertisement

ভোট তো চলে এলো! দেশের সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উস্কে দিতেই জটলা নড়েচড়ে স্থির হল। একজন একটু ভেবে বললেন, ‘‘ভোট দেব কিনা ভেবে দেখব। গেলে যদি বিপদে পড়ি!’’ অন্যরা ঘাড় নাড়লেন। প্রতিবার ‘তাদের’ কাছ থেকে ভোটের আগে বয়কটের ফরমান আসে। ফলে ভোট আর দেওয়া হয় না কাটিয়া আমোয়াটোলির। এ বার অবশ্য কোনও ফরমান আসেনি। দেখা যাক!

লাতেহার, পলামুর মাওবাদী অধ্যুষিত এই এলাকায় ভোট কেন্দ্রে যাওয়াটাই যেন একটা চ্যালেঞ্জ। এক দিকে, বন্দুকধারীদের ফরমান। অন্য দিকে, ভোটকেন্দ্রে যেতে গড়ে তিন থেকে সাত কিলোমিটার জঙ্গল-পাহাড় ভাঙা। এই যেমন কাটিয়া আমোয়াটোলি গ্রামের বাসিন্দাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে হলে পাহাড় পেরিয়ে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের গণেশপুর পঞ্চায়েতে যেতে হয়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

২০১৩ সালে জানুয়ারিতে শিরোনামে উঠে এসেছিল কাটিয়ার জঙ্গল ঘোরা এই কাটিয়া আমোয়াটোলি। এই গ্রামের জঙ্গলেই মাওবাদী-সিআরপিএফ সংঘর্ষে ১২ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হন। ১২ জনের মধ্যে চার জন সিআরপিএফ জওয়ানের দেহ প্রথমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গ্রামবাসীদের সাহায্যে পরের দিন চার জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। দেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময়ে এক সিআরপিএফ জওয়ানের পেটে লুকিয়ে রাখা বোমা বিস্ফোরণে চার নিরীহ গ্রামবাসী মারা যান। মৃত জওয়ানদের রাঁচীর রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (রিমস)-এ আনার পরে চিকিৎসকরা দেখেন আরও এক জওয়ানের পেটের ভিতরে পোরা রয়েছে বিস্ফোরক। বোমা লুকিয়ে রেখেছিল মাওবাদীরা।

দেশ জুড়ে তোলপার হয়েছিল। সেই ঘটনা ভুলতে পারেননি গ্রামবাসীরা। রবি মেটা নামে এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘গতবারও ভোট বয়কট করে মাওবাদীরা দেওয়াল লিখেছিল। এ বার এখনও অবশ্য লেখা হয়নি। তবু ভয় লাগে।’’ শুধু দেওয়াল লিখনই নয় গত লোকসভা ভোটের আগে মাওবাদী জঙ্গিরা রাতে গ্রামে এসে বলে গিয়েছিল, কেউ যদি ভোট দেয় তার ব্যবস্থা হবে। তারও পরে কে আর ভোট দিতে যাওয়ার কথা ভাববে! স্থানীয় চুমরু পঞ্চায়েতের মুখিয়া অর্জুন পরহিয়া বললেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি গ্রামের স্কুলেই ভোট করানোর।’’

কাটিয়া জঙ্গল পিছনে ফেলে ডালটনগঞ্জের পথে জাতীয় সড়কে দেখা মিলল কেন্দ্রীয় বাহিনীর। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায় মোড়া ডালটনগঞ্জের রাস্তা। এই রাস্তা ধরে এগোলে ভোটের হাওয়া টের পাওয়া যায়। রাস্তার ধারে বড় বড় হোডিং— ‘ফির একবার/মোদী সরকার।’ চলছে মাইকে প্রচার। বিভিন্ন দলের বিভিন্ন মাইকের আওয়াজ পরস্পরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। বেশ ভোট ভোট আমেজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন