Lok Sabha Election 2019

নাম না করে জয়াপ্রদার পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য আজম খানের, এফআইআর দায়ের পুলিশের

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৩৪
Share:

নাম না করে জয়াপ্রদাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন মন্তব্য আজম খানের। —ফাইল চিত্র

অশালীন মন্তব্যের জেরে বেজায় বিপাকে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির (এসপি) প্রভাবশালী নেতা আজম খান। রামপুর কেন্দ্রের প্রার্থী আজম খানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করল পুলিশ। মহিলার ‘সম্ভ্রমহানি’র অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, নাম না করলেও এই বিতর্কিত মন্তব্য তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রামপুর কেন্দ্রেরই বিজেপি জয়াপ্রদাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছিলেন। শুধু পুলিশই নয়, সক্রিয় হয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনে চিঠি লিখে আজম খানের প্রার্থী পদ বাতিলের আর্জি জানাবেন তাঁরা। জয়াপ্রদার প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি জিতলে গণতন্ত্রের কী হবে? তাই ওঁকে ভোটে লড়তে দেওয়াই উচিত নয়।’’

Advertisement

অন্য দিকে চাপে পড়ে এখন নানা সাফাই দিচ্ছেন আজম খান। বলছেন, তাঁর টার্গেট জয়াপ্রদা নন, অন্য এক আরএসএস কর্মী। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করার কথাও বলেছেন। ভুল ব্যাখ্যা করার অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলেছেন সংবাদ মাধ্যমকে।

ঠিক কি বলেছিলেন আজম খান? রবিবার রামপুর এলাকায় একটি নির্বাচনী জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘আমি ওনাকে রামপুরে নিয়ে এসেছিলাম। আপনারা সাক্ষী আছেন, আমি কাউকে ছুঁতে পর্যন্ত দিইনি। আপনাদের তাঁর প্রকৃত রূপ চিনতে ১৭ বছর লেগে গেল। কিন্তু আমি ১৭ দিনেই বুঝে গিয়েছিলাম, উনি খাকি অন্তর্বাস পরেন।’’ আজম খান যখন এই মন্তব্য করছেন, তখন মঞ্চেই ছিলেন এসপি নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও। কিন্তু তাঁকেও প্রতিবাদ করা বা আজম খানকে থামাতে দেখা যায়নি।

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, রামপুরের বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী জয়াপ্রদাকে লক্ষ্য করেই এই কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন আজম খান। আর তার পর থেকেই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে নানা মহলে। তার পরই সোমবার সকালে আজম খানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ।

আরও পডু়ন: মোদীর বাক্স রহস্য! কী সরানো হল কপ্টার থেকে? সিসিটিভি ফুটেজের উত্তর মেলেনি এখনও

পুলিশেই অবশ্য বিষয়টি থেমে নেই। আজ সোমবার জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আজম খান সব সময় মহিলাদের নিয়ে নোংরা কথা বলেন। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। মহিলা কমিশন স্বতপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবে এবং তাঁকে নোটিস পাঠানো হবে। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনে চিঠি লিখছি। কারণ, এ বার ওঁর উচিত শিক্ষা হওয়া উচিত। ওঁকে থামানোর এটাই আদর্শ সময়। মহিলারা যৌন পণ্যের বিষয় নয়। আমি মনে করি, মহিলাদের ওঁকে ভোট দেওয়াই উচিত নয়।’’

জয়াপ্রদাও তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন টুইটারে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার কাছে এটা নতুন নয়। আপনারা জানেন, আমি ২০০৯ সালে ওঁর দলেরই প্রার্থী হয়েছিলাম। কিন্তু উনি যখন আমার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিলেন, তখন কেউ আমার পাশে দাঁড়াননি। উনি কী বলেছিলেন, সেটা আমি মুখে উচ্চারণও করতে পারব না। আমি জানি না, আমি ওঁর কী করেছি যে আমাকে নিয়ে এমন কথা বলেন।’’

আরও পডু়ন: সঞ্চয়ের নিরিখে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে পিছনে ফেলেছে বহেনজির বিএসপি

একই সঙ্গে তাঁর টুইট, ‘‘ ওঁকে ভোটে লড়তে দেওয়াই উচিত নয়। কারণ, এই ব্যক্তি ভোটে জিতলে গণতন্ত্রের কী পরিণতি হবে? সমাজে মহিলাদের কোনও সম্ভ্রমই থাকবে না। আমরা তাহলে কোথায় যাব? আমি মরে গেলে আপনি খুশি হবেন? আপনি ভেবেছেন, আমি ভয় পেয়ে রামপুর ছেড়ে যাব? কিন্তু সেটা কখনওই হবে না।

এফআইআর দায়েরের পরেই অবশ্য ভোল বদল আজমের। সাফাই দিয়েছেন, ‘‘ওই বক্তব্য আমি এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেছি, যিনি আমাকে খুন করার জন্য ১৫০ বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমার দলের নেতারাও ভুল করেছেন। এখন সেটা প্রমাণিত হয়েছে, যে ওই ব্যক্তি এক জন আরএসএস সমর্থক, অর্থাৎ তাঁর পরনে আরএসএস-এর খাকি হাফ প্যান্ট। হাফ প্যান্ট তো ছেলেরাই পরে।’’

নিজের বোধবুদ্ধির প্রমাণ দিতে আজম খানের দাবি, ‘‘আমি রামপুরের ন’বারের বিধায়ক। মন্ত্রী ছিলাম। আমি জানি, কী বলতে হয়। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন আমি কারও নাম বলেছি, বা কাউকে নাম করে অপমান করেছি, তা হলে এ বারের লোকসভা ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে আমার প্রার্থীপদই প্রত্যাহার করে নেব।’’ সংবাদ মাধ্যমকে এক হাত নিয়ে তাঁর মন্তব্য, আমি হতাশ। সংবাদ মাধ্যম আমাকে পছন্দ করে না। আমিও ওদের পছন্দ করি না। ওরা আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি করেছে।’’

জয়াপ্রদাকে লক্ষ্য করে আজম খানের বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্যের অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। বিজেপি জয়াপ্রদাকে প্রার্থী ঘোষণার পরই তাঁকে ‘নাচনেওয়ালি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন আজম। এ ছাড়া জয়াপ্রদার কুরুচিকর ছবি বানিয়ে সেগুলি ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সেই বিষয়টি উল্লেখ করে একটি জনসভায় কেঁদেও ফেলেছিলেন জয়াপ্রদা। কিন্তু তার পরও থামেনি আজমের আক্রমণ।

এই রামপুর কেন্দ্র থেকেই প্রথম সাংসদ হন জয়াপ্রদা। সেটা ২০০৪ সালে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে। পরের বার ২০০৯ সালেও মুলায়মের দলের হয়েই রামপুর কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। কিন্তু পরের বছর ২০১০ সালে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ তুলে তাঁকে বহিষ্কার করে এসপি। ২০১৪ সালে অজিত সিংহর রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি)-র টিকিটে বিজনৌর কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও হেরে যান জয়াপ্রদা। এর পর সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়ে এ বার লোকসভা ভোটে ফের রামপুরেই প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন