মনোযোগ পেতে ভরসা কয়েক মিনিট

একাধিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের যুগে কেউ মনোযোগ দিয়ে খুব বেশিক্ষণ কিছু দেখতে চাইছেন না। এই কম ‘অ্যাটেনশন স্প্যান’-এর প্রমাণ মিলছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্যেই।

Advertisement

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৭
Share:

‘‘নমস্কার। এক মিনিট।’’

Advertisement

এক মিনিট চাইতেন ‘কহানি’র বব বিশ্বাস। তেমনই, মিনিটখানেক বা মিনিট দু’য়েক সময়ই চাইছে রাজনৈতিক দলগুলিও। কারণ, মনোযোগ মিলবে না বেশিক্ষণ। তাই ছোট ছোট ভিডিয়ো দিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছে সব দল।

একাধিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের যুগে কেউ মনোযোগ দিয়ে খুব বেশিক্ষণ কিছু দেখতে চাইছেন না। এই কম ‘অ্যাটেনশন স্প্যান’-এর প্রমাণ মিলছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্যেই। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, টুইটারে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিনের ৫০টি জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগে নজর রেখেছিলেন সমাজবিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, ২০১৩ সালে সেরা পঞ্চাশের তালিকায় একটি হ্যাশট্যাগের মেয়াদ ছিল ১৭.৫ ঘণ্টা। তিন বছর পরে, ২০১৬ সালে সেই মেয়াদ কমে হয় ১১.৯ ঘণ্টা। ক্রমশই তা কমছে। তাই খুব কম সময়ের মধ্যেই নিজেদের বার্তাকে পৌঁছে দিতে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলিকে।

Advertisement

বিজেপি রবিবারই কিছু ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে, যেগুলি সবগুলিই কমবেশি ৩০ সেকেন্ডের। অ্যানিমেশনের ধাঁচে তৈরি ওই ভিডিয়োগুলিতে বিজেপি বিরোধী মহাজোটের নির্দিষ্ট প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না থাকা-সহ নানা প্রসঙ্গ তুলে কটাক্ষ করা হয়েছে। রয়েছে মোদী-সহ নানা বিরোধী নেতানেত্রীর আদলে আঁকা কার্টুনও। বিরোধীরা এই কৌশল নিয়েছিল আগেই। কংগ্রেস #ভক্তচরিত্র নামে একাধিক ভিডিয়ো তৈরি করে বিজেপি ভক্তদের আক্রমণ করেছিল। সেই ভিডিয়োগুলির দৈর্ঘ্য মোটামুটি এক মিনিট। ভিডিয়োগুলিতে ব্রিটিশ শাসনে ইংরেজদের সঙ্গে সঙ্ঘের যোগাযোগের কথা-সহ নানা বিষয় টেনে বিজেপিকে বেঁধা হয়েছে। জিএসটি, নোটবন্দি, বেকারত্বের মতো বিষয় ধরে ছোট ছোট ভিডিয়ো তৈরি করে বিজেপি সরকারকে বিঁধেছে তৃণমূলও। #প্রধানমন্ত্রীহিসাবদো সিরিজের ওই ভিডিয়োগুলোও মোটামুটি এক মিনিটের, অনেকগুলি তারও কম।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভোটের গানগুলিও খুব দীর্ঘ নয় একেবারেই। বিজেপির ‘ম্যায় ভি চৌকিদার হুঁ’ গান ৩ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের। তৃণমূলের ভোটের গান ২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের। কংগ্রেস ‘অব হোগা ন্যায়’ আরও ছোট, ৫১ সেকেন্ডের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক পার্থপ্রতিম বসুর মতে, এমন প্রচার কৌশল নেওয়ার কারণ এখনকার সোশ্যাল মিডিয়া সংস্কৃতিই। তাঁর কথায়, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অ্যাটেনশন স্প্যান আগের থেকে কমেছে। মানুষ শুনতে নয়, বলতে আগ্রহী। তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে বিশদে প্রচারের জন্য যে সময় দরকার তা অনেকেই দিতে চান না। তাই তেমন প্রচারও দেখা যায় কম।’’

ঘড়ি ধরে
• ম্যায় ভি চৌকিদার হুঁ: ৩ মিনিট ২৩ সেকেন্ড
• ভরসা উশুল তৃণমূল জোড়াফুল: ২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড
• অব হোগা ন্যায়: ১ মিনিট

মনোযোগের মেয়াদ কমার কারণ হিসেবে এখনকার জীবনযাত্রাকেই দায়ী করছেন মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘এখন মোবাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে চব্বিশ ঘণ্টা সবাই বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এর ফলে কোনও কিছু একটানা মন দিয়ে করাই কঠিন হয়ে গিয়েছে। মোবাইলে ক্রমাগত হোয়াটসঅ্যাপ, মেল বা অন্য নানা নোটিফিকেশন আসতে থাকে। এমন ক্রমাগত বিঘ্নই জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তাই মনোযোগের মেয়াদও কমেছে।’’

সে জন্যই নানা বিষয় গল্পের আকারে বলার চেষ্টা হয়েছে ভিডিয়োগুলিতে। এবং তা-ও কম সময়ে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ সুপর্ণ মৈত্র বলছেন, ‘‘গল্প শুনতে সকলেই চান। তবে সেই গল্প খুব বড় হলেও শোনার ধৈর্য থাকবে না কারও। তাই এমন ভাবেই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন