প্রতীকী ছবি।
পাহাড়ি পথে লম্বা চলার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। রাতে জঙ্গলে কাটানোর অভিজ্ঞতাও বাঞ্ছনীয়। দৈহিক ক্ষমতা তুঙ্গে থাকতে হবে। কষ্ট, খিদে, ভয়কে জয় করতে হবে। পিঠে অবলীলায় বইতে হবে বোঝা। কম্যান্ডো হওয়ার আবেদনপত্র নয়, এ হল প্রিসাইডিং অফিসার ও ভোটকর্মী হওয়ার গুণাবলী!
কারণ, আম সরকারি কর্মীদের পক্ষে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে এক দিনে ৩৯ কিলোমিটার পথ ভোটের যন্ত্রপাতি নিয়ে পাড়ি দেওয়া মুখের কথা নয়। কিন্তু অরুণাচলপ্রদেশের হায়ুলিয়াং বিধানসভা কেন্দ্রের মালোগাম বুথে পৌঁছতে হলে সেটাই করতে হবে। এবং এত কষ্ট মাত্র একজন ভোটারের জন্য!
হায়ুলিয়াং কেন্দ্রের আগের বিধায়ক ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুল। তিনি আত্মঘাতী হওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী ডিসাংলু পুল উপ-নির্বাচনে জেতেন। এই হায়ুলিয়াং বিধানসভা কেন্দ্রেই পড়ে পাহাড়ি গ্রাম মালোগাম। জেলা সদর আনজাও থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে, চিন সীমান্ত ঘেঁষা এই গ্রামে সন্তানদের নিয়ে থাকেন সোকেলা তায়াং। আদতে কয়েক ঘর মানুষের বাস সেখানে। গাড়ি তো দূরের কথা, প্রত্যন্ত ওই পাহাড়ি গ্রামে জঙ্গলের সরু খাড়া রাস্তা ছাড়া যাওয়ার উপায়ই নেই। বাকিরা তো বটেই, এমনকী ৩৯ বছর বয়সী সোকেলার স্বামী জানেলুম তাংয়াংও শহরের কাছাকাছি অন্য বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু অনড় সোকেলা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজ্যের উপ মুখ্য নির্বাচনী অফিসার লিকেন কোয়ু জানান, সোকেলা একমাত্র ভোটার হলেও ভারতীয় গণতন্ত্রের আদর্শ মেনে, ওই একজনের জন্যেও বুথ তৈরি হচ্ছে মালোগামে। এক প্রিসাইডিং অফিসার, এক পোলিং অফিসার, নিরাপত্তকর্মী ও কুলিদের একটি দল আগের দিন রাত থাকতে হাঁটা শুরু করবেন। রাত নামার আগেই মালোগামে পৌঁছতে হবে তাঁদের। ১১ এপ্রিল সকাল সাতটায় ওই একজন ভোটারের জন্যই খোলা হবে বুথ। অরুণাচলে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট এক সঙ্গেই হচ্ছে। মোট সাত লক্ষ ৯৪ হাজার ভোটার। মোট ২,২০২টি বুথের মধ্যে ৭টি বুথে ভোটার সংখ্যা ১০ বা তার চেয়ে কম। মালোগামের পরেই সবচেয়ে কম ভোটার পাক্কে-কেসাং কেন্দ্রের লামটা বুথে। মাত্র ৬ জন ভোটার। ২৮১টি বুথে ভোটার সংখ্যা ১১ থেকে ১০০। ৪৫৩টি বুথে ভোটার ১০১ থেকে ২০০-র মধ্যে। ৫১৮টি বুথই প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায়। সেখানে কোথাও ট্রেকিং করে, কোথাও হাতির পিঠে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভোটকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীদের পাঠাতে হবে। কোনও বুথে জেলা সদর থেকে পৌঁছতেই কেটে যাবে তিন দিন। তবু ভোট ভোটই!