ছবি: পিটিআই।
এক ঢিলে নরেন্দ্র মোদী ও নিজের দলের স্যাম পিত্রোদা-মণিশঙ্কর আইয়ারকে নিশানা করলেন রাহুল গাঁধী।
প্রথমে বাবার দাদু জওহরলাল নেহরু। তার পরে নরেন্দ্র মোদী তাঁর বাবা রাজীব গাঁধীকেও আক্রমণ করায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলিঙ্গন ও ভালবাসা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু তার পরেও রাজীবকে নিশানা করা বন্ধ করেননি মোদী। এ বার কংগ্রেস সভাপতি রাজনীতিতে নতুন ভাষা নিয়ে আসার আহ্বান জানালেন।
আজ কংগ্রেস সভাপতির মন্তব্য, ‘‘আমি রাজনীতিতে নতুন ভাষা নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। কোনও বিষয়কে কেন্দ্র করে একে অপরের সঙ্গে নির্মম ভাবে লড়া যেতেই পারে। তবে সেই লড়াই হবে মতাদর্শের ভিত্তিতে। সেখানে ঘৃণা ও হিংসার কোনও জায়গা নেই।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ত্যাগ করার আর্জি জানিয়ে রাহুল যে শুধু মোদীকেই কটাক্ষ করেছেন তা নয়, বার্তা দিয়েছেন নিজের দলের নেতাদেরও। কারণ, চুরাশির দাঙ্গা নিয়ে স্যাম পিত্রোদা ‘হুয়া তো হুয়া’ মন্তব্য করে শিখ অধ্যুষিত দিল্লি-পঞ্জাবের ভোটের আগে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলেছেন। পিত্রোদার পরে ফের মুখ খুলেছেন দলের আর এক প্রবীণ নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার।
২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে আইয়ার মন্তব্য করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী এখানে এসে চা বিলি করতে পারেন। তার পর মোদী নিজেকে ‘চাওয়ালা’ পরিচয় দিয়ে ‘চায়ে পে চর্চা’ শুরু করে দেন। ফের ২০১৭-র গুজরাত ভোটের সময় মোদীকে ‘নীচ কিসম কা আদমি’ বলে তাঁর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন আইয়ার।
লোকসভা ভোটের শেষ পর্বে ফের ভেসে উঠেছেন আইয়ার। কাশ্মীরের একটি সংবাদপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনাদের মনে আছে মোদী সম্পর্কে কী বলেছিলাম। আমি কি ঠিক ভবিষ্যৎবাণী করিনি?’’ ওই মন্তব্যের জন্য কংগ্রেস তাঁকে সাসপেন্ড করে ফের দলে ফিরিয়ে আনে। প্রকারান্তরে সেই একই কথা বলে আইয়ার প্রধানমন্ত্রীর ভোট প্রচারকে ‘নোংরা’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘আগামী ২৩ মে দেশবাসী মোদীকে ক্ষমতাচ্যুত করবেন। এত কুকথা বলা প্রধানমন্ত্রীর শাসনের অবসান হবে। মনে আছে, আমার ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বরের মন্তব্য? আমি কি ঠিক ভবিষ্যৎবাণী করিনি?’’
আইয়ারের মন্তব্যকে বিজেপি হাতিয়ার করার আগেই আজ মাঠে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। রাহুলের ওই মন্তব্যের পরেই কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘হিংসা, গালিগালাজ মোদীজি, বিজেপির অস্ত্র হলেও কংগ্রেসের নয়। আমরা মণিশঙ্কর আইয়ার-সহ সব ব্যক্তি, যাঁরা শব্দের মর্যাদা ভুলে গিয়েছেন, তাঁদের কড়া ভর্ৎসনা করছি। মনে হচ্ছে, কিছু লোক খবরের হেডলাইনে থাকতেই এ সব করেন।’’
নিজেদের দলের নেতাদের কড়া বার্তা দিয়ে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, মোদী কি জওহরলাল, রাজীবের সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলার জন্য ক্ষমা চাইবেন? ৫০ কোটি টাকার গার্লফ্রেন্ডের মতো কথা বলার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন? সনিয়া গাঁধীকে কংগ্রেসের বিধবা বলার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন? সুরজেওয়ালার অভিযোগ, বিজেপিতে যারা গালিগালাজ করেন, তাঁদেরই পদোন্নতি হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজের পদের গরিমা নষ্ট করছেন, রাজনৈতিক বিতর্কের স্তরকেও নীচে টেনে নামাচ্ছেন।
কংগ্রেস জানিয়েছে, আইয়ারের মতো ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় শাস্তি হবে। আইয়ার পরে জানান, তাঁকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে নিজের নিবন্ধে তিনি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘‘এক জন ব্যক্তি তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অসত্য বলবেন কেন! যদি না তাঁর মানসিক সমস্যা থাকে! উনি ৫৬ ইঞ্চি ছাতির বড়াই করেন। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা থাকায় পাকিস্তানের রেডার ভারতের যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি বুঝতে পারেনি! মোদী কি বায়ুসেনার শীর্ষ অফিসারদের বোকা ভাবেন, তাঁদের সামনে এমন হাস্যকর অবৈজ্ঞানিক কথা বললেন? সেনা অফিসারেরা কি এতটাই দুর্বলচিত্ত যে প্রধানমন্ত্রীকে সংশোধন করে দিলেন না? অশিক্ষিতের মতো এই সব মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’’