২০১৭ সালে তোলা প্রিয়ঙ্কার ছবি। (ডান দিকে চিহ্নিত) এই ভুয়ো ছবিই ছড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ভোটের মুখে ভারতে ভুয়ো খবর রুখতে যে তারা তৎপর, তা দু’দিন আগেই দাবি করেছিল ফেসবুক। তবে ভোটারদের প্রভাবিত করতে ভুয়ো খবরকে যে সহজে বাগে আনা যাচ্ছে না, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রমাণ মিলছে প্রায় রোজই।
ফেসবুকের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ফর সিভিক ইনটিগ্রিটি ডিভিশনের ডিরেক্টর সমিধ চক্রবর্তী বুধবার বলেন, ‘‘কেউ যাতে ভোটকে প্রভাবিত করতে না পারে, আমরা সেই চেষ্টা করছি। তিনগুণ কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।’’ তবে তাতেও ভুয়ো তথ্যের ভাইরাল হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না।
শুক্রবারই কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ায়, যাতে দেখা যাচ্ছিল প্রিয়ঙ্কা গলায় খ্রিস্টানদের মতো ক্রস পরে আছেন। বিজেপি সমর্থকদের একাধিক ফেসবুক গ্রুপে ছড়ায় ছবিটি। ছড়ায় টুইটারেও। এই ছবি ঘিরেই বিজেপি সমর্থকদের অনেকেই প্রিয়ঙ্কাকে আক্রমণ করেন। পরে ভুয়ো খবর ধরার একটি সংবাদমাধ্যম ছবিটি যাচাই করে জানায়, ছবিটি আসলে ২০১৭ সালে তোলা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কেবল প্রিয়ঙ্কাই নন, ভুয়ো-খবরের আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি তাঁর মা সনিয়া গাঁধীও। কিছু দিন আগেই বিজেপি সমর্থক একাধিক ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ থেকে অভিনেত্রী উরসুলা অ্যান্ড্রেসের একাধিক ছবি সনিয়া গাঁধীর ছবি বলে শেয়ার হয়। ভুয়ো খবর ধরার ওই সংবাদ সংস্থাই জানায়, উরসুলার ওই ছবিগুলি আসলে জেমস বন্ড সিরিজের প্রথম ছবি ‘ডক্টর নো’-র সেটে তোলা। ভুয়ো ওই ছবিগুলি ঘিরে প্রিয়ঙ্কার মতোই ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয় সনিয়াকেও।
ফেসবুকের দাবি, খবরের সত্যতা যাচাই করতে ইংরাজি, হিন্দি ও বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তারা গাঁটছড়া বেঁধেছে। যদি তথ্য যাচাইয়ের পরে কোনও ভুয়ো খবর খুঁজে পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে ওই সূত্র থেকে আসা খবরের প্রকাশ ৮০% কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেছে তারা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকের এই পদক্ষেপেও ভুয়ো তথ্য ঠেকানো যাচ্ছে না। ভুয়ো খবর ধরার ওই সংবাদমাধ্যমের কর্ণধার, সাংবাদিক প্রতীক সিন্হা বলছেন, ‘‘ফেসবুক যত ক্ষণে জানতে পারছে যে ওই তথ্য ভুয়ো, তত ক্ষণে তা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তাই যারা এই খবর ছড়াচ্ছে, তাদের লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে।’’
টুইটারের ব্যবহারকারী তুলনায় কম। তাই টুইটারে ভুয়ো তথ্য ছড়ালেও আশঙ্কা কম। কিন্তু ভারতে ভুয়ো খবর মূলত ছড়ায় ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে, যাদের নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ বলেই জানাচ্ছেন প্রতীক। হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, গুজবের জেরে হিংসা ছড়ানো রুখতে তারা এক মেসেজ একবারে বেশি জনকে পাঠানো নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর আগে কোনও মেসেজ এক লপ্তে ২৫৬ জনকে পাঠিয়ে দেওয়া যেত। সংখ্যাটা কমিয়ে ৫-এ নামিয়ে এনেছে হোয়াটসঅ্যাপ। তবে তাতেও গুজব ছড়ানো বন্ধ হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে এখনও ব্রডকাস্ট লিস্ট বানিয়ে একসঙ্গে অনেককে মেসেজ পাঠানো যায়। প্রতীক বলছেন, ‘‘যতই পদক্ষেপ করুক সংস্থাগুলি, বাস্তবে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।’’
কেবল বিরোধীদের আক্রমণই নয়, নিজের দলের সমর্থকদের উজ্জীবিত করতেও ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হয়। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ক্রিস গেলের দু’টি ছবি ভাইরাল হয়। একটিতে তিনি গেরুয়া পাঞ্জাবি পরে ছিলেন। আর একটিতে গলায় গেরুয়া উত্তরীয়তে বিজেপির প্রতীক দেখা যাচ্ছিল। বিজেপি সমর্থকদের অনেকেই দাবি করেন, তিনি এ বার বিজেপির হয়ে প্রচার করছেন। তবে দু’টি ছবিই সংবাদমাধ্যম পরীক্ষার পরে জানায় সেগুলি ভুয়ো, বছরখানেক আগে তোলা। এমনকি উত্তরীয়তে বিজেপির প্রতীকও সফটওয়্যারের কারিকুরি করে বসানো।
ভুয়ো খবরের সঙ্গে এখন অর্থনীতিও জড়িয়ে গিয়েছে বলে তা ভাইরাসের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশনের শিক্ষিকা গাজালা ইয়াসমিন। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক অনেক বাণিজ্যিক সংস্থা এই সমস্ত ভুয়ো খবরের পেজগুলোকে আর্থিক সাহায্য করে। ভুয়ো খবর ছড়ানোর বাহিনীতে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা টাকা পান।’’ এর থেকে বাঁচার উপায়? গাজালা বলেন, ‘‘আগের থেকে ভুয়ো খবর নিয়ে সতর্কতা এখন অনেক বেড়েছে। প্রশাসনও সক্রিয় হচ্ছে। ধীরে ধীরে হয়তো এই ভাইরাসের দাপাদাপি অনেক কমবে।’’