প্রিয়ঙ্কা রাজনীতির ময়দানে নামার পর এসপি-বিএসপি শিবিরে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢ়রার আবির্ভাবে কি রাজনীতির সমীকরণ বদলাচ্ছে উত্তরপ্রদেশে। নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে প্রতিপক্ষরা। সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) জোট শিবির সূত্রে অন্তত তেমনটাই ইঙ্গিত। এমনকি, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার কথাও ভাবতে শুরু করেছেন জোটের নেতারা। সোমবার প্রিয়ঙ্কা-রাহুলের রোড শো-য়ে বিপুল জনজোয়ারের পর সেই সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে।
লোকসভা ভোটের মুখে প্রিয়ঙ্কার রাজনৈতিক অভিষেকের পর থেকে ছিল ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’। জল মাপছিলেন অখিলেশ-মায়াবতী। কিন্তু সোমবার সরাসরি প্রিয়ঙ্কা ময়দানে নামার পর কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা যে ভাবে উজ্জীবিত, যে বিপুল সাড়া পড়েছে, তার পর চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সাইকেল, হাতি দুই শিবিরেই। এত দিন যখন মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে বিজেপি এবং যোগীকেই দেখছিলেন অখিলেশ-মায়াবতী, এবার আর তার উপায় নেই। আলাদা করে ভাবতেই হচ্ছে প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে।
সেই ভাবনা কী রকম? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজবাদী পার্টির এক বর্ষীয়ান নেতা বললেন, প্রিয়ঙ্কার সক্রিয় রাজনীতিতে আসার ঘোষণার আগে পর্যন্ত কংগ্রেসকে খুব একটা ‘সিরিয়াস’ মনে হয়নি। কিন্তু ওই ঘোষণার পর থেকেই কংগ্রেস যে ভাবে আসরে নেমেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে হিন্দি বলয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী। এসপি-বিএসপি শিবিরও তাই স্ট্র্যাটেজি বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ, কংগ্রেস ভাল ফল করলে ভোট কাটাকাটির খেলায় আখেরে লাভ হবে বিজেপির-ই। কিন্তু না এসপি-বিএসপি জোট, না কংগ্রেস, কেউই সেটা চাইবে।
আরও পড়ুন: লখনউয়ে জনজোয়ার, প্রিয়ঙ্কার রোড শো থেকেও মোদীকে রাফাল খোঁচা রাহুলের
ওই নেতার কথায়, এবার তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খুঁজছেন। এমনকি, ১২ থেকে ১৫টি আসন ছাড়তেও রাজি বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ‘পিছনের দরজা’ দিয়ে সেই প্রস্তাব ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে গিয়েছে বলেও ওই নেতার দাবি। ওই নেতা বলেন, ‘‘অখিলেশেরও আপত্তি থাকার কথা নয়। মায়াবতী এখনও অতটা নমনীয় নন। এটা নির্ভর করছে কংগ্রেস মায়াবতীকে কী ভাবে বিবেচনা করবে, তার উপর। কংগ্রেসের অবস্থানে মায়াবতী সন্তুষ্ট হলেই কংগ্রেসের সঙ্গে অখিলেশের জোট করে লড়াই করতে কোনও সমস্যা নেই।’’
কিন্তু কংগ্রেস কি সেটা মানবে? সোমবার প্রিয়ঙ্কা-রাহুলের রোড শোয়ে যে উন্মাদনা দেখা গিয়েছে, তার পর আর সেই সমঝোতার রাস্তায় যাবেন কিনা, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। বরং দলের কর্মী-সমর্থকদের এই উন্মাদনা ভোট বাক্সে ফেলতে পারলে ভাল ফল করার বিষয়ে আশাবাদী কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রে সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে মায়াবতী-অখিলেশ দরাদরি করার সুযোগ কম পাবেন। যেমনটা হয়েছে মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানের ক্ষেত্রে। ভাল ফল করায় দুই দলই নিজে থেকে এগিয়ে এসে সমর্থন দিয়েছে।
আরও পড়ুন: দুর্নীতি বিরোধী শর্তই বাদ দেওয়া হয়েছিল! রাফাল নিয়ে ফের বিপাকে মোদী সরকার
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও অখিলেশ-মায়াবতীকে নিয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। বরং ৩৮-৩৮ ফর্মুলায় আসন সমঝোতা এবং জোট ঘোষণার পর থেকে একাধিক বার রাহুল বলে আসছেন, অখিলেশ-মায়াবতীর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা রয়েছে। আলোচনার রাস্তাও খোলা রেখেছেন। আবার কোনও দলই এখনও একটি আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। ফলে সব সম্ভাবনাই খোলা রয়েছে।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)