হিন্দি বলয়ে হারের পর প্রশ্ন নিয়েই সায় উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ বিলে

এমন মুহূর্তে আগের মতো বুক বাজিয়ে কৃতিত্ব নিতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নিলেন না। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

বিজেপির ছোট-বড় সব নেতাই জয়ধ্বনি করছেন। সকলেই বলছেন, সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংরক্ষিত অংশের ১০% সংরক্ষণ ‘ঐতিহাসিক’ সন্ধিক্ষণ। এমন মুহূর্তে আগের মতো বুক বাজিয়ে কৃতিত্ব নিতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নিলেন না।

Advertisement

রাহুল গাঁধী-সহ প্রায় সব বিরোধী নেতা এই সংবিধান সংশোধনী সমর্থন করায় লোকসভায় সংরক্ষণ বিল পাশ নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। উপস্থিত ৩২৬ জন সাংসদের মধ্যে ৩২৩ জনের সমর্থন নিয়ে বিল পাশও হয়ে গেল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একেবারে শেষ লগ্নে এলেন এবং একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, হিন্দি বলয়ে হারের পর উচ্চবর্ণের সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মোদীকে। তিন দিন আগেই নিজের বাড়িতে বিলের খসড়া তৈরি করেছেন। কিন্তু দলিত, আদিবাসী এবং ওবিসি ভোটে যাতে আঁচ না পড়ে, সে কারণেই এই বিল নিয়ে বিশেষ উচ্চকিত নন তিনি। শুধু রাতে তাঁর টুইট: এটা জাতির ইতিহাসে এক স্মরণীয় মুহূর্ত। সব দলকে ধন্যবাদ।

আজ লোকসভায় রাহুল-সনিয়া উপস্থিত থেকে বিল সমর্থন করেছেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার বিতর্কে এসপি-বিএসপি-আরজেডি দাবি তুলল জাতগণনা করে দলিত, আদিবাসী, ওবিসিদেরও জনসংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষণ দেওয়া হোক। উপেন্দ্র কুশওয়াহা দাবি তুললেন, বেসরকারি ক্ষেত্র ও বিচারব্যবস্থায় সংরক্ষণ হোক। তাতে সায় দিলেন মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানও। দলিত পাসোয়ানের এই বেঁকে বসাটা তাৎপর্যপূর্ণ। অন্য শরিকরাও বলল, সংরক্ষণ যে দেবে, কর্মসংস্থান কই? এডিএমকের দাবি, এই বিল ব্যর্থ হবে। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আর্থিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ হয় না। বস্তুত এর আগে ইন্দ্রা সাহনে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট গরিবদের জন্য ১০% সংরক্ষণের সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করেছিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সংবিধানে সামাজিক বৈষম্য দূর করতে সংরক্ষণের দাওয়াই রয়েছে। গরিবদের জন্য নয়। তবে সংসদের ভিতরে অরুণ জেটলি আর বাইরে অমিত শাহকে দিয়ে মোদী বোঝানোর চেষ্টা করলেন, আগের সব বিল আদালতে আটকেছে সংবিধান সংশোধন না করায়। এ বারে আটঘাট বেঁধেই নেমেছে সরকার।

Advertisement

কিন্তু প্রশ্ন তাতেও যাচ্ছে না। কারণ সংরক্ষণ দিতে গিয়ে কেন্দ্র উচ্চবর্ণের ‘গরিব’দের নতুন সংজ্ঞা ঠিক করেছে— বছরে ৮ লক্ষ টাকার কম আয়। ১ হাজার বর্গফুটের কম মাপের বাড়ি। ৫ একরের কম জমি। প্রশ্ন উঠেছে, ৫ একরের কাছাকাছি জমির মালিককে কি গরিব বলা যায়? বছরে ৮ লক্ষ টাকা আয়ের অর্থ মাসে প্রায় ৬৬,৬৬৬ টাকা রোজগার। সেটা গরিবি হলে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা আড়াই লক্ষ টাকা কেন? সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘ন্যূনতম ১৮ হাজার টাকা মাসিক বেতন বা বছরে ২.১৬ লক্ষ টাকার দাবিতে শ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন। দিল্লি-মুম্বইয়ে বহু জায়গায় হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটির বেশি।’’ বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও উচ্চবর্ণীয় ‘গরিব’দের জন্য সংরক্ষণ চাইছে সরকার। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি-র জন্যই সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তা হলে?

কংগ্রেসের কেউ কেউ বলছেন, নোট বাতিলের মতো দুমদাম সিদ্ধান্ত নেওয়াই মোদী অভ্যাস করে ফেলছেন। তাতেই ভুলভ্রান্তি হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন