নিতিন গডকড়ী।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির গন্ধ পেয়ে সেটিকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রের সংস্কারের বিলগুলি পিছিয়ে দিতে তৎপর হচ্ছে বিরোধীরা। নিতিন গডকড়ীর ইস্তফার দাবিতে সরব হয়ে আজ বিরোধীরা অচল রাখল রাজ্যসভা। আর বিরোধীদের চাপে সরকারের বর্ষপূর্তির মাথায় পণ্য-পরিষেবা কর ও জমি বিলের মতো সংস্কারের বিলগুলিও এখন কমিটিতে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।
রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় যে কোনও বিল পাশ করাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। পণ্য-পরিষেবা বিল নিয়ে কংগ্রেসের মতো প্রধান বিরোধী দলের সমর্থন থাকলেও সনিয়া গাঁধী যে ভাবে লোকসভায় সভাকক্ষ ত্যাগ করেছেন, তার পর উচ্চকক্ষে কংগ্রেস নেতারা এখনই এই বিল পাশ করানোর পক্ষপাতী নন। আর জমি বিলের বিরোধিতা তো আছেই। এই অবস্থায় বিল পাশ করানোর জন্য সংসদের মেয়াদ বাড়ালেও শেষ পর্যন্ত দু’টি বিলই কমিটিতে পাঠাতে হচ্ছে সরকারকে। এই বিল নিয়ে যাতে আলোচনার কোনও সুযোগ না থাকে, তার জন্য আজ গডকড়ীর ইস্তফার দাবি তুলে রাজ্যসভা দিনভর অচল রাখল বিরোধীরা। সেটিকে সামনে রেখেই পণ্য-পরিষেবা বিলটিকে সিলেক্ট কমিটি ও জমি বিলটি আজ লোকসভায় পেশ করে যৌথ কমিটিতে পাঠানো সুনিশ্চিত করতে চাইছে বিরোধীরা। সরকার অবশ্য চায়, যেই কমিটিই হোক না কেন, তাতে যেন সরকারের সংখ্যাধিক্য থাকে। সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও ভূপেন্দ্র যাদবের মতো বিজেপি সাংসদকে চেয়ারম্যান করেই এই কমিটি গড়তে চায় সরকার।
গডকড়ী অবশ্য সাফাই দেন, নিছক রাজনৈতিক কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে সিএজির রিপোর্টকে হাতিয়ার করা হচ্ছে। তা না হলে, এখনই তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের কোনও প্রমাণ আসেনি। মোদী সরকারও এখন গডকড়ীকে সরানোর পক্ষপাতী নয়। বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, ‘‘মন্ত্রী হিসেবে কোনও অনিময়ই করেননি গডকড়ী। সিএজি রিপোর্টটি একটি প্রক্রিয়া। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সামনে আসলেই আসল তথ্য প্রকাশ পাবে। তার আগে তাঁর ইস্তফার প্রশ্নই উঠছে না।’’ কিন্তু রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি নিয়ে আপস করা হবে না, তিনি আজ নীরব কেন? গডকড়ীর সাফাইও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাঁর ইস্তফাই দেওয়া উচিত।’’
এই ডামাডোলের মধ্যেও অবশ্য আজ লোকসভায় কালো টাকা উদ্ধারের জন্য বিলটি পাশ করিয়ে নিতে সমর্থ হয়েছে সরকার। সেখানে সরকারের রণনীতি ছিল, যে দল এই বিল আটকাবে, তারা কালো টাকার পক্ষে বলে প্রচার করা হবে। সে কারণে কংগ্রেস বিলটি স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর দাবি তুলেও সেটিকে সমর্থন করেছে। তবে বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরাতে এই বিল কতখানি কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের দীপেন্দ্র সিংহ হুডা। তাঁর অভিযোগ, বিদেশে কালো টাকা রাখার বিরুদ্ধে আয়কর আইন ও আর্থিক নয়ছয় আইনে যে সব ব্যবস্থা ছিল, সেগুলিকেই একত্র করে এই বিল তৈরি হয়েছে। শুধু সর্বাধিক কারাদণ্ডের মেয়াদ সাত বছর থেকে বাড়িয়ে দশ বছর করা হয়েছে। অরুণ জেটলি যুক্তি দিয়েছেন, বিল পাশ হতে দেরি হলে বিদেশে আরও কালো টাকা জমবে। কিন্তু কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার যুক্তি, বর্তমান আইনেই তা রোখার যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।