অহমদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার একমাত্র জীবিত যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশ। — ফাইল চিত্র।
চার মাস কেটে গিয়েছে। তবে এখনও আতঙ্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে ওঠে সেই অভিশপ্ত দিনের কথা। ভেসে ওঠে ভাইয়ের মুখ। গত ১২ জুন অহমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এক মাত্র যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশের দিন কাটছে যন্ত্রণায়! শারীরিক ক্ষত মিলিয়ে গিয়েছে, তবে মানসিক যন্ত্রণা এখনও কাটিয়ে উঠে পারেননি তিনি। সকলের সঙ্গে থেকেও তিনি একা! কথা বলেন না স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গেও!
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রমেশ। দুর্ঘটনার পর ভারতে বেশ কয়েক দিন চিকিৎসা চলে তাঁর। তার পরে তিনি চলে যান ব্রিটেনে। ‘বিবিসি’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রমেশ বলেন, ‘‘আমিই একমাত্র বেঁচে আছি। বিশ্বাস হয় না। সত্যিই অলৌকিক ঘটনা।’’
১২ জুন অহমদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকগামী এয়ার ইন্ডিয়ার সেই বিমানে ভাই অজয়ের সঙ্গে উঠেছিলেন রমেশ। ওই বিমানের ১১এ আসনে বসেছিলেন তিনি। তাঁর থেকে কয়েকটি আসন পিছনে বসেছিলেন অজয়। দুর্ঘটনায় নিজেও বেঁচে গেলেও, অজয় বাঁচেননি। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শূন্যতা তৈরি হয়েছে রমেশের জীবনে। সেই কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করে রমেশের। তাঁর কথায়, ‘‘ভাই আমার মেরুদণ্ড ছিল। গত কয়েক বছর, সে আমায় সব সময় নানা বিষয়ে সমর্থন করত।’’ তার পরেই রমেশ ব্যাখ্যা করেন কী ভাবে তাঁর জীবনে একাকিত্ব গ্রাস করেছে।
রমেশের কথায়, ‘‘এখন আমি পুরো একা। আমি শুধু ঘরে একা চুপচাপ বসে থাকি। স্ত্রী কিংবা আমার ছেলের সঙ্গেও কথা বলি না।’’ শুধু তিনি নন, তাঁর পরিবার এখনও সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সঙ্গে মানিয়ে উঠতে পারেনি। রমেশের কথায়, ‘‘ওই দুর্ঘটনা আমি যেমন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি, তেমন আমার পরিবারও। গত চার মাস ধরে আমার মা প্রতি দিন দরজার বাইরে বসে থাকেন। কারও সঙ্গে কথা বলেন না।’’
দীর্ঘ দিন ঘরবন্দি থাকায় রমেশ যেমন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন, তেমনই তাঁর পরিবারে আর্থিক সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে গোটা পরিবার। কিন্তু কেউই জানেন না, কী ভাবে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবেন!
দুর্ঘটনার পর বিমানের ধ্বংসস্তূপের কাছ থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটেই অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে দেখা গিয়েছিল রমেশকে। কী ভাবে বেঁচে গেলেন, তা নিজেও জানেন না। পাঁচ দিন ছিলেন অহমদাবাদ সিভিল হাসপাতালে। গত ১৭ জুন সেখান থেকে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের দেহও তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।