New Parliament House

ময়ূর-পদ্মের নকশা নতুন সংসদ ভবনে

কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর টাটা প্রোজেক্টস সংস্থাকে নতুন সংসদ ভবন তৈরির বরাত দিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে খরচ ধরা হয়েছিল ৮৬২ কোটি টাকা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:০৫
Share:

নতুন সংসদ ভবন। ফাইল চিত্র।

দিল্লির অন্যতম স্থপতি হার্বার্ট বেকারের পরিকল্পনা ছিল, কাউন্সিল হাউস হবে তিন কোনা। কিন্তু অন্য স্থপতি এডউইন লাটিয়েন্স তাতে আপত্তি তুলে বলেন, কাউন্সিল হাউস হবে বৃত্তাকার।

Advertisement

লাটিয়েন্সের মতেই সিলমোহর পড়েছিল। দিল্লিতে তৈরি হয়েছিল বৃত্তাকার কাউন্সিল হাউস। এখনকার সংসদ ভবন। বেকার বা লাটিয়েন্স কেউই জানতেন না, প্রায় একশো বছর পরে তাঁদের তৈরি সংসদ ভবনের সামনেই তৈরি হবে ত্রিকোণাকার নতুন সংসদ ভবন। বেকার প্রথমে ঠিক যেমনটা ভেবেছিলেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে আচমকাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন তৈরি সংসদ ভবনের কাজকর্ম সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, সংসদের বাদল অধিবেশনের আগেই নতুন সংসদ ভবনের কাজ শেষ করে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে আগামী স্বাধীনতা দিবসের সময় নতুন সংসদ ভবনের দরজা খুলে যায়।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, ব্রিটিশদের তৈরি কাউন্সিল হাউসে কেন্দ্রীয় আইনসভা মাত্র ১৫০ জনের বসার জন্য তৈরি হয়েছিল। এখন সেটাই লোকসভা। তাতে এখন ৫৪৫ জন সাংসদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন সংসদ ভবনের লোকসভায় অন্তত ৭৭২ জনের বসার বন্দোবস্ত থাকবে। পরে প্রয়োজন মতো আসন সংখ্যা আরও বাড়ানো যাবে। পুরনো ভবনের মতোই অশ্বখুরাকৃতি আকারে সাংসদদের আসন পাতা থাকবে।

নতুন সংসদ ভবনে সেন্ট্রাল হল থাকছে না। সেন্ট্রাল হলে এখন বছরের গোড়ায় বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার সময় লোকসভা, রাজ্যসভার যৌথ অধিবেশন বসে। অন্য সময় সেখানে সাংসদরা বসে চা-কফি খেতে খেতে গল্পগুজব করেন। নতুন সংসদ ভবনে লোকসভাতেই যৌথ অধিবেশন আয়োজনের বন্দোবস্ত থাকছে। তবে নতুন ভবনে সংবিধান হল নামে একটি বিরাট হল তৈরি হচ্ছে। সেখানে ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট ভারতের আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান কেমন ছিল, তা তুলে ধরা হবে। থাকবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ কবিতার ইংরেজি অনুবাদ।

কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর টাটা প্রোজেক্টস সংস্থাকে নতুন সংসদ ভবন তৈরির বরাত দিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে খরচ ধরা হয়েছিল ৮৬২ কোটি টাকা। তবে কাজ শেষ হতে দেরি হওয়ার ফলে খরচও বাড়ছে। নতুন ভবনের নকশা তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রিয় স্থপতি বিমল পটেল। তাঁর পরিকল্পনায় লোকসভার নকশার বিষয় জাতীয় পাখি ময়ূর। ছাদ, দেওয়াল থেকে মেঝের কার্পেট সর্বত্রই ময়ূরের পেখমের ধাঁচে নকশা তৈরি করা হয়েছে। একই ভাবে রাজ্যসভার নকশায় থাকছে জাতীয় ফুল পদ্ম। পুরনো লোকসভায় কার্পেট থেকে সর্বত্র সবুজ রঙের প্রাধান্য ছিল। রাজ্যসভায় লাল রঙের প্রাধান্য দেখা যেত। নতুন ভবনেও তা থাকছে। নতুন ভবনের মাঝের উঠোনে জাতীয় বৃক্ষ বটগাছ রাখা হবে।

কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, পুরনো ভবনের সঙ্গে নতুন ভবনের অমিল থাকলেও বাইরে পাথরের রং, স্তম্ভ, জালির কাজের মতো অনেক মিল থাকছে। লোকসভার সচিবালয়ের এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘পুরনো সংসদ ভবনের পাশেই নতুন সংসদ ভবন তৈরি হচ্ছে। তাই দু’টি ভবন যাতে খাপছাড়া না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। আবার নতুন ভবনকে পুরনো ভবনের নকল না মনে হয়, সেটাও দেখা হয়েছে।’’

নতুন সংসদ ভবনকে ‘বিপুল অর্থের অপচয়’ আখ্যা দিয়ে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘আত্নশ্লাঘা প্রকল্পের প্রথম নির্মাণ। সব স্বৈরশাসক নিজের স্থাপত্যের নমুনা রেখে যেতে চায়।’’ আরজেডি-র রাজ্যসভার সাংসদ মনোজ কুমার ঝা-র কটাক্ষ, ‘‘উত্তর কোরিয়ার সংসদ ভবনও কিন্তু বেশ জমকালো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন