এক জন ব্রোকার ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কী সম্পর্ক, প্রশ্ন তুলেলেন প্রিয়ঙ্কা

গত দু’দিন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীর সফর করিয়ে যিনি এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে, ভারতে তাঁর নাম মধু শর্মা। আর দেশের গণ্ডি ছাড়ালেই তাঁর পরিচয় ম্যাডি (এমএডিআই)। যার অর্থ ‘মেক এ ডিফারেন্স আইডিয়াস।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১৩
Share:

ম্যাডি শর্মা।—ফাইল চিত্র।

কে তিনি?

Advertisement

যিনি এক কথায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে পারেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের! যে কাশ্মীরে দেশের বিরোধী নেতাদের পা-রাখা কার্যত মানা, সেখানে বিদেশি প্রতিনিধিদের ‘কন্ডাক্টেড ট্যুরের’ ব্যবস্থা করে ফেলতে পারেন। সেই প্রতিনিধি দলকে পাহারা দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী, ব্রিফ করেন খোদ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। আর গোটা কর্মকাণ্ডে নীরব দর্শক হয়ে থাকে বিদেশ মন্ত্রক!

গত দু’দিন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীর সফর করিয়ে যিনি এখন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে, ভারতে তাঁর নাম মধু শর্মা। আর দেশের গণ্ডি ছাড়ালেই তাঁর পরিচয় ম্যাডি (এমএডিআই)। যার অর্থ ‘মেক এ ডিফারেন্স আইডিয়াস।’ ব্রাসেলস নিবাসী ম্যাডিকে দুনিয়া চেনে আন্তর্জাতিক বিজনেস ব্রোকার হিসেবে। এহেন ম্যাডি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রায় ত্রিশ জন সদস্যকে চিঠি দিয়ে ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ও কাশ্মীর ঘুরে দেখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যাতে সাড়া দেন ২৭ জন সদস্য।

Advertisement

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ম্যাডি শর্মার নেপথ্যে কে? কংগ্রেসের দাবি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল অবশ্যই রয়েছেন। আরএসএস থেকে বিজেপিতে আসা এক নেতার ভূমিকার কথাও শোনা যাচ্ছে।

এই সফরের পিছনে বিপুল অর্থ কে জোগাল, প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। ম্যাডির সংস্থার দাবি, দিল্লির ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নন-অ্যালায়েড স্টাডিজ গোটা সফরের খরচ বহন করছে। দিল্লিতে ওই সংস্থার দফতর যে ঠিকানায়, সেখানেই রয়েছে ম্যাডির স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ওয়েস্টটি’। ফলে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

এক জন ব্রোকার ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কী সম্পর্ক, তা নিয়ে টুইটে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। তিনি বলেন, ‘ভারতের কৃষক-বেকার যুবকদের এমন সুযোগ নেই, যে তাঁরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে পারেন। তাঁদের সমস্যার কথা বলতে পারেন। কিন্তু, হ্যাঁ ম্যাডি শর্মার মতো ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ব্রোকার’ গর্বের সঙ্গে লিখতে পারেন, ভারতে আসুন। আপনার খরচ আমরা দেব। প্রধানমন্ত্রী দফতরে আমার যোগাযোগ আছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেব।’’

প্রশ্ন উঠেছে বিদেশ মন্ত্রকের নীরব ভূমিকা নিয়েও। কংগ্রেসের অভিযোগ, ম্যাডি প্রমাণ করে দিয়েছেন মোদী সরকারে কূটনীতিও বেসরকারি হাতে চলে গিয়েছে। দলের নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘ভারতের ইতিহাসে সবথেকে বড় কূটনৈতিক ব্যর্থতা। মোদী সরকার তৃতীয় পক্ষকে (কাশ্মীরের পরিস্থিতি) খতিয়ে দেখার অনুমতি দিয়ে ভারতের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করছেন। কাশ্মীর আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা চাই না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী তা উল্টে দিচ্ছেন।’’ আজ আদালত থেকে তিহাড় জেলে যাওয়ার পথে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমও বলেন, ‘‘সরকারের হয়ে বক্তব্য রাখতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের এ বার আমাদের সংসদেও আমন্ত্রণ জানাতে পারে শাসক শিবির।’’

তবে একই সঙ্গে কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়িয়ে আজ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন কংগ্রেসের কিছু নেতা। সে জন্য তিন নেতাকে শো-কজ় করেছে দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন