ট্রেন এল, আঁচলের খুঁট দিয়ে চোখ মুছলেন বৃদ্ধা

এখনও ‘দ্যাশের’ কথা ভোলেননি ওঁরা। মাটির কথা, নদীর কথা, দিগন্তের বিস্তার— এখনও ওঁদের স্বপ্নে। দেশ ছেড়ে শেষ বার অনেকে এসেছিলেন বাবা-মায়ের হাত ধরে, ট্রেনে চেপেই। তখন কয়লার ইঞ্জিন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ট্রেন ছুটত। সেই ট্রেনই ফের ছুটবে জেনে উত্তেজনার প্রহর গুনছিলেন ওঁরা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১৪
Share:

যাত্রা-শুরু: খুলনা-কলকাতা ট্রেন ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস। পেট্রাপোল স্টেশনে। শনিবার। ছবি: পিটিআই।

এখনও ‘দ্যাশের’ কথা ভোলেননি ওঁরা। মাটির কথা, নদীর কথা, দিগন্তের বিস্তার— এখনও ওঁদের স্বপ্নে। দেশ ছেড়ে শেষ বার অনেকে এসেছিলেন বাবা-মায়ের হাত ধরে, ট্রেনে চেপেই। তখন কয়লার ইঞ্জিন। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ট্রেন ছুটত। সেই ট্রেনই ফের ছুটবে জেনে উত্তেজনার প্রহর গুনছিলেন ওঁরা।

Advertisement

শনিবার বেলা দেড়টা নাগাদ কানে এল ট্রেনের হুইসল। এ পারের ইঞ্জিন টেনে আনল ও পারের বগি। পরীক্ষামূলক ভাবে চলল যাত্রিবাহী খুলনা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস-২। এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এ দেশ থেকে একটি ইঞ্জিন যায় বেনাপোলে। সেখানে খুলনা থেকে আসা ও দেশের ছ’টি কামরা অপেক্ষায় ছিল। এ দেশের ইঞ্জিন গিয়ে জোড়ে সেগুলির সঙ্গে। বেলা ১টা ৩২ মিনিট নাগাদ পেট্রাপোল স্টেশনে ঢোকে ট্রেন। ফুল দিয়ে সাজানো। সামনে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা-মোদী, মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছবি।

আরও পড়ুন: দুপুরে পাতে ভেটকি

Advertisement

দুই নাতনির হাত ধরে ছুটতে ছুটতে প্ল্যাটফর্মে পৌঁছলেন শীলাদেবী। দূর থেকে ট্রেন দেখতে পেয়ে আঁচলের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছিলেন। অস্ফূটে বললেন, ‘‘বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ল। ওঁদের হাত ধরেই শেষ বার এই ট্রেনে চেপে এ দেশে আসি।’’

তার পর ইছামতী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। স্মৃতিতে পলি জমেছে। তবু শনিবারটা ছিল অন্য রকম। বাংলাদেশ ছেড়ে আসা অজস্র মানুষের মনে বহু পুরনো কথা উস্কে দিল এই ট্রেন।

অতীতে খুলনা থেকে শিয়ালদহের মধ্যে ট্রেন চললেও ষাটের দশকে তা বন্ধ হয়ে যায়। খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, যশোর, পটুয়াখালির বাড়ি থেকে ছুটিছাটায় তাঁরা এই ট্রেনে চড়েই এ দেশে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আসতেন। তখনও চুলে পাক ধরেনি। এখন কারও হাঁটুতে ব্যথা তো কারও কোমর জবাব দিয়েছে। আজ তাঁরা ফিরলেন সেই শৈশবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন