সংসদের তিনতলায় পরপর রাজনৈতিক দলগুলোর অফিস। ভিতরের ঘরগুলোর মধ্যে কাঠের পার্টিশন কিছু পলকাই!
আজ দুপুরে এনসিপি-র সেই অফিসের বাইরে ভিড়ে ভিড়াক্কার! ওই পলকা পার্টিশনে কান লাগিয়ে উৎসুক সংবাদমাধ্যম! কারণ ভিতরে বৈঠক করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর শরদ পওয়ার।
দলীয় সূত্রের খবর, মরাঠা ‘স্ট্রং ম্যান’কে মমতা এ দিন প্রস্তাব দেন, মোদী-বিরোধী জোটে কংগ্রেসকে বাইরেই রাখা হোক। মমতার যুক্তি, তা হলে বিজেডি, টিআরএস-এর মতো দলগুলির পক্ষে জোটে আসা সুবিধা হবে। এনসিপি-র পক্ষ থেকে বৈঠকে শরদের সঙ্গে হাজির ছিলেন প্রফুল্ল পটেল, সুপ্রিয়া সুলে-ও। তবে কংগ্রেসকে বাইরে রাখার প্রস্তাবে তাঁরা যে রাজি নন, সে কথা খোলাখুলিই মমতাকে জানিয়ে দেন প্রফুল্ল। মনে করান, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট রয়েছে এনসিপি-র। সম্প্রতি শরদ পওয়ারের সঙ্গে দেখা করে রাহুল গাঁধী তাঁকে ইউপিএ-র ভবিষ্যত আহ্বায়ক হওয়ার প্রস্তাবও দিয়ে এসেছেন বলে সূত্রের দাবি।
এত দিন দিল্লি এলে মমতা সঙ্গে আনতেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। এ বারে তাঁর সঙ্গী অরূপ বিশ্বাস। সামান্য সময় সেন্ট্রাল হলে কাটানোর পরই তৃণমূলের সংসদীয় অফিসে এসে বসেন মমতা। তার পর থেকে বিভিন্ন নেতার অবিরাম আসা-যাওয়া। রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন ছিলেন এই সব বৈঠক আয়োজনের দায়িত্বে। কয়েক দিন ধরে নিরলস ভাবে সেটাই করে গিয়েছেন তিনি। প্রায় সমস্ত সাংসদকে সঙ্গে নিয়ে মমতা অফিসে ঢোকার পর প্রথমেই দেখা করতে আসেন টিআরএস সাংসদ কে কবিতা (চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা)। তার পর টিডিপি-র ওয়াই এস চৌধুরি, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, মহারাষ্ট্রের কৃষক নেতা-সাংসদ রাজু শেট্টি। বিজেডি সাংসদ তথা ওডিশার জনপ্রিয় অভিনেতা অনুভব মোহান্তি আসেন অভিনেত্রী স্ত্রী বর্ষাকে সঙ্গে নিয়ে। পাশের চেম্বারে বসে মমতার সঙ্গে কথা বলে যান ডিএমকে নেত্রী কানিমোজি। মমতার টেবিলের পাশে জমতে থাকে ফুলের স্তূপ। প্রত্যেকের হাতেই তৃণমূল নেত্রী তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তাঁর চিঠিটি। যেখানে কৃষিক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের উন্নতির খতিয়ান দেওয়া রয়েছে।
মধ্যাহ্নভোজের জন্য আজ বাড়তি কোনও সময় নেননি মমতা। বৈঠকের ফাঁকে ফাঁকেই এসেছে কাটলেট, স্যান্ডুইচ-চা-কফি। আপ্যায়িত হয়েছেন অতিথি নেতারাও। একে একে এসেছেন সপা-র রামগোপাল যাদব, লালুপ্রসাদ যাদবের কন্যা মিসা ভারতী, আরজেডি-র সংসদীয় দলনেতা জে পি যাদব, যোগেন্দ্র যাদবের স্বরাজ দলের সদস্য আইনজীবী প্রশান্তভূষণ, টিআরএস-এর কে কেশব রাও, বিজেডি সাংসদ পিনাকী মিশ্র। তৃণমূলে সাসপেন্ডেড রাজ্যসভা সাংসদ কুণাল ঘোষও এসে প্রণাম করেছেন মমতাকে। সন্ধ্যায় মমতার বাসভবনে গিয়ে দেখা করেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা, সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
কংগ্রেসের কোনও বড় সংসদীয় নেতা এ দিন মমতার কাছে আসেননি ঠিকই। কিন্তু সখ্যের ছোঁয়াটুকু থাক— এমনটাই চেয়েছেন সনিয়া গাঁধী। তাই পাঠানো হয়েছে কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনীকুমারকে। তাঁর সঙ্গেও আজ স্বভাবসিদ্ধ উষ্ণতা নিয়েই আলাপচারিতা সেরেছেন তৃণমূল নেত্রী।